ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আমার মাটি, আমার মা- ময়লা হতে দেব না’ ॥ পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার শপথ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

‘আমার মাটি, আমার মা- ময়লা হতে দেব না’ ॥ পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার শপথ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা সবাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। সংখ্যায় শ’খানেক। প্রত্যেকের হাতে বড় কালো প্লাস্টিকের থলে। মুখে ধূলি নিরোধক মাস্ক। ফেলে দেয়া চিপসের প্যাকেট, বিড়ি-সিগারেটের উচ্ছিষ্ট, খাবার প্যাকেট, পলিথিনসহ নানা ধরনের আবর্জনা থলেতে ভরে তারা সাজিয়ে রাখল সারিবদ্ধভাবে। এরপর মাস্ক খুলে সমস্বরে সেøাগান তুলল- ‘আমার মাটি, আমার মা- ময়লা হতে দেব না’। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার এমন শপথ নিয়ে এসব কিশোর-তরুণরা শনিবার দুপুর ১টায় জড়ো হয়েছিল রাজধানীর ওসমানী উদ্যানে। বেসরকারী সংগঠন ‘পরিবর্তন চাই’-এর ব্যানারে একই দিন রাজধানীর ছয়টি স্থানে ও দেশের ৪০টি জেলা সদরে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে এ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেয় কয়েক হাজার তরুণ ও স্বেচ্ছাসেবক। পরে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে স্মারকলিপিও দেয়া হয়। ওসমানী উদ্যানে আয়োজক সংগঠনের মূল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে তরুণদের উৎসাহিত করেন। তরুণরাই সমাজ পরিবর্তনের কা-ারি উল্লেখ করে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, পরিচ্ছন্নতা মানেই আলোকিত হওয়া। পরিচ্ছন্ন দেশ গড়তে তরুণদেরই আওয়াজ তুলতে হবে। সবার কানে খবর পৌঁছাতে হবে পরিচ্ছন্নতার আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। তবে এ আন্দোলন একদিনের নয়, সারা বছরের। পরিচ্ছন্নতা চর্চার বিষয়। প্রথমে অল্প একটু জায়গা প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে। এরপর জায়গার পরিসর অংশগ্রহণের স্মৃতিই বলে দেবে সবাই মিলে চেষ্টা করলে পুরো দেশটাই একদিন পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, আবর্জনা জমে রাস্তার পাশে, ফুটপাথে। বড় বড় শহরে ফুটপাথ দখলের সমস্যাটি নতুন হয়। স্বাধীনতার পরে গত ৪৩ বছরে এ সমস্যা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতিটি সরকার ও পুলিশ পরোক্ষভাবে দখলদারদের সমর্থন করেছে। জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হলে ফুটপাথ পরিচ্ছন্ন ও দখলমুক্ত রাখতে তারা আরও বেশি উদ্যোগী হবে। স্থপতি মোবাশ্বির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ধার্মিক। প্রতিটি ধর্মেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষ যদি নিজের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখে, গোটা দেশে তার প্রভাব পড়বে। এর আগে অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ফিদা হকের সভাপতিত্বে তরুণদের উৎসাহিত করে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা, ইউএনডিপির কর্মকর্তা ফওজিয়া খন্দকার ইভা, বেসরকারী সংস্থা ব্রতীর চেয়ারম্যান শারমিন মুরশিদ, এ্যাকশান এইড, বাংলাদেশের পরিচালক ফারাহ কবীর, আইসিডিডিআরবি’র কর্মকর্তা ফারজানা মজিদ প্রমুখ। আলোচনা পর্ব শেষে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ উপস্থিত সবাইকে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে শপথ পাঠ করান। অনুষ্ঠানে ৩১ ডিসেম্বরকে ‘দেশটাকে পরিষ্কার করি’ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত রাজধানীর বনানী মাঠ, মিরপুর ২ নম্বার, ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর, কামাল আতাতুর্ক এ্যাভিনিউ ও মহাখালীর সাততলা বস্তি এলাকা থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা আবর্জনা সংগ্রহ করে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলে। সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর অপরিচ্ছন্নতার জন্য ৫টি কারণ চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেয়া হয়।
×