ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফতোয়ার বিরুদ্ধে এক আলজিরীয় লেখকের লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

ফতোয়ার বিরুদ্ধে এক আলজিরীয় লেখকের লড়াই

আলজিরিয়ান ঔপন্যাসিক কামাল দাউদের লেখা প্রথম উপন্যাস নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক বোদ্ধা মহলে আলোচনা সমালোচনা চলছে তখন প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে তাকে বেছে নিতে হয়েছে নিভৃতচারীর জীবন। ফরাসী ঔপন্যাসিক এ্যালবার্ট কামুর দর্শন প্রভাবিত এই আলজিরীয় লেখকের দাবি তিনি বহু ভাষাহীন আরবদের মুখে ভাষা তুলে দিতে চেষ্টা করেছেন। দাউদের লেখা ‘মেউরসুলত কাউন্টার ইনভেস্টিগেশন’ উপন্যাসটি যেন ১৯৪২ সালে প্রকাশিত কামুর ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’ উপন্যাসেরই আলজিরীয় সংস্করণ। এই উপন্যাসে আবসার্ডিজম বা মানব জীবনকে অর্থহীন হিসাবে তুলে ধরার একটি প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। উপন্যাসটি দাউদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। বলা যায়, তিনি এখন এই দর্শনকে লালন করছেন। তাকে প্রকাশ্যে হত্যার দাবি জানিয়েছেন আলজিরিয়ার একজন সালাফি (ধর্মীয় চরমপন্থী) ইমাম। গত মাসের ১৬ তারিখ ওই ইমাম তার ফেসবুকে এই পোস্টটি দেন। আবদেল ফাতাহ হামাদাচি নামে ওই ইমামের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট কর্তৃপক্ষ ব্লক করে দিলেও ওই ফতোয়া জারির পর এ পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। কিন্তু ফতোয়া সর্বসাধারণের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতাহীন একজন ইমাম ফতোয়া দিতে পারেন কি না। উপন্যাস না সম্প্রতি একটি ফরাসী টেলিভিশনে দেয়া দাউদের বিতর্কিত বক্তব্য এই ফতোয়ার কারন সেটি স্পষ্ট করে জানা যায়নি। ৪৪ বছর বয়সী দাউদ জানি জানিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই কারণে সম্প্রতি দেশে তিনি বক্তৃতা অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। কামুসের উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে দেখা গেছে, প্রথা বিরোধী উপন্যাসের নায়ক মৃত্যুদ- কার্যকরের অপেক্ষা করছেন, অন্যদিকে কারাগারের ধর্মযাজক ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা মেনে নেয়ার জন্য তাকে বুঝিয়ে চলেছেন। কিন্তু ওই প্রথাবিরোধী নায়ক তাতে রাজি হন না। একইভাবে দাউদের উপন্যাসে দেখা যায়, ঈশ্বর নিয়ে আলোচনা করে সময় ক্ষেপণ করার জন্য স্থানীয় এক ইমামকে ভর্ৎসনা করছেন একজন আরব নাগরিক। ওই আরবের ছোটভাই অন্যের হাতে নিহত হয়েছেন। এখানে ঈশ্বর ছাড়া আরও যে বিতর্কটি রয়েছে তা হলো তিনি কামুসের রচনা কেবল চরিত্র বদল করে নিজের মতো করে লিখেছেন। দাউদ এখন থাকেন ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী আলজিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ওরানের একটি আবাসিক এলাকায়। তিনি বলেন, উপন্যাসটি প্রকাশের পর থাকে তাকে স্বেচ্ছা নির্বাসনের পথ বেছে নিতে হয়েছে। বিষয়টি তাকে ১৯৯০ এর দশকের গৃহযুদ্ধ যুগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। দাউদ ওই ইমামের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। দাউদের পক্ষে বিপক্ষে এখন জনমত বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে ফতোয়া জারির পরও সরকার যেভাবে দায়সারা গোছের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির শিল্প সাহিত্য জগতের লোকজন।-ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×