ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাতারেও একই অবস্থা

সৌদি আরবে এমআরপি ইস্যুতে গতি নেই, দূতাবাসের অসহযোগিতা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

সৌদি আরবে এমআরপি ইস্যুতে গতি নেই, দূতাবাসের অসহযোগিতা

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে কর্মীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) হাতে না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী হাতে লেখা পাসপোর্ট আগামী ২৪ নবেম্বর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে। এরপর কোন কর্মী বা ব্যক্তি এমআরপি ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন না। সৌদি আরবে এই মুহূর্তে ২০ লাখ কর্মীর এমআরপির প্রয়োজন। কিন্তু সেখানকার দূতাবাস প্রতিদিন দেড়শ’র বেশি পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারছে না। অভিযোগ উঠেছে দূতাবাসের অসহযোগিতার কারণে প্রতিদিন দেড়শ’ পাসপোর্টও প্রিন্ট করা হয় না। এমআরপি ফির বাইরে কর্মীদের কাছ থেকে বেশি ফি আদায়েরও অভিযোগ আছে। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে কাতারে। সেখানেও এমআরপি পেতে কর্মীদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহারিয়ার আলম জনকণ্ঠকে জানান, এমআরপির সমস্যা শুধু সৌদি আরবেই না যেখানে বাংলাদেশের কর্মী রয়েছে সেখানেই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। মালয়েশিয়াতে আমরা এ বিষয়ে সফল হয়েছি অনেক কষ্ট করে। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের কর্মী সংখ্যা অনেক বেশি। এদের এমআরপি যথা সময়ে দিতে না পারলে কর্মীরা চরম বিপদে পড়বেন। তাই বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পাসপোর্ট অধিদফতর ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারদের নিয়ে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক করা হয়েছে। এ সপ্তাহে আরও একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। কিভাবে এই জটিলতা নিরসন করা যায়, তার একটি উপায় বের করতে হবে। যেভাবেই হোক বিষয়টি সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে হবে। সৌদি আরব থেকে গত কয়েকদিনে অনেক প্রবাসী টেলিফোনে অভিযোগ করেছেন- সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার জন্য এমআরপি কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এমআরপি কার্যক্রম গতিশীল না করলে পরিস্থিতি চরমে যাবে। কয়েক লাখ কর্মীকে ২৪ নবেম্বরের আগেই দেশে ফিরে আসতে হবে। এতে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক কমে যাবে। এ বিষয়টি মাথায় না রেখে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দূতাবাসগুলো অর্থ আদায়ের জন্য কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও ভুক্তভোগী কয়েকজন টেলিফোনে দূতাবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রবাসীরা এমআরপি না পেলে বিশ্বের কোন এয়ারলাইন্স তাদের বহন করবে না। অভিবাসীদের সমস্যা, দেশের অর্থনীতি এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের লোকবল ও এমআরপি এনরোলমেন্টের যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা বিবেচনা করে সরকারের উচ্চমহল আউটসোর্সিং কোম্পানি নিয়োগ করে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী অভিবাসীদের এমআরপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের উচ্চমহলের সিদ্ধান্তে বলা হয়, আউটসোর্সিং কোম্পানি আবেদনকারীদের দোরগোড়ায় যেয়ে এমআরপি ডাটা এনরোলমেন্ট, ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ ও ডিজিটাল স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এবং ছাপানো পাসপোর্ট বিতরণের কাজ করবে। অন্যদিকে, বিদেশী মিশনসমূহে অবস্থিত অফিসার ও সহায়ক কর্মচারীবৃন্দ প্রশাসনিক ও দাফতরিক কাজ এবং আউটসোর্সিং কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। এমআরপি দেয়ার জন্য টেন্ডারে আইরিশ কর্পোরেশন বারহাদ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। এই প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও সৌদি আরবে লাখ লাখ প্রবাসীদের এমআরপি দেয়ার কাজ শুরু করে। যদিও প্রবাসীদের এমআরপি দেয়ার জন্য গত বছরের ৯ নবেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে এমআরপি মনিটরিং টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্স গঠনের পরও সৌদি আরবে এমআরপি কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। উল্টো অভিযোগ পাওয়া গেছে যে দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিজেরাই এমআরপি ইস্যু করতে বেশি আগ্রহী। তাই তারা আউটসোর্সিং কোম্পানিকে সহযোগিতা করছে না। একই অভিযোগ আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতেও মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও। প্রবাসীদের এমআরপি পাসপোর্ট দেয়ার প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের আগস্ট মাসে অনুমোদন দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত দুই বছরেও এই কাজে তেমন কোন গতি আনতে পারেনি। এ বছর নবেম্বরের মধ্যে এমআরপি দিতে হবে, সেই যুক্তি দেখিয়ে এখন সৌদি আরেব বাড়িভাড়া নেয়াসহ নানান যন্ত্রপাতি কিনতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। গত এক মাসে দুটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সূত্র জানিযেছে, সৌদি আরবে বসবাসরত ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশীর এমআরপি পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর স্বার্থে এমআরপির কাজটি ধীরগতিতে চলছে। এমআরপির তৈরির কাজে নিযুক্ত আউটসোর্সিং কোম্পানির ডাটা এন্ট্রির কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে অসহযোগিতা করার কারণে তারা সেখানে কোন কাজ করতে পারছে না। তাদের কাজের সুযোগ না দিলে প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি এমআরপি দেয়া না যায় তাহলে অভিবাসী বাংলাদেশীরা অবৈধ হয়ে যাবেন। তাদের অবৈধ হিসেবে দেশে ফিরে যেতে হবে। এতে কয়েক লাখ কর্মীকে দেশে ফিরতে হতে পারেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা হচ্ছে অভিবাসীদের যদি তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে দূতাবাসে এমআরপি নেয়ার জন্য যেতে হয়, তাহলে তাদের সময় এবং অর্থ উভয়ই ব্যয় করতে হবে। আউটসোর্সিং কোম্পানিকে কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করে প্রবাসীদের দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়ে এমআরপি দেয়া হবে। গত বছর ২১ জুলাই বাংলাদেশ সরকার আইরিশ কর্পোরেশন বারহাদের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এমারপি দেয়ার একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিটি সৌদি আরবে কাজ করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, শুধু সৌদি আরবেই যে এমআরপি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা নয়, এই সমস্যা কাতারেও তৈরি হয়েছে।
×