ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চকবাজারে সালিশ বৈঠকে বোমা হামলায় কৃষকলীগ নেতা নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

চকবাজারে সালিশ বৈঠকে বোমা হামলায় কৃষকলীগ নেতা নিহত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার চকবাজারের ইসলামবাগে এক সালিশ বৈঠকে বোমা হামলায় এক ওয়ার্ড কৃষকলীগ নেতা নিহত হয়েছে। এ সময় পাঁচজন আহত হয়েছে। আহত সবাই আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি মোঃ সেলিমের উপস্থিতিতে সালিশে ওই হামলাটি ঘটেছে। পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জানা গেছে, নিহতের নাম ইদ্রিস আলী (২৬)। তিনি লালবাগ ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান সরকার। তিনি লালবাগ থানাধীন শহীদনগর ৪৫/৫ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। আহতরা হচ্ছেনÑমনির হোসেন (৩৫), মুজিবুর রহমান (৪০), মোসলেম উদ্দিন (৩০), নুরুজ্জামান (৩০), মোঃ নিজাম (৩১)। আহত মনির ও মুজিবুর একই ওয়ার্ড কৃষকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। আর মোসলেম দফতর সম্পাদক। সংসদ সদস্য হাজি সেলিম জানান, আহতরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদ জানান, এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে স্থানীয়রা কয়েকজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। হাজি সেলিম জানান, কারখানা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এলাকার একটি সালিশ চলছিল। সালিশ বানচাল করার জন্যই প্রতিপক্ষ গ্রুপ এই হামলা চালায়। হামলাকারীরা বিএনপির সঙ্গে জড়িত বলে তিনি দাবি করেন। হাজি সেলিম বলেন, লালবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতা সেলিম ও তার বাবাকে মারধরের ঘটনায় একটি সালিশী বৈঠকে দুর্বৃত্তরা এই হামলা করেছে। ধারণা করছি, সেলিমকে যারা মারধর করেছে তারাই এ হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সেলিমের বাসায় একাধিকবার হামলার ঘটনা নিয়ে রবিবার বিকেল ৩টার দিকে চকবাজার থানাধীন ইসলামবাগ ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে একটি সালিশ চলছিল। এ সময় প্যান্ডেলের অগ্রভাগে বসা ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মোঃ সেলিম। যাতে শত শত মানুষ উপস্থিত ছিল। বৈঠক চলাকালে হঠাৎ বাইরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় কৃষকলীগ নেতা ইদ্রিসসহ ছয়জন গুরুতর আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কৃষকলীগ নেতা ইদ্রিস আলীর মৃত্যু হয়। তবে পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের সেলিম এবং যুবলীগের জাফর গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। চারদিন আগে এলাকার আধিপত্য নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সেলিমের ওপর যুবলীগ নেতা জাফরের অনুসারীরা হামলা চালিয়েছিল। চকবাজার থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দুই গ্রুপের বার বার হামলার কারণে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিম মীমাংসার উদ্যোগ নেন। প্রথমে হাজি সেলিমের কার্যালয়ে (মদিনা টাওয়ার) বসার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে যুবলীগ নেতা জাফরের আপত্তির কারণে পরবর্তীতে রবিবার বিকেল ৩টার দিকে ইসলামবাগ ঈদগাহ মাঠে প্যান্ডেল টানিয়ে সালিশের উদ্যোগ নেয়া হয়। সালিশের সময় দুইপক্ষের লোকজন ছিল। বৈঠকের মাঝে প্যান্ডেলের বাইরে হঠাৎ বিকট আওয়াজে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর লোকজন আতঙ্কে দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানান, বোমা হামলার ঘটনার পর জাফর পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হাসপাতালে বোমা হামলায় আহত মুজিবুর রহমান জানান, রবিবার বিকেল ৩টার দিকে ইসলামবাগ ঈদগাহ ময়দান সংলগ্ন রাস্তায় তারা সালিশ বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলাকালে বিকট আওয়াজে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের পরপরই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইদ্রিস মারাত্মক আহত হয়। পরে হাসপাতালে আনলে তার মৃত্যু হয়। এদিকে ঘটনার পর ওদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি সেলিম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, কারখানা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এলাকার একটি সালিশ চলছিল। তিনি জানান, লালবাগ থানা ছাত্রলীগের নেতা সেলিম ও তার বাবাকে মারধরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাদী-বিবাদীর উপস্থিতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ আমরা রবিবার বিকেলে সালিশে বসি। এক পর্যায়ে বিবাদীপক্ষ বুঝতে পারে যে, বিচারে তারা দোষী সাব্যস্ত হবেন। তখন তারা সালিশ বৈঠক ত্যাগ করে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পরে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিবাদীপক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এটা বিবাদীপক্ষেরই কাজ। পুলিশকে জড়িতদের নাম বলেছি। এর সঙ্গে বিএনপির লোকজনও জড়িত রয়েছে। আমাদেরও এক-দুইজন থাকতে পারেন। তবে চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মোরশেদ আলী বলেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে বৈঠক চলাকালে নিজেরাই বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
×