ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদক সমীপে

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

সম্পাদক সমীপে

‘আমাগো দুটো টাকা দ্যান ...’ ‘আমাগো দুটো টাকা দ্যান, সকাল থেইকা কিচ্ছু খাইনি ...’- এভাবেই দুটি শিশু আমাদের কাছে আকুতি মিনতি করতে লাগল। দুই বন্ধু নাস্তা করছিলাম তখন। টাকা বের করতে না করতেই শিশু দুটি আমাদের খাবারের প্লেট থেকে খাবার নিয়ে দৌঁড় দিল। একজন মানুষ কতটুকু ক্ষুধার্ত হলে অন্যের খাবার কেড়ে খায়, তা সেদিন নিজের চোখে দেখে উপলব্ধি করেছিলাম। দূরে নিয়ে যখন তারা খাবারটি গাবুস গুবুস করে খাচ্ছিল, তখন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তাদের দিকে। সত্যিই অবাক এ দুনিয়া- কেউ খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, কেউ বা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরায় ...। মনে পড়ে যায় কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের স্বপ্নের কথা ‘তবু যতক্ষণ এ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণ পণে সরাবো পৃথিবীর জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’- কবির সেই স্বপ্ন আমরা হয়ত আজও পূরণ করতে পারিনি। আমাদের দেশের অসংখ্যা শিশুকে আজও আমরা শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করছি। অন্য দিকে আরেকটি অংশে রয়েছে আমাদের পথশিশুরা। এরা না পাচ্ছে শিক্ষার অধিকার, না পাচ্ছে চিকিৎসা কিংবা তিন বেলা খাবারের অধিকার। আজকের সমাজের কি কোন দায়িত্ব নেই এদের পাশে এসে দাঁড়াবার? বলা হয়ে থাকেÑ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষেই কি এ সকল শিশু দেশের ভবিষ্যত হয়ে গড়ে উঠছে? আজকের সমাজ তথা আমরাই তাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। পেটের দায়ে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে, অনেকেই তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে খারাপ কাজে নিয়োজিত করছে। বড় হয়ে এরাই চুরি, ডাকাতি, খুন রাহাজানির মতো সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। পেটের দায়ে চুরি করে খেতে গিয়ে ধরা পড়ে মার খায়, তাদের জন্য আমাদের কোন করুণা হয় না। যে বয়সে একটি শিশুর স্কুলের বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি করার কথা সে বয়সে শুধু দু’বেলা খাবারের জন্য অন্যের দ্বারে গিয়ে হাত পেতে বেড়াতে হয়। যে বয়সে অনেক মা তাঁর সন্তানকে যতœ করে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়, সে বয়সে অনেক শিশুরই না খেয়ে দিন কেটে যায়। আমাদের ব্যস্ততম জীবনে হয়ত ধুলার মধ্যে লুটিয়ে থাকা এ সকল কোমলমতি শিশুদের কথা ভাবার সময় হয় না। একটি ক্ষুধার্ত শিশুর অপলক চানি দেখেও নীরব হয়ে থাকি, অথবা ধাক্কা মেরে অন্য কোথাও সরিয়ে দেই। এটাই কি আমাদের মানবিকতার আসল রূপ? আমরা কি পারি না তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে? সরকারের প্রতি অনুরোধ এমন কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, যার মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রত্যেকটি শিশু যেন তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পায় এবং তারা যেন আমাদের দেশের ভবিষ্যত হয়ে গড়ে উঠতে পারে। আসুন আমরা সকলেই তাদের পাশে এসে দাঁড়াই। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সাহায্য করি। হাত পাতলে যেন ধাক্কা মেরে সরিয়ে না দেই। আমার দুটি টাকার জন্য যদি একটি শিশুর মুখে হাসি ফোটে, এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি হতে পারে। সুকদেব বিশ্বাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা অনুধাবন দিবস আমরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মে নিয়োজিত থাকি। এটাই জীবনাচরিত নিয়ম। পারিবারিক, চাকরি, ব্যবসা, রাজনীতি সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়কে বিবেকি চোখে ভেবে দেখার ফুরসত পাইনা। কিন্তু ভেবে দেখা দরকার প্রতিদিন, প্রতিমাস না হোক অন্তত বছরে একদিন। ফেলে আসা বছরে কী করেছি, কী করিনি, কী ফাঁকি দিয়েছি, কী কথা দিয়ে কথা রাখিনি, কী ভালো বা মন্দ কাজ করেছি, কী ভুল ভ্রান্তি করেছি, কী অন্যায় করেছি, এসব বিষয়ে যতটুকু সম্ভব অনুধাবন করে বিবেককে জাগ্রত করা উচিত। মনের আজান্তে নিজেকে দেখি। তাই ৩১ ডিসেম্বর কৃত্রিম আনন্দ উদযাপন না করে এসব অনুধাবন করে নির্মল আনন্দ উপভোগ ভালো কাজগুলো করার জন্য এবং অনুশোচনা করি এর উলোটি করার জন্য। তাই ৩১ ডিসেম্বর হোক অনুধাবন দিবস। এই দিকটি পালন করা হোক অনুধাবন দিবস হিসেবে। কঙ্কন সরকার, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা প্রসঙ্গ : জাতীয় নেতা ইদানীং জাতীয় নেতা নিয়ে কথা উঠেছে- এ প্রসঙ্গে কথা হয় এক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানালেন, ইতিহাস নিয়ে লেখাপড়া করেছিলাম, তাই আমার দৃষ্টিতে এই বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের মধ্যে প্রথম নামটি হলো- ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। তিনিই তো আমাদের উপহার দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন দেশ- ‘বাংলাদেশ’। তিনি আমাদের জাতির জনক। তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, জিল্লুর রহমান প্রমুখও জাতীয় নেতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগে অবিভক্ত বাংলার ও তৎকালীন পূর্ব বাংলার জাতীয় নেতা হলেন- শেরে বাংলা এ কে ফজুলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ( দু’জনেই একদা পর্যায়ক্রমে ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী), আবদুর রশীদ তর্কবাগিশ, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি প্রমুখ । এরা চিরকালের চিরদিনের জাতীয় নেতা । ওই প্রবীণ ব্যক্তি আরও জানালেন, হাজী দানেশ, কমরেড মনিসিং, মোজাফর আহমদ প্রমুখ আজীবন রাজনীতিতে ছিলেন নিবেদিত। ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন এমন একজন জানালেন, সারাজীবন আমলা পদে নয়তো সেনাবাহিনীর উচ্চপদে চাকরি করে হঠাৎ রাষ্ট্রের প্রধান পদ দখল করে রাজনৈতিক দল গঠন করলেই জাতীয় নেতা হওয়া যায় না। জাতীয় নেতা হতে হলে চাই তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা একদা এই উপমহাদেশে ছিলেন এমন ব্যক্তিত্বরা হলেন- দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ। লিয়াকত হোসেন খোকন ঢাকা শিক্ষিত কৃষকের হাট জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এক অন্যরকম হাটের খবর পাওয়া গেল। কী আছে সে হাটে? মুড়ি-মুড়কি, আলতা-চুরি নাকি রেশমি শাড়ি। না সেরকম কিছু না। চেনা ফলফলাদি আর শাকসবজি তো আছেই, আরও আছে কিছু অপ্রচলিত জিনিসও। ওইতো পাকা পেঁপে। তার পাশে শবরি আর চাঁপাকলা। সঙ্গে আছে হনুমানজটা কলা। অবাক হয়ে গেলেন তো। দাঁড়ান, আরও আছে সরিষার মধু, নদী শিম, কাঁটাওয়ালা বেগুন, মস্তফাপুরী বেগুন আর টক পালং। হাতে ভাজা ভেজালমুক্ত মুড়ি আর পাহাড়ি হলুদের গুড়া যে কারোর দৃষ্টি কাড়বেই। এমন হাটটির অস্তিত্ব কোথায়? বেশি দূরে নয়। রাজধানীর লালমাটিয়ার একটি ঘরে এই হাট বসে প্রতি শুক্রবারে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই হাটের উদ্যোক্তা হচ্ছে একদল শিক্ষিত তরুণ। সচারাচর হাটগুলো সকালে বসে সন্ধ্যায় ভাঙ্গলেও এই হাট দিনভর চলে না। তবে বসতে না বসতেই ক্রেতার ভিড় জমে ওঠে। মাত্র কয়েকঘণ্টায় বেচাকিনি শেষ। হাটের সব খাদ্যপণ্যের গুণ একটাই, তা হলো সার ও কীটনাশকের বিষক্রিয়ামুক্ত। এটাই এই হাটের আদর্শ। সপ্তাহে শুধু বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ধরনের আরেকটি হাট বসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের পূর্ব বলরামপুর গ্রামে। সে হাট থেকে কিনে আনা সবজি ও ফলই তুলে দেওয়া হচ্ছে শহুরে ক্রেতাদের হাতে। তরুণরা এই কার্যক্রমের নাম দিয়েছে প্রাকৃতিক কৃষি। গ্রামের কৃষকদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের সহায়তায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদ করাই মূল লক্ষ্য। নজরুল ইসলাম লিখন ঢাকা
×