ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইস্যুর পর ইস্যু তৈরিতে ব্যর্থ হয়ে নতুন বছরে ঝরাল চারটি প্রাণ

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

ইস্যুর পর ইস্যু তৈরিতে ব্যর্থ হয়ে নতুন বছরে ঝরাল চারটি প্রাণ

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ নতুন বছর শুরুর ৫ম দিনে তরতাজা চারটি প্রাণের বিনিময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা ঘটেছে। এ জোটের প্রধান দল বিএনপি ক্রমাগত হুংকার দিয়ে চলেছে। জনগণকে রাস্তায় নেমে সরকার বিরোধী আন্দোলনে শরীক হতে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে চলেছে। কিন্তু সাড়া মিলছে না। শুধু সচেতন মানুষ নয়, গণমানুষও এ আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না বলে প্রতীয়মান। কিন্তু বিএনপির চেষ্টা থেমে নেই। ইস্যুর পর ইস্যু তৈরির চেষ্টা করে মাঠে নামছে। কিন্তু গণজাগরণ বলতে যা বোঝায় সে পরিস্থিতি থেকে তাদের আন্দোলন যোজন যোজন দূরে। দলীয় নেতাকর্মী সমর্থক দিয়ে তারা যে প্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে তাতে দেশবাসীর জোরালো কোন সমর্থন নেই। আর জনগণ না চাইলে আন্দোলন কি সফল হতে পারেÑ এ প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গন জুড়ে। এদিকে, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় এখন সারাদেশ। গত ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন কর্মসূচীর দিনে সংঘাতে পরিণত হয় সারাদেশ। দেশের কয়েকটি স্থানে অকালে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জন। আহত যখম, গ্রেফতার অগণন। ফলে সর্বত্র জিজ্ঞাসা- কি হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গেল বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচন বর্জন করার আগে ও পরে যে চিন্তা-ভাবনায় মশগুল ছিল তা রীতিমত বুমেরাং হয়েছে। নির্বাচন ঠিকই অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনার আসন গ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ২০ দলীয় সমর্থকদের হয়ত ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হবে না। কিন্তু হয়েছে। ফলে বিএনপির অবস্থা হয়েছে তথৈইবচ। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চায় তারা। যে ভুলের মাশুল তাদের গুনতে হচ্ছে তা আর সইছে না। সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপি আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ দিয়ে পুরো দেশকে অস্থিরতায় রেখেছে। কিন্তু লাভের ঘরে যোগ হচ্ছে বরাবরই শূন্য। গত সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল যখন গণতন্ত্র রক্ষা দিবস কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেয় তখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট একই দিনে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। ফলে একই দিনে দেশব্যাপী দু’পক্ষের কর্মসূচীতে জ্বালাও পোড়াও, গুলি, বোমায় শেষ পর্যন্ত ঝরে যায় তরতাজা চারটি প্রাণ। ওই দিন বিএনপি নেত্রীর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাঁকে তার বাসভবন থেকে বের হতে দেয়নি। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তিনি নতুন করে ডাক দিলের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, প্রাণহানি, মামলা, গ্রেফতার ইত্যাদির কারণে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে হরতালের ডাকও দেয়া হয় মঙ্গলবার। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর আহ্বানকৃত অবরোধও যা হরতালও তা। সবই হয়েছে নাশসর্বস্ব। অবরোধও একই গতিতে যাবে বলে প্রতীয়মান। অস্বাভাবিক পরিবেশে স্বাভাবিক ছিল অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার। তবে বিক্ষিপ্ত ঘটনা যে ঘটেনি তা নয়। পুলিশের ওপর হামলাসহ সংঘর্ষ ও জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটেছে কয়েকটি স্থানে। তবে হরতাল অবরোধের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকেনি, অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা চলেছে। স্কুল কলেজ চলেনি। গেল এক বছরের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০ দল সরকার বিরোধী ইস্যুতে একদিন, দুদিন, তিনদিন এমনকি সপ্তাহব্যাপী লাগাতার হরতালও পালন করেছে। কিন্তু ফলাফল কি হয়েছে। সংঘাত হয়েছে, যানবাহনসহ সম্পদ পুড়েছে। নিরীহ মানুষ মরেছে। এখনও বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আগামীতেও হয়তো এ চিত্র প্রতিভাত হবে। ফলে এখন উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকা মানুষের প্রশ্নÑএর শেষ কোথায়। গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন কর্মসূচীর নামে গণ মানুষকে জিম্মি করার নাম গণতন্ত্রের আওতায় পড়ে কিনা ঐ প্রশ্ন উঠে এসেছে। ২০ দল তাদের রাজনীতির চিন্তাধারা নিয়ে গত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে। প্রতিপক্ষ না খেললে অন্যপক্ষ সুযোগ নেয়। আওয়ামী লীগ সে সুযোগ পেয়েছে। গোলবারে গোল রক্ষক না থাকলে স্ট্রাইকার গোলদান থেকে বিরত থাকেন না। আওয়ামী লীগও রাজনীতির খেলায় থেমে থাকেনি। গোল দিয়েছে, জিতেছে। সরকারে এসেছে। এখন বিএনপির গাত্রদাহ। এ গোল মানি না। নতুন করে খেলতে হবে। কিন্তু সরকার মেয়াদ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সে খেলায় নামতে নারাজ। ফলে আন্দোলনের নামে পুরো দেশকে রুদ্ধশ্বাসে রেখেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নিজেদের ভুলের মাশুল গণমানুষকে দিয়ে উসুল করার প্রয়াসে লিপ্ত তারা। কিন্তু গণমানুষ এ ফাঁদে পা দেবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। তবে যে পরিস্থিতি দৃশ্যমান তাতে বিএনপির আন্দোলনের সফলতার ঘরে বরাবরের মত শূন্যই যে যোগ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের স্পষ্ট অভিমত।
×