ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাল শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ॥ তৃতীয় মেয়াদে লড়ছেন রাজাপাকসে

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রাজাপাকসে

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৭ জানুয়ারি ২০১৫

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন। তাঁর নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন তাঁরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী মৈত্রীপাশা সিরিসেনা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে এবং এবার তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন। এর আগে তিনি ২০০৫ সালে প্রথম মেয়াদে এবং ২০১০-এ দ্বিতীয় মেয়াদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। খবর এএফপির। দক্ষিণ-এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নেতা রাজাপাকসে রাজনীতিতে অপরাজেয় হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছিলেন, যখন তার সামরিক বাহিনী ২০০৯ সালে তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের পরাজিত করে। এর ফলে কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয় এবং দেশটিতে সমৃদ্ধির নতুন যুগের সূচনা হয়। রাজাপাকসে ২০১০ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় লাভ করেন। কিন্তু সমালোচকরা বলেছেন, ৬৯ বছর বয়সী এই প্রেসিডেন্ট দেশটির তামিল সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ এবং লাভজনক কনট্রাক্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্গীদের পকেট ভর্তির সুযোগসহ দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্ত হলো তার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মৈত্রীপালা সিরিসেনার ক্ষমতাসীন দল ত্যাগ করা এবং প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানো। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভিক্টর ইভান বলেছেন, কম পরিচিত সিরিসেনা প্রেসিডেন্টের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের জলন্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। রাজাপাকসে তামিলদের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসায় ব্যর্থ হয়েছেন। তার মনোযোগ ছিল মেগা-হাইওয়ে ও বন্দর নির্মাণের দিকে। এটি দেশটির জিডিপি বৃদ্ধির জন্য ভাল ছিল। কিন্তু কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতে সমাজে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তা উপশমে যথেষ্ট নয়। গৃহযুদ্ধের পর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। রাজাপাকসের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ব্যাপক বিনিয়োগের আংশিক কৃতিত্ব পায়। তবে বিরোধীরা বলেছেন, চীনা ঠিকাদাররা অল্পসংখ্যক স্থানীয়দের নিয়োগ দিয়েছে এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধির তুলনায় পারিবারিক আয় বাড়েনি। প্রধান তামিল পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো ৬৩ বছর বয়সী সিরিসেনাকে সমর্থন দিয়েছে। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি কমিউনিটির এই নেতা আগে একজন কৃষক ছিলেন। দেশটির সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী তামিলরা রাজাপাকসেকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। যারা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ এবং তারা সাধারণত ভোট গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য হয়। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট তার সমর্থন বাড়াতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি তেল, পানি ও বিদ্যুতের দাম কমিয়েছেন, মোটরসাইকেলের উপর ভর্তুকি দিয়েছেন এবং ১৬ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন বাড়িয়েছেন। গৃহযুদ্ধের শেষের দিকে তার বাহিনীর ৪০ হাজার তামিল বেসামরিক হত্যার অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে তিনি এখনও জাতিসংঘের তদন্তে সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে তামিল নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চলীয় উপদ্বীপ জাফনায় ভোটারদের তিনি বলেছেন, তিনি তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের অবকাঠামো প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। রাজাপাকসে নিজেকে তাদের পরিচিতজন বলে উল্লেখ করে তাকে ভোট দিতে এবং সিরিসেনাকে অপরিচিত বলে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানান। যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি ভোটব্যাংক রাজাপাকসে ও সিরিসেনার মধ্যে ভাগ হয়ে যায় তাহলে তামিলরা যাকে ভোট দেবেন তিনিই জয়ী হবেন। কলম্বোভিত্তিক তামিল কোম্পানির নির্বাহী রতœবল চন্দ্রশেখর বলেছেন, আমরা সিরিসেনাকে ভোট দেব। আমরা তাকে পছন্দ করি এমন নয়, আমরা প্রেসিডেন্ট পছন্দ করি না। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ব বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রেসিডেন্টের দুদফা মেয়াদ রদ করেন এবং নিজেকে ব্যাপক ক্ষমতা দেন। সিরিসেনার দলত্যাগের বিষয়টি সাবধানে পরিকল্পনা করেন রাজাপাকসের সবচেয়ে অপছন্দের ব্যক্তি সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। নয় বছর দূরে থাকার পর তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন এবং তার পরিকল্পনায় ক্ষমতাসীন দল বিভক্ত হয়ে গেছে।
×