ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উনি তো বন্দী নন, ইচ্ছে করলে বাসায় এখনই যেতে পারেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

উনি তো বন্দী নন, ইচ্ছে করলে বাসায় এখনই যেতে পারেন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসায় অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা উনার (খালেদা জিয়া) আরেকটি নাটক। কয়েক দিন আগে উনি চিঠি দিয়েছেন ওনার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য। যেই নিরাপত্তা জোরদার করতে গেলাম, পুলিশ যখন তাঁর নিরাপত্তা দিল তখন আবার বলেন বন্দী করে রাখা হয়েছে! উনি তো বন্দী নন। ইচ্ছা করলে উনি এখনই বাসায় যেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অতীতেও অনেকবার এ ধরনের নাটক করেছেন। এর আগে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় উনি (খালেদা) বাসা থেকে বের হয়ে এসে পূর্বাণী হোটেলে যান। বললেন, উনাকে এরশাদ বন্দী করেছেন। এরশাদ সাহেব পূর্বাণীর দরজা ভেঙ্গে ভাবি সাহেবকে বের করেছিলেন। তবে আমাদের অবশ্য দরজা-টরজা ভেঙ্গে বের করার কোন উদ্দেশ্য নেই। উনি যদি তাঁর অফিসেই থাকতে চান, থাকুক। এটা তাঁর বিষয়। তাছাড়া লোকজন তো সেখানে (গুলশানের অফিস) যাচ্ছে-আসছে, খানা-পিনা যাচ্ছে-আসছে, সবই তো হচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে এত নাটক করা কেন? রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তাঁদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়াকে নাটক বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা ঘটনা তিনি মানুষ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করার জন্য করেছেন। কোন একটা ষড়যন্ত্র করে উনি নাটক শুরু করেন। এ সমস্ত নাটকের কথা মানুষ জানে। এগুলো বন্ধ করুন। ৫ জানুয়ারির সহিংসতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই সময় আমাদের সরকারের ৫ বছর শেষ হয়েছে। ওই অবস্থায় যিনি নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, উনি (খালেদা জিয়া) কি মনে করেন দু-চারটা মানুষ খুন করে এখন পুরো সরকারকে উৎখাত করবেন? বিএনপি নেত্রীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই ভদ্রমহিলা কেন অফিসে থাকছেন? আসলে আগে থেকেই সেখানে থাকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, উনার অফিসে উনার পছন্দমতোই খাট-পালং, গদিসহ অন্যান্য ফার্নিচার সজ্জিত করা হচ্ছে। অনেকেই খালেদা জিয়াকে বাসায় যেতে বলেছেন। জবাবে তিনি বলেছেন, বাসায় যাব না। আবার বলছেন ওনাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কে তাঁকে বন্দী করেছে? খালেদা জিয়াকে ‘অভিনেত্রী’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ঠাট্টার সুরে বলেন, আমরা অনেক নাটক দেখছি। বাংলাদেশে অবশ্য নাটকের অভাব হয় না। টিভিতেও অনেক ভাল নাটক দেখায়। উনারা মনে হয় একজন ভাল অভিনেত্রীকে মিস করছেন। আমি টিভি চ্যানেলগুলোকে বলব, এত ভাল একজন অভিনেত্রী থাকতে কেন তারা তাঁকে চান্স দিচ্ছে না। উনি কিন্তু ভাল নাচতেও পারতেন। স্কুলে থাকতে উনি ভাল নাচতেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এত নাটকের মধ্যে মানুষ যে আজকে পবিত্র দিনে ধর্ম পালন পালন করবে, সে সুযোগটাও তাঁরা পাচ্ছেন না। সবাইকে একটা আতঙ্ক নিয়ে চলতে হচ্ছে। আসলে এই ভদ্রমহিলার ব্যাপার-স্যাপার বুঝি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে না এসে উনি (খালেদা জিয়া) মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। আজ আবারও ঠিক একই ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তবে ওই সময় ট্রানজিট পিরিয়ড ছিল। ওই অবস্থায় উনি নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এইচএম এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ওই সময় সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হল নির্বাচনে যাবে। হঠাৎ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে উনি (খালেদা) বললেন, উনারা ইলেকশনে যাবেন না। এ কথা বলেই বায়তুল মোকাররমের ওখানে গিয়ে একটা বক্তৃতা দিলেন। সিপাহী বেরিয়ে আস, জনতা জাগো, সিপাহী-জনতা বিপ্লব কর। বিপ্লবের ডাক দিয়েই উনি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন। তিন দিন পর্যন্ত উনার কোনো খবর নেই। তিন দিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকার পর দেখেন সিপাহীও বের হন না, জনতাও জাগে না। তখন উনি মনের দুঃখে গেলেন ঢাকা কোর্ট প্রাঙ্গণে। ওখানে সাংবাদিকদের বললেন, আমাকে জেনারেল এরশাদ বন্দী করে রেখেছিল তিন দিন। এক কাপড়ে ধরে নিয়ে গেছে, বন্দী করে রেখেছে। সাংবাদিকরা বলল, আপনার কাপড় তো ইস্ত্রি করা। উনার সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বললেন, ম্যাডাম বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে কাপড় নিয়ে যান তো, কাপড়-চোপড় নিয়েই তিনি বের হয়েছিলেন। এরকম বহু নাটক উনি করেছেন।
×