ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শীতের হাওয়ায় ভাপার ঘ্রাণ

পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে...

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে...

খোকন আহম্মেদ হীরা কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত এসেছে। এ সময় গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা ‘ভাপা’ পিঠার স্বাদ পেতে ভালবাসে না এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া ভার। তাই ভাপাপিঠার কদর ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামের মোড়ে মোড়েও বসেছে মৌসুমী ভাপাপিঠা বিক্রেতা। তাই সকাল-সন্ধ্যা শীতের হাওয়ায় ভাসে ভাপাপিঠার ঘ্রাণ। খেজুরের নতুন গুড় আর নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি হয় ভাপাপিঠা। বাঙালীর বহু বছরের ঐতিহ্যলালিত পিঠা কবি-সাহিত্যিকদের লেখনিতেও অনুষঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে। এ জন্যই হয়ত কবি বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর ‘পল্লী স্মৃতি’ কবিতায় লিখেছিলেন ‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশীতে বিষম খেয়ে, আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’ গরম পানির ভাপে এ পিঠা তৈরি করা হয় বলে এর নাম হয়েছে ভাপাপিঠা। পিঠাকে মুখরোচক করতে গুড় আর নারকেলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ লবণ মেশানো হয়। এতেই স্বাদ বাড়ে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। ভাপাপিঠা তৈরিতে সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মাটির হাঁড়ি ও মাঝ বরাবর বড় ছিদ্র করা মাটির ঢাকনা। হাঁড়িতে ছিদ্র করা ঢাকনা লাগিয়ে আটা গুলিয়ে ঢাকনার চারপাশ ভালভাবে মুড়ে দিতে হয়, যাতে হাঁড়ির ভেতরে থাকা গরম পানির ভাপ বের হতে না পারে। ছোট গোল বাটিজাতীয় পাত্রে চালের গুঁড়া খানিকটা দিয়ে তারপর খেজুর অথবা আখের গুড় দিয়ে আবার কিছু চালের গুঁড়া দিয়ে বাটিটি পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে ঢাকনার ছিদ্রের মাঝখানে বসিয়ে দেয়া হয়। ২/৩ মিনিট ভাপে রেখে দিলে সিদ্ধ হয়ে তৈরি হয় মজাদার ভাপাপিঠা। বরিশাল নগরীসহ পার্শ¦বর্তী উপজেলা সদর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য ভাপাপিঠার দোকান। নগরীর সদর রোড, সাগরদী, নথুল্লাবাদ, রূপাতলীসহ নগরীজুড়েই রয়েছে ভাপাপিঠার দোকান। কম পুঁজিতে, যেকোন স্থানে সহজে বাজারজাত করা যায় বলে অনেক ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ী এ ব্যবসা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। নগরীর সাগরদী এলাকায় রয়েছে কয়েকটি ভাপাপিঠার দোকান। কথা হয় পিঠা বিক্রেতা ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি গত চার বছর থেকে শীতের সময় পার্শ¦বর্তী সদর উপজেলার চরকাউয়া গ্রাম থেকে হাজির হন নগরীতে। সঙ্গে আনেন চাল, গুড় আর নারকেল। তিনি বলেন, গত বছরেও ৫ টাকায় পিঠা বিক্রি করেছি। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর আর তা পারছি না। তিনি প্রতিপিস ভাপাপিঠা ১০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। নগরীর অধিকাংশ এলাকায় ভাপাপিঠা বিক্রেতা হিসেবে নারী ব্যবসায়ীকে দেখা যাচ্ছে। এ পিঠা যে কেবল ফুটপাথে বিক্রি হয় তা নয়; বড় বড় খাবারের দোকানেও শীতের ভাপাপিঠা বিক্রি করতে দেখা গেছে। নগরীর লঞ্চঘাটে বসে পিঠা ক্রয় করতে দেখা গেছে চাকরিজীবী উম্মে রুম্মানকে। তিনি বলেন, ঘরে-বাইরে কাজের চাপে বাসায় পিঠা বানানোর সময় হয় না। চাকরিজীবী মায়েদের মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা সুবিধা করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমি ভাপাপিঠা ক্রয় করেছি সন্ধ্যায় খাওয়ার জন্য। আর চিতইপিঠা ক্রয় করেছি দুধপিঠা তৈরি করার জন্য। দুধ-গুড় ঘন করে জ্বাল করা মিশ্রণে চিতই ভিজিয়ে রাখলেই তৈরি হয়ে যাবে ‘দুধপিঠা’। শীতের পিঠাকে ঘিরে আয়োজন হয়ে থাকে পিঠা উৎসবের। এ পিঠা উৎসব বাঙালীর বারো মাসের তেরো পার্বণেরই একটি অংশ। যতদিন প্রকৃতিতে শীত থাকবে ততদিনই দেখা মিলবে ভাপাপিঠার।
×