গ্রীসকে ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে চলমান তিক্ত প্রচার অভিযান দেশটি ইউরো ত্যাগ করতে পরে বলে আশঙ্কা আবার জাগিয়ে তুলছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এথেন্সের প্রতি ক্রমশ কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছেন। তাঁরা বলছেন, গ্রীসকে ইউরোজোনে রাখতে চান, তবে তা যে কোন মূল্যে নয়। বার্লিন, প্যারিস ও ব্রাসেলস থেকে সম্প্রতি ক্রমশ এ সতর্কবাণী উচ্চারিত হচ্ছে। এতে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এবং ইউরোজোনের সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ গ্রীসের মধ্যে আরেকটি বিরোধ দানাবেঁধে উঠছে। খবর- ইন্টারন্য্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
গ্রীসে সর্বশেষ রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয় ২০১২ সালে। সে সময় থেকে ইউরোপীয় নেতারা ব্রিটেন ছাড়া তাদের দেশগুলোতে সংক্রমিত হয়েছিল এমন ধরনের আর্থিক ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সময় ব্যয় করেন। তাঁদের কড়া হুঁশিয়ারি থেকে মনে হয়, গ্রীস চলে গেলেও যে ইউরোজোন টিকে থাকবে, তা নিয়ে তারা আস্থাশীল। কিন্তু গ্রীসের গোলযোগ আর্থিক বাজারকে এরই মধ্যে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বাহ্যিক কারণে ইউরোর মূল্যমান সোমবার ডলারের বিপরীতে নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌঁছায়। দেশটির আসন্ন নির্বাচনে বামপন্থী সাইরিজা পার্টির প্রধান আলেক্সিস সিপরাসই অগ্রগামী বলে মনে হয়। এটি ইউরোপীয় কর্মকর্তাবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য স্পষ্টতই উদ্বেগের কারণ। সিপরাস গ্রীসকে ইউরোজোনের মধ্যে রাখতে চান বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি জাতীয় ঋণের অংশ বিশেষ অবলোপন করানো, গ্রীসের আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের চাহিদামতো গৃহীত কৃচ্ছ্রনীতি পাল্টিয়ে ফেলা এবং গ্রীসকে শত শত কোটি ডলারের সহায়তা হিসাবে পাওয়ায় সুযোগ দিয়েছে এমন চুক্তিগুলো নিয়ে আবারও আলোচনা করার সঙ্কল্পও ব্যক্ত করেছেন। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা হলে গ্রীসের ঋণদাতাদের এবং ইউরোপীয় করদাতাদের শত শত কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষত যদি আর্থিক বাজার অনিশ্চয়তার কবলে পড়ে তবেই ওই ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। এসব সম্ভাবনা ইউরোপীয় নেতাদের জন্য এক অস্তিত্বের প্রশ্ন আবারও জাগিয়ে তুলছে, গ্রীসকে ইউরোজোনে রাখতে তারা কী মূল্য দিতে তৈরি আছেন? তারা বিশেষত কৃচ্ছ্রনীতির সমর্থক জার্মানরা যে জবাব দিচ্ছেন, তা কঠোর অবস্থানেরই শামিল। সোমবার জার্মান অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেন, গত দু’বছরে ইউরোজোনে যে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে, ইউরোপ তা ক্ষুণœ হতে দেবে না।
এক জার্মান পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমাদের ব্ল্যাকমেইল করা যাবে না। আমরা আশা করছি, যিনিই গ্রীক সরকার গঠন করুন না কেন, সেই সরকারকে ইইউর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো হবে। ব্রাসেলসেও কর্মকর্তারা সোমবার জোর দিয়ে বলেন, ইউরো ব্লকের সদস্যপদ প্রত্যাহারের যোগ্য নয়।
তবে গ্রীস নির্বাচনের পর এর দেওলিয়াত্ব থেকে উদ্ধার পাওয়ার (বেল-আউট) শর্তাবলী নিয়ে কতদূর ঋণ দাতাদের সঙ্গে আবার কথা বলতে পারে তা তারা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। ইউরো টিকে থাকবে বলে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র আনিকা ব্রিডস্মার্ট মন্তব্য করেন। প্যারিসে প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ সোমবার এক ফরাসী বেতারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেন, গ্রীকরা তাদের নিজস্ব ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সত্য, কিন্তু কতগুলো চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে এবং ঐ সবের প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে। গত সপ্তাহান্তে সিপরাস তাঁর দল প্রচার অভিযানে বলেন, তাঁর দল আন্তর্জাতিক বেলআউট চুক্তি নিয়ে পুনরালোচনার অংশ হিসেবে গ্রীসের ঋণের অনেকাংশের অবলোপন নিশ্চিত করবে। তিনি এ বেলআউটের জন্য আরোপিত কৃচ্ছ্রনীতির অনেকাংশ পাল্টে দেয়ার পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: