ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক বছরে বাংলাদেশ ছয় আন্তর্জাতিক ফোরামের নেতৃত্বে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

এক বছরে বাংলাদেশ ছয় আন্তর্জাতিক ফোরামের নেতৃত্বে

তৌহিদুর রহমান ॥ বর্তমান সরকার গঠনের এক বছরের মধ্যে ছয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামের নেতৃত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিমসটেকের সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি মামলার নিষ্পত্তি ও জয়লাভ করেছে সরকার। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের কূটনৈতিক অগ্রগতি প্রতিবেদন হতে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ ছয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামের নেতৃত্ব অর্জন করেছে। এসব ফোরামের মধ্যে রয়েছে- ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ), কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ), জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, ইন্টান্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন (আইটিইউ), নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) ও ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্যাটেলাইট অর্গানাইজেশন। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। গত ১৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় আইপিইউ’র ১৩১তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়। সাবের হোসেন চৌধুরী নির্বাচনে ১৬৯ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার ব্রনউইন বিশপ পান ৯৫ ভোট। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট পদে বাংলাদেশের আরও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার সংসদ সদস্য নুরহায়াতি আলী আসিগাফ ও মালদ্বীপের আইনসভার সাবেক স্পিকার আবদুল্লাহ শহীদ। সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্ব দরবারে আরও উজ্জ্বল হয়েছে বলে কূটনীতিকরা অভিমত প্রকাশ করেন। এদিতে গত ৯ অক্টোবর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) পদে ভোটে জেতেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউনদেতে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬০তম সম্মেলনে সরাসরি ভোটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। এই পদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেইম্যান আইল্যান্ডস’র লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির স্পিকার জুলিয়ানা ওকনর-কনোলি। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ৭০ ভোট পান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পান ৬৭ ভোট। বাংলাদেশের কেউ এর আগে এই পদে ছিলেন না। তবে প্রথম বাঙালি হিসেবে এই পদে ২০০৫-০৮ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পীকার হাশিম আব্দুল হালিম। সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশের আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের স্থায়ী সচিবালয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সচিবালয়ের উদ্বোধন করেন। বিমসটেকই হলো বাংলাদেশে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্ণাঙ্গ অফিস। বহুপক্ষীয় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বঙ্গোপসাগরীয় আঞ্চলিক জোট বিমসটেক সচিবালয় উদ্বোধনের পরে এই ফোরামের অগ্রযাত্রায় নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়। রাজধানীর গুলশান থেকে বিমসটেক সচিবালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম এখন পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় স্থাপন আঞ্চলিক উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিমসটেক জোটের শীর্ষ নেতারা। জোটের শীর্ষ নেতারা আশা প্রকাশ করছেন, বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত এই জোট ঢাকার সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়া এই সচিবালয়ের মাধ্যমে বিমসটেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলো আরো কাছাকাছি আসবে বলেও তারা প্রত্যাশা করছেন। এদিকে গত বছর ৭ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা মামলার নিষ্পত্তি হয়। বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ সাড়ে ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশকে দিয়ে ভারতের সঙ্গে নতুন সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে দেয় আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত। এই রায়ের ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। বঙ্গোপসাগরের সীমা, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মহীসোপানের তলদেশে সার্বভৌম অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের দাবির শুনানি শেষে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালত বা পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন (পিসিএ) এই রায় প্রকাশ করে। এদিকে বর্তমান মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের বহুলালোচিত সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করে সরকার। মে মাসে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পর জুন মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা আসেন। এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত ও তিস্তা চুক্তির বিশেষ অগ্রগতি হয়। সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের বর্তমান মেয়াদে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় নিরাপত্তা সংলাপ ঢাকায় ও দুই দেশের তৃতীয় যৌথ অংশীদারিত্ব সংলাপ ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় প্রতিরক্ষা সংলাপ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তির (টিকফা) আওতায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ফোরামের প্রথম বৈঠক ঢাকায় অনুষ্টিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, জাপান, সৌদি আরব, চীন, ইতালি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের মধ্যে দিয়ে এসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।
×