ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে রুশ পদক্ষেপ, পাল্টা ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র

ফের পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

ফের পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে ফিরে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের পাল্টা ব্যবস্থা নিতে মার্কিন হুমকি উত্তেজনাকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মতবিরোধ এবং পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম রুশ সাবমেরিনগুলোর ক্রমশ দুঃসাহসী কায়দায় টহলদান অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ যুগের অবসান ঘটাতে চলেছে। এতে বিশ্বের পরমাণু অস্ত্র সজ্জিত দুটি দেশের মধ্যে বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আবার শুরু হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের পাল্টা ব্যবস্থা নিতে মার্কিন হুমকিতে উত্তেজনার মাত্রা আরও চড়ে গিয়েছে। মস্কোর এ পদক্ষেপ ঠা-া লড়াই আমলের অন্যতম প্রধান অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলে ওয়াশিংটন অভিযোগ করে থাকে। ওই পদক্ষেপ ইউরোপে ২৩ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে। বক্সিং ডেতে (২৬ ডিসেম্বর) মার্কিন সেনাবাহিনী ওয়াশিংটনের আকাশে পরীক্ষামূলকভাবে জেএলইএনএস বিমান ওড়ায়। অগ্রসরমান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এরূপ বিমান তৈরি করা হয়েছে। ওই পদক্ষেপ ছিল অস্বস্তির অন্যতম দৃশ্যমান লক্ষণ। নর্থ আমেরিকান এ্যারোস্পেস কমান্ড (নোরাড) হুমকির প্রকৃতি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেনি, কিন্তু নোরাড কমান্ডার জেনারেল চার্লস জ্যাকবির এক মন্তব্যের নয় মাস পর ওই বিমান মোতায়েন করা হয়। পেন্টাগন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলার ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলে জ্যাকবি তাঁর মন্তব্যে স্বীকার করেন। তিনি বিশেষত রুশ এ্যাটাক সাবমেরিনের হুমকির প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। ওইসব সাবমেরিন আটলান্টিক মহাসাগর জুড়ে টহল দিচ্ছে এবং নিয়মিতই পরমাণু অস্ত্র বহরে সক্ষম এমন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করে থাকে। মস্কোর আক্রমণাত্মক কথাবার্তার আলোকে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিভিত্তিক বাধানিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মনে হয়, ওইসব ক্ষেপণাস্ত্র এখন পরমাণু অস্ত্র বহন করছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। ঠা-া লড়াই পরবর্তী যুগে যখন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা গতি হারিয়ে ফেলছে, তখন উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মোতায়েন করা স্ট্র্যাটেজিক পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা গত বছর বাস্তবে বৃদ্ধি পায়। উভয় দেশই তাদের অস্ত্রভা-ার আধুনিক করতে বছরে বহু শত কোটি ডলার ব্যয় করছে। ইউক্রেনের লড়াই এবং অর্থনীতির অবনতির প্রেক্ষাপটে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তাঁর দেশের প্রভাবের নিশ্চয়তা দাতা ও প্রতীক হিসেবে পরমাণু অস্ত্রের ওপর ক্রমশ গুরুত্ব আরোপ করছেন। গত গ্রীষ্মকালে প্রধানত ইউক্রেনীয় সংঘাত সম্পর্কে দেয়া এক ভাষণে পুতিন রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রভা-ারের প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিশ্ঙ্খৃলায় না জড়ানোই যে সবচেয়ে ভাল’ তা অন্যান্য দেশের বোঝা উচিত। নতুন আক্রমণাত্মক মনোভাব ব্যক্ত করার পাশাপাশি রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রশস্ত্রও ব্যাপকভাবে উন্নত করা হচ্ছে। এতে মার্কিন অস্ত্রভা-ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে মস্কোর নতুন দৃঢ়সঙ্কল্পই প্রতিফলিত হয়। এ সঙ্কল্প বাস্তবায়ন করতে হলে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য বহু অস্ত্রধারী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বুলাভার উন্নয়নের ফলস্বরূপ সাবমেরিনগুলোতে রাখা অস্ত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়াতে হবে। পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়ন বলতে এরূপ অস্ত্র বহন করার নতুন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করাও বোঝায়। গত মাসে রাশিয়া পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বহনের জন্য আবার ট্রেন চালু করবে বলে ঘোষণা দেয়। এর ফলে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রেলপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেয়া যাবে। ফলে সেগুলোর ওপর আক্রমণ চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। রাশিয়া ক্লাবকে নামে অভিহিত এক ধরনের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বিদেশে বিক্রি করাতেও পাশ্চাত্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরূপ ক্ষেপণাস্ত্রকে এর লঞ্চারসহ এটি উৎক্ষিপ্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কোন শিপিং কন্টেইনারে লুকিয়ে রাখা যেতে পারে। রাশিয়ার মাঝারি পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাই ওয়াশিংটনকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ পরীক্ষা ১৯৮৭ সালের মাঝারি পাল্লার পরমাণু অস্ত্র (আইএনএফ) চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে ওবামা প্রশাসন দাবি করছে। এ চুক্তি ইউরোপে মার্কিন ও রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে সৃষ্ট বিপজ্জনক বিরোধের অবসান ঘটিয়েছিল। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রাডার ফাঁকি দিয়ে এর লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানতে পারে। এর ফলে আকস্মিক আগাম হামলা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়।
×