ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

ত সপ্তাহে ঢাকার দিনরাত কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই না গিয়েছে। দিন আর রাতের যে ব্যবধান, যে বিপরীতমুখী চারিত্র্যÑ অনেকটা সেরকমই যেন। এই যেমন উত্তুঙ্গ পৌষে পাওয়া গেছে বৈশাখী আমেজ। অনেকে অবশ্য বৈশাখ না বলে ফাল্গুনও বলতে পারেন। দ্বিতীয়ত উৎসবে মেতে উঠেছে রাজধানী। স্বাধীনতাবিরোধীদের উদ্যোগে দু-দুটো হরতাল এসে চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে এবং নাগরিকরা হয়েছেন চরম বিরক্ত। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর মতো পরম পবিত্র একটি দিনে আকস্মিকভাবে রাজনীতির উত্তাপ ছড়ানোয় ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যা কমে যোগাযোগ হয়ে উঠেছে সাময়িকভাবে সীমিত। সোমবার যখন এই লেখা প্রেসে যাচ্ছে তখন ঢাকার চেনা রূপ কিছুটা অচেনা হয়ে উঠছেÑ যার বিশদ বিবরণ আজ মঙ্গলবারের সংবাদপত্রে প্রাধান্য পাওয়ারই কথা। সত্যি এই একটি সপ্তাহে ঢাকা হয়ে উঠেছে বহুরূপী; চিরচেনা আবার হঠাৎ অনেকটাই অচেনা যেন। বহু বর্ণিল আলোকিত বীরশ্রেষ্ঠ স্মারক বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শেষ প্রহরটিতে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগে আগে ঢাকা বাস্তবিকই অন্যরকম। থার্টিফার্স্ট নাইট বাঙালী সংস্কৃতির অন্তর্গত না হলেও এখন বহু নাগরিক শিক্ষিত বাঙালী এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খ্রিস্টীয় নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার, একটি বছরকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এই ক্ষণটিকে আনন্দে ভরিয়ে তোলার কত সশব্দ আয়োজন। কত পানাহার আর হৈ হুল্লোড়! এই উৎসব উদযাপনকালে কখনও কখনও খানিকটা সীমা লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটে যায়। সে ঘরে হোক বা বাইরে। যেমন এবার এক লেখকদের আড্ডায় বয়োকনিষ্ঠ এক লেখকের গায়ে বয়সী এক লেখক হাত তুলেছেন। প্রহৃত হওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। থার্টিফার্স্ট নাইটে রাত ১২টার আগে বনানী থেকে উত্তরা যেতে সড়কের ডান পাশে এমইএস বাস স্টপেজের কাছে সাত বীরশ্রেষ্ঠ স্মরণে নির্মিত বহু বর্ণিল আলোকিত স্তম্ভের দিকে তাকিয়ে ক্ষণিকের জন্য একাত্তরে হারিয়ে গেলাম। ভাবলাম কত আনন্দ আর বেদনার সাক্ষী এই বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। কত স্মরণে উদযাপনে উদ্বেলিত আন্দোলিত ছিল এবারের বিদায়ী ডিসেম্বরও। চলে গেল আরও একটি ডিসেম্বর। একটি গোটা বছরই তো! স্মরণে এলো ‘মোঃ জিল্লুর রহমান’ উড়াল সড়ক (ফ্লাইওভার) নির্মাণের পর যানবাহনের উর্ধারোহণের স্থানটিতে সমতলে অনেকখানি জায়গা নতুন স্থাপনার জন্যে অপেক্ষাতুর ছিল অল্পকাল। সেই শূন্য জায়গাটি কিছুকালের মধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেল তাৎপর্যপূর্ণভাবে। নির্মিত হলো ‘বীরসপ্তক’। রাতের বেলা এর মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সৌন্দর্য অনেকেই চেয়ে চেয়ে দেখেন। বিশেষ করে উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী যানবাহনের যাত্রীদের কাছে এই সৌন্দর্যটি আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে বিস্তৃত মুক্ত স্পেসের প্রেক্ষাপটে। সন্ধ্যা হলেই আঁধার ফুঁড়ে পিরামিড আকৃতির সাতটি স্তম্ভ হয়ে ওঠে আলোয় রঙিন। সবুজ লতায় মাখা ঝলমলে সে আলো চোখে প্রশান্তি দেয় পথচারীদের। আমরা জানি স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, হামিদুর রহমান, মোস্তফা কামাল, মোঃ রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মুন্সী আবদুর রউফ ও নূর মোহাম্মদ শেখ উপাধি পান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’। বিভিন্ন স্থানে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সমাধি থাকলেও এ স্মৃতিস্তম্ভ যেন তাদের যূথবদ্ধ রাখার প্রয়াস। গোলাকার সুচালো নেটঘেরা স্তম্ভগুলোর ভেতরে সবুজ লতা যেন তাদের জড়িয়ে রেখেছে বন্ধনে। স্মৃতিস্তম্ভগুলোয় নানান রঙের আলোর প্রতিফলন সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাজানো। একেকটি স্তম্ভের রং মুহুর্মুহু কয়েকটি রঙে রঙিন হয়ে উঠতে থাকে। লাল-সবুজ তো আছেই, সে সঙ্গে বেগুনী, কমলা, হলুদ, রূপলীÑ আরও দু-একটি রং। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এ্যাডভান্স এলইডি পদ্ধতি বিভিন্ন দিবসেও আলাদা আলো দিয়ে পৃথক রঙের আবহ তৈরি করতে সক্ষম। এই আলো মন রাঙায়। স্বাধীনতার বর্ণিল বাস্তবতাও অনেকের মানসপটে ধরা দেয়। এভাবে বছরভর যদি আমরা তরুণ প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং স্বাধীনতার স্বপ্নিল রং ছড়িয়ে দিতে পারতাম! ট্রাফিক সার্জেন্টের শরীরে অত্যাধুনিক ক্যামেরা বলছিলাম থার্টিফার্স্ট নাইটের কথা। মধ্যরাতে ঢাকার রাস্তায় টহলরত ট্রাফিক সার্জেন্ট এবার প্রযুক্তির বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ওই উৎসবের রাতে। মাথায় বা বুকে অনেকেরই বাঁধা ছিল সচল ক্যামেরা। প্রাথমিকভাবে ১৫টি ক্যামেরা ১৫ পুলিশ সদস্যকে দেয়া হয়েছে। পরে এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। ‘বডি অন ক্যামেরা’ প্রকল্পের আওতায় ৪০০ ক্যামেরা দেয়ার কথা শুনলাম। শত শত অডিওভিজুয়াল ক্যামেরা নিয়ে ঢাকার রাজপথে পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে তার একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কথা বলছিলাম এক ট্রাফিক সার্জেন্ট সালাহউদ্দিন প্রধানের সঙ্গে। ক্যামেরা তাঁর কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিয়েছে বলে মনে হলো। পথচারী ও গাড়ির চলাচলসহ রাস্তার বিভিন্ন চিত্র ধারণ করতে সার্জেন্টদের শরীরে সংযুক্ত এ ধরনের ক্যামেরা দিয়ে টানা ৮ ঘণ্টা যে কোন দৃশ্য রেকর্ড করা সম্ভব। ভিডিও ও অডিও দুটোই ধারণ করা যাবে। পুলিশ বাহিনীতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের ধারাবাহিকতায় এ ডিজিটাল ক্যামেরা সংযুক্ত করা হলো। এ ক্যামেরা ব্যবহারের ফলে পথচারীর রাস্তা পারাপার, গাড়ির মালিকের সঙ্গে ট্রাফিক সার্জেন্টের সঙ্গে সমন্বয় আরও বাড়বে। এ ছাড়া পুলিশের কর্মকাণ্ডের নানা বিষয় ভিডিও-অডিও রেকর্ড থাকবে। এটি হাই রেজুলেশনের ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। কাজ শেষে মেমোরি কার্ড থেকে ডাউনলোড করে ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করা যাবে। এ ক্যামেরায় রাস্তার সব ধরনের চিত্র ও সার্জেন্টের কথোপকথন রেকর্ড থাকবে। এই রেকর্ড সার্জেন্ট নিজের ইচ্ছায় মুছে ফেলতে পারবেন না। তবে কৃত্রিম আলো ছাড়া রাতের অন্ধকারে ভিডিও করা সম্ভব না হলেও অডিও রেকর্ড করা যাবে। সেটাও বা কম কী। পৌষ সন্ধ্যায় পাঞ্জাবি মেলা শুক্রবার দিনেরবেলা গরমে ঘেমে উঠল ঢাকা। তীব্র শীত থেকে যথেষ্ট গরমের ভেতর পড়ে অনেকেরই হাঁসফাঁস দশা। শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। তাপমাত্রার এমন ওঠানামা শরীরের অভিযোজন ক্ষমতার ওপর একটা চ্যালেঞ্জ বটে। পৌষের মাঝামাঝি আকস্মিকভাবে শীতের উধাও হয়ে যাওয়ায় চমকে গিয়েছেন অনেকেই। বহু লোকের কাছেই এটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এটা নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি নানা আড্ডায়। রাস্তার ধারের চা-খানায় দুই তরুণ ছাত্রের কথোপকথন কানে এলো। বেশ বিজ্ঞের মতো একজন অন্যজনকে বলছেন, জলবায়ু বদলে গেছে এ জন্যই শীতকালে এমন গরম। তা হলে ভেবে দেখ, এবার এপ্রিল-মে মাসে কী অবস্থা হবে। একেই বলে হাবিয়া দোজখ। অন্য বন্ধু হেসে বললেন, আরে দোস্ত এই গরম পড়ছে সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে। ঢাকায় আমরা গরমে মরছি, আর উত্তরবঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, জানিস? আসলেও তাই। উত্তরের অনেক জেলায় বৃষ্টির সঙ্গে হিমেল হাওয়ার ঝাপটায় বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ওপরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে কলকাতাসহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ঢুকেছে মেঘের আবরণ, হচ্ছে বৃষ্টি। কমে গেছে উত্তরে হাওয়ার দাপট। তবে শীত তা বলে ফুরিয়ে যায়নি। জানুয়ারিতে বয়ে যাবে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ। যা হোক ঢাকার ছেলে-বুড়োরা জ্যাকেট-সোয়েটার-কোট ছেড়ে পাঞ্জাবি পরার সুযোগ পেলেন। ত্রিশের কাছাকাছি তাপমাত্রা হলে পাঞ্জাবি আর টিÑশার্টেই তো আরাম। ঢাকাবাসীদের জন্য এটাকে বোনাসই বলতে হবে। শাহবাগে এক ভেন্যুতে একাধিক বইমেলা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ বইমেলার জন্য বেশ একটা উপযুক্ত জায়গা হয়ে উঠেছে। নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত নবেম্বরে তাঁর বই নিয়ে একক মেলা হয়েছিল। এরপর আরও এক লেখকের বই নিয়ে মেলা হয়েছে। ডিসেম্বরে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলল বঙ্গবন্ধু বইমেলা। বছরের প্রথম দিনে হয়েছে শিশুদের ‘বই উৎসব’। এক সময়ে পহেলা জানুয়ারি গ্রন্থ দিবস হিসেবেও পালিত হয়েছে দেশে। আয়োজিত হতে দেখেছি ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা। মেলাটির আয়োজক ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা আমাদের গর্বের জায়গা। কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়। তার পরও পাঠবিমুখ জাতি হিসেবে আমাদের একটা বদনাম রয়ে গেছে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি বলেই পাঠ্যাভ্যাসের সংস্কৃতি, বই নিয়ে আলোচনা-গল্প-আড্ডার চল, সেভাবে গড়ে তোলা যায়নি। তাই যে কোন বইমেলাকেই আমরা স্বাগত জানাতে চাই। যদিও বই বিক্রির বিষয়টি অনেক সময়ই আমাদের কিছুটা হতাশ করে থাকে। বঙ্গবন্ধু মেলার বই বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে খুব আশান্বিত হওয়ার কিছু পাইনি। তবে এটা মানতেই হবে বইয়ের ব্যবসা মেলায় তেমন না হলেও বহু পাঠককে আকৃষ্ট করা গেছে। তাঁরা বই হাতে তুলে দেখেছেন উল্টেপাল্টে। মেলা না হলে তো এটুকুও হতো না। তাই বইমেলার আয়োজন সব সময়েই ইতিবাচকভাবেই আমরা দেখব। এর প্রচার-প্রসারেও আমরা সচেষ্ট হবে। এই যে বঙ্গবন্ধু বইমেলা শেষ না হতেই একই স্থানে দু-দুটি বইমেলার আয়োজন হলো সেটাকে নতুন বছরের শুরুতে নতুন আশা জাগানিয়া হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান পড়ুয়া দেশে যথেষ্ট সংখ্যকই আছেন। ‘সায়েন্স ফিকশন বইমেলা’ তাদের আকৃষ্ট করারই কথা। ঢাকার আটটি সুপরিচিত প্রকাশনীর সম্মিলিত আয়োজন ‘বই উৎসব’। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই মেলায় মিলছে কমিশনে বই কেনার সুযোগ। বইমেলাসহ থাকছে বইকেন্দ্রিক অন্যান্য আয়োজন। অংশগ্রহণকারী ৮ প্রকাশনী হলো : অনন্যা, অনুপম, অ্যাডর্ন, কাকলী, নিমফিয়া, প্রতীক, প্রথমা ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। নতুন বছরে এমন নতুন নতুন উদ্যোগে বইমেলা আয়োজিত হোক। বই উপহার দেয়ার আনন্দ সবার মনে ছড়িয়ে পড়ুক এটাই কামনা করি। ধর্মীয় পবিত্র দিবসে অনেক ভোগান্তি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর পবিত্র দিবসে সারাদিনই ঢাকায় যানচলাচল কম ছিল। পরদিন ৫ জানুয়ারিতে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচী নিয়ে উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ ছিল ঢাকাবাসীদের মনে। টিভির খবর দেখলে মনে হয় ঢাকায় যেন একটা হুলস্থ’ল হাঙ্গামা লেগে গেছে। আমাদের কি আর ঘরে টিভির সামনে বসে থাকলে চলে! পারিবারিক বিশেষ আমন্ত্রণে যোগ দিতে গিয়েছিলাম উত্তরা থেকে জিগাতলায়। রাত ৮টার সংবাদ শুনেই বেরিয়ে পড়লাম। সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত অবশ্য একটিও মোহাম্মদপুর টু মতিঝিল রুটের বাস চোখে পড়েনি। ‘ভূত’ শব্দযুক্ত একটি রেস্তরাঁর সামনে তিন অভ্যর্থনাকর্মী কাম সিকিউরিটি গার্ডের পোশাক দেখলে পুলিশ বলে ভ্রম হয়। সামনেই র‌্যাবের গাড়ি রয়েছে একাধিক। অন্যদিন দুই পাশের রাস্তা মিলিয়ে যাত্রীবোঝাই কমপক্ষে ১৫টি বাসের দেখা মিলত। আজ বাস তো নেই-ই, প্রাইভেট গাড়িও বেজায় কম। এক ভদ্রলোককে দেখলাম স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে চলে এলেন বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত এক রেস্টুরেন্টের সামনে। তার মানে তিনি নিরাপত্তার ঝুঁকি বোধ করেননি। বাস-টাস পোড়ানো হলে বাস মালিক তো ভয় পাবেনই রাস্তায় বাস নামাতে। প্রাইভেটকারগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যা হোক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে এসে কিছু বাসের দেখা পেলাম। ফার্মগেটে গিয়ে দেখি প্রচুর সিএনজি অটোরিক্সা। দুয়েকটা বাস এলেও তাতে ওঠার জো নেই। মানুষে ঠাসা। সিএনজিতে উত্তরায় ফিরতে ফিরতে মনে হলো যানবাহনের সংখ্যা অনেক কমে যাওয়ার ফলেই রাস্তা সুনসান লাগছে। বিকেলবেলা অফিস ফেরত বিপুল সংখ্যক যাত্রীর সুবিধার্থে ক’দিন ফার্মগেটে এক হালি করে দোতলা বাস রাখা থাকত। মন্ত্রীবাহাদুরকে মনে মনে ধন্যবাদও দিয়েছিলাম সেজন্য। কিন্তু এমন একটা সমস্যার দিনে মহানগরীর ভেতর জনপরিবহন মোটামুটি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে কোন উদ্যোগই নেই কর্তৃপক্ষের! ভয় করলেই ভয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বেশ বেড়েছে। কোথাও কোন অঘটন অবশ্য চোখে পড়ল না। ভাবছিলাম মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য কিছু ককটেলওয়ালার পাশাপাশি টিভি মিডিয়াকে দায়ী করব কিনা! ওরাই তো প্রতি ঘণ্টায় দু-তিনটি গাড়ি পোড়ানোর ছবিই কুমিরের একই ছানার মতো বার বার ঘুরিয়ে ঘারিয়ে দেখিয়ে প্যানিক সৃষ্টি করে। [email protected]
×