ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হত্যা মামলায় গ্রেফতার হতে খালেদাকে প্রস্তুত থাকতে বললেন ইনু

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

হত্যা মামলায় গ্রেফতার হতে খালেদাকে প্রস্তুত থাকতে বললেন ইনু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তাঁকে হত্যা মামলা ও গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সম্প্রচার বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত সরকার দেয়নি। মঙ্গলবার তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘চলমান রাজনীতি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যদি হুকুম দিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতেই পারে। তথ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন শেষে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। ইনু বলেন, শাজাহানপুরে পাইপে পড়ে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যদি হত্যা মামলা হয়, তাহলে তিন বছরে বাংলাদেশে জঙ্গী তা-বের দায়-দায়িত্ব কার? খালেদা জিয়া কি উস্কানিদাতা নয়? সুতরাং একই পরিবারের তিনজন অগ্নিদগ্ধ হওয়া ঘটনার উস্কানিদাতা হিসেবে খালেদা জিয়াও হত্যা মামলার সম্মুখীন হবেন। উনি হত্যা মামলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ২৮ ডিসেম্বর বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের আগে রাজধানীর কাজীপাড়ায় একটি অটোরিক্সায় দেয়া আগুনে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হন। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেনÑ হতে পারেন, যদি হত্যা মামলা হয়। খালেদার বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নে ইনু বলেন, সরকার কোন পরিকল্পনা করে না। কেউ অপরাধ করলে সরকার পদক্ষেপ নেয়। অপরাধের ভিত্তিতে যে কেউ গ্রেফতার হতে পারে। জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে, প্রশাসন বিষয়টি পরীক্ষা করছে। নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে উত্তেজেনার মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি থেকে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে পুলিশের ঘেরাওয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন, তাকে উস্কানি দেয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। কোন উস্কানিদাতাকে আমরা ছাড় দেব না। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার বিএনপিসহ সবাইকেই দেয়া হয়েছে। ইনু বলেন, ৫ জানুয়ারি নিয়ে ‘গুজব আর জনমনে আতঙ্ক’ ছড়িয়ে বলা হয়েছিল ঢাকায় ব্যাপক গোলোযোগ হবে, ‘সরকারের পতন’ হয়ে যাবে। সন্ত্রাস ও নাশকতার প্রস্তুতি নিয়ে তারা দুইদিন আগ থেকেই বোমাবাজি ও গাড়িতে আগুন দেয়। দেশে ‘সভা-সমাবেশের অধিকার’ সবার থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে ‘সহিংসতা করা’ গণতান্ত্রিক অধিকার নয় বলে মন্তব্য করেন ইনু। খালেদা জিয়া এর আগে সমাবেশ করলেও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হননি। সবকিছু জানার পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তা সরকার-প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা বলেই বিবেচিত হতো। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। বিএনপির ‘সন্ত্রাস, সহিংসতা, নাশকতা ও অশান্তির রাজনীতিকে’ সরকার প্রশ্রয় না দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবে বলেও ইনু মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ও আলোচনা খালেদা জিয়ার ‘মূল এজেন্ডা’ নয়। তাঁর মূল উদ্দেশ্য রাজাকার ও জঙ্গীবাদীদের ‘দেশ ইজারা দেয়া’। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের গ্যারান্টি দিলে উনি (খালেদা জিয়া) যেখানে খুশি সমাবেশ করতে পারেন। গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে গণতান্ত্রিক শক্তির আলাপ-আলোচনা চলে এবং আমি মনে করি তা চলা উচিত। কিন্তু জঙ্গীবাদ ও যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে খালেদা জিয়ার অবস্থান কীÑ তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে না। তাঁকে আগে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সম্প্রচার বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত সরকার দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী সংবাদিকদের বলেন, একুশে টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমাদের কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত নেই। এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন নির্দেশ প্রদান করা হয়নি। পাড়া-মহল্লায় একুশে টিভি দেখা না যাওয়ার পেছনে সরকারের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ইনু বলেনÑ এটা শুনেছি, আমরা খতিয়ে দেখতে পারি। এখন পর্যন্ত একুশে টিভি কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন হস্তক্ষেপ কামনা করেনি। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে এক নারীর দায়ের করা মামলায় একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তথ্যমন্ত্রী জানান। মঙ্গলবার ভোরে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) কার্যালয়ের নিচ থেকে সালামকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে ওই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। একুশে টেলিভিশনের অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘একুশের চোখ’ এর একটি পর্ব নিয়ে ওই নারী এই মামলা করেন বলে জানান মাসুদ।
×