ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিলেবাসে অপাঠ্য গ্রন্থ

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৫

সিলেবাসে অপাঠ্য গ্রন্থ

সংবাদটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। শনিবার জনকণ্ঠে ‘দিনাজপুরে পাঠ্যবইয়ের নামে পড়ানো হচ্ছে অপাঠ্য’ শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদনে জানা যায় এই উদ্বেগজনক সংবাদ। ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয়, পাঠ্যবইয়ের নামে কোমলমতি শিশুদের পড়ানো হচ্ছে নিম্নমানের ভুলে ভরা বই। সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে এসব বই পাঠ করার ফলে শিশুদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তালিকাভুক্ত ছাড়া অন্য কোন বই সহায়ক গ্রন্থ না করার নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সেই নির্দেশ মানছে না। এক্ষেত্রে এক শ্রেণীর স্কুল শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট বইয়ের প্রকাশক ও লেখকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে সংবাদে প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মেধা বিকাশে পাঠ্যবইয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের জোর দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সে নির্দেশ সঠিকভাবে অনুসৃত হচ্ছে না। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সহায়ক গ্রন্থ পড়তে হবেÑ এরকম অলিখিত নির্দেশনা দিয়ে এক শ্রেণীর স্কুল শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটি নিজেদের পছন্দমাফিক একটি প্রকাশক ও লেখক চক্রকে দিয়ে উল্লিখিত নিম্নমান ও ভুলে ভরা সহায়ক বই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উচ্চমূল্যে কিনতে বাধ্য করছে। এক্ষেত্রে সেসব স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছেÑ সহায়ক গ্রন্থ না কিনলে পরীক্ষার ফলাফল আশানুরূপ হবে না। ফলে শিক্ষার্থীরা অনন্যোপায় হয়ে উচ্চমূল্যে এসব অপাঠ্য বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে। অপাঠ্য বইকে বিদ্যালয়ে পাঠ্য করার ফলে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটছে না। একেক স্কুলে একেক বইকে পাঠ্য করার ফলে শিক্ষার্থীদের মনোজগতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এক শ্রেণীর অসাধু প্রকাশক স্কুল শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটিকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা করে যাচ্ছে। সাধারণত শিক্ষা বছরের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসকে ঘিরে চলে অর্থলোভী প্রকাশকদের রমরমা শিক্ষাবাণিজ্য। এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী এজেন্ট দেশের স্কুলগুলোতে তাদের এই ফাঁদ পেতে বিপুল টাকার শিক্ষাবাণিজ্যে মেতে ওঠে। স্কুলগুলোতে এ ধরনের নিম্নমানের ও ভুলে ভরা সহায়ক গ্রন্থের ব্যাপারে এনসিটিবির উচিত মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক স্তরে এনসিটিবির বাইরে বাংলা ও ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র এবং বাংলা ও ইংরেজী সঙ্কলনের (গল্প) এই চারটি বিষয় নিয়েই মূলত এই বাণিজ্য চলে। এ সব বই পাঠ্য করার ব্যাপারে প্রতিবছরের শুরুতে এনসিটিবি থেকে স্কুলে তালিকা পাঠানো হয়। কিন্তু তালিকা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট লেখকের ও প্রকাশনী সংস্থার এই চারটি সহায়ক গ্রন্থ স্কুলে পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা তা আর খবর নেয়া হয় না। এ খবর না নেয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্কুল শিক্ষক, পরিচালনা কমিটি ও প্রকাশক চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রক্রিয়ায় মেতে ওঠে। অসাধু চক্রটির এই বাণিজ্যের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারে তাহলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হতে পারে, যার ফলভার গ্রহণ করতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে।
×