ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই সপ্তাহে ‘পিকে’ চলচ্চিত্রের আয়ের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

দুই সপ্তাহে ‘পিকে’ চলচ্চিত্রের আয়ের রেকর্ড

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ মুক্তির দুই সপ্তাহের মধ্যেই সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড করেছে আমির খান ও আনুশকা শর্মা অভিনীত চলচ্চিত্র ‘পিকে’। রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘পিকে’ চলচ্চিত্র মুক্তির দুই সপ্তাহের মাথায় ২৭৬. ৩২ কোটি রুপী আয় করেছে বলে জানা গেছে। যা হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ‘ধুম থ্রি’ এবং ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ দুই সপ্তাহে আয় করেছিল যথাক্রমে ২৬৫ ও ২৫৮ কোটি রুপী। সেই দিক থেকে ২৭৬.৩২ কোটি রুপী আয় করে সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে চলচ্চিত্র ‘পিকে’। গত ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পায় আলোচিত চলচ্চিত্র ‘পিকে’। অবশ্য ছয় মাস আগ থেকেই শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিল চলচ্চিত্রটি। আমির খানের নগ্ন পোস্টার দিয়ে যে সমালোচনার শুরু, মুক্তির পর তার পালেই হাওয়া লাগে ‘ধর্মানুভূতি’তে আঘাত হানার অভিযোগে। এতকিছুর পরও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের রায়ে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের একটি হতে যাচ্ছে ‘পিকে’। রাজকুমার হিরানি আর আমির খান জুটির নতুন এই চলচ্চিত্র বিদ্যুতগতিতে এগিয়ে চলেছে সর্বকালের সেরা বাণিজ্যিকভাবে সফল হিন্দি চলচ্চিত্র হওয়ার দিকেও। এত সমালোচনা সত্ত্বেও এমন সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে চলচ্চিত্রের অনন্য এক গল্প, সাহসী বক্তব্য এবং আমির খানের অভিনয়ে। ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিনিয়ত ঠকতে থাকা মানুষ এবং তাদের কপটতার কথাই তুলে ধরে বিদ্রুপাত্মক কমেডি চলচ্চিত্র ‘পিকে’। গত বছরের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর নয়, জয়গান গায় মানুষেরই, যারা সত্যিকারের মানবতায় বিশ্বাস করে। এদিকে ভারতের একটি গণমাধ্যম জানায় নীতিশ কুমারের অনুরোধে ‘পিকে’ চলচ্চিত্রটিকে করমুক্ত ঘোষণা করে জিতনরাম মাঝির সরকার। সম্প্রতি একই কথা জানিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ। আমির খান অভিনীত ‘পিকে’ দেখতে গিয়েছিলেন জেডিইউ নেতা নীতিশ। এ দিন তিনি রাজ্য সরকারকে চলচ্চিত্রটি করমুক্ত করার আর্জি জানান। তাতে সাড়াও মেলে। অন্যদিকে আমদাবাদ, রাঁচি, ভোপাল, দিল্লীর মতো শহরের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ‘পিকে’র প্রদর্শন বন্ধের দাবিতে তা-ব চালিয়েছে বজরঙ্গ দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য-সমর্থকরা। জানা গেছে মুক্তির পরপরই ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা হওয়া ‘পিকে’ চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আগ্রা এবং ভোপালের উগ্র হিন্দুবাদী সংগঠনগুলো। সম্প্রতি আগ্রার এক সিনেমা হলে হামলা চালিয়ে আমির খান অভিনীত চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী বন্ধের চেষ্টা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বাজরাঙ্গ দল নামের মৌলবাদী দুটি সংগঠন। আমির খানকে দ্বিমুখী চরিত্রের অধিকারী হিসেবে উল্লেখ করে তাকে পাকিস্তানে পাঠানোর দাবি তোলা এই দুই সংগঠন যৌথভাবে হামলা চালায় আগ্রার শ্রি টকিজ সিনেমা হলে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে যেখানে ‘পিকে’র নিয়মিত প্রদর্শনী হচ্ছে। বাজরাঙ্গ দলের মুখপাত্র মদন শর্মা এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজেন্দ্র গার্গের অভিযোগ, ‘পিকে’তে আমির খান হিন্দু দেবদেবীদের অবমাননার মাধ্যমে গোটা সনাতন ধর্মেরই অপমান করেছেন। হল কর্তৃপক্ষ এর মধ্যেই এ ব্যাপারে একটি মামলা করেছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে এ ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশের ভোপালেও। সেখানে জ্যোতি সিনেমা হলে ‘পিকে’র প্রদর্শনী বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বাজরাঙ্গ দল। সংগঠনটির সভাপতি কামলেশ ঠাকুর বলেছেন, চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে অচিরেই তারা আবেদন করবেন প্রাদেশিক সরকারের কাছে। মহারানা প্রতাপ নগরের পুলিশ মহাপরিদর্শক আরভিন্দ খারে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন, সিনেমা হলের সামনে যারা বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন, তাদের থামানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে কোন দুর্ব্যবহার করা হয়নি এবং কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। মুক্তির পর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়া ‘পিকে’ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। এর মধ্যেই ‘পিকে’কে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে ‘ব্যানপিকে’ হ্যাশট্যাগের প্রচলন ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে। ওদিকে ‘পিকে’র পক্ষে আওয়াজ তুলে ‘উই সাপোর্ট পিকে’ হ্যাশট্যাগও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপকভাবে। এতসব ঘটনার কারণে ‘পিকে’ নিয়ে দর্শকদের মধ্যে আলাদা একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলেই দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে হলে চলচ্চিত্রটি দেখতে। এ নিয়ে নয়াদিল্লীর বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছিল, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সকলের রয়েছে। তবে অখিলেশের বিরুদ্ধে তোপ দেগে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারা মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। বিহারের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীল মোদী সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লেখেন ‘মুক্তির দু’দিন পরই পিকে দেখেছি। বিরোধিতার কারণ বুঝছি না। আমির খান সব সময় সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সোচ্চার। রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, নীতিশের চাল বুঝতে পেরেই এ পদক্ষেপ করেছেন সুশীল। ‘পিকে’ দেখার পর নীতিশ বলেছিলেন, দেশকে ভাগ করতেই এই চলচ্চিত্রের বিরোধিতা করা হচ্ছে। শিল্প কোন জাতি, ধর্ম মানে না। আমি সরকারকে চলচ্চিত্রটি করমুক্ত করার অনুরোধ করব। নীতিশের অনুরোধের জেরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম ‘পিকে’ করমুক্ত বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমি ‘পিকে’ দেখিনি। তবে তাকে ঘিরে যা হচ্ছে তা কাম্য নয়। শিল্প নিজের ধর্ম মেনে চলে।
×