ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীর বস্তিবাসীদের পানি ও স্যুয়ারেজ সেবা দিচ্ছে ওয়াসা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

রাজধানীর বস্তিবাসীদের পানি ও স্যুয়ারেজ সেবা দিচ্ছে ওয়াসা

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীর বস্তিবাসীদের বৈধ পানির সংযোগ ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়ার জন্য ওয়াসা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কড়াইল বস্তিতে ৪৫৬টি বৈধ পানি সংযোগের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৬৪০ পরিবারকে সেবা দেয়া হচ্ছে। বাকি আরও ৩শ’ বস্তিতে ৯৭৭টি সংযোগের মাধ্যমে মোট ৬৩ হাজার ৬১৮টি পরিবারকে পানি সরবরাহ সেবা দেয়ার কাজ চলছে। পানি সংযোগ দেয়ার পরেই স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্যা আরবান পওর নামের (ডব্লিউএসইউপি) একটি সংস্থা যৌথভাবে কাজ করছে। ডব্লিউএসইউপি ওয়সার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ৯ মাস চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ঢাকার সব বস্তিবাসীর জন্য পানির বৈধ সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর সব বস্তিতে পানি ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়া হবে। ঢাকা ওয়াসা ও ডব্লিউএএসইউপি বস্তিবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে। গত বছরের মার্চে নেদারল্যান্ডসের ডব্লিউএএসইউপি ও ঢাকা ওয়াসা যৌথভাবে কাজ শুরু করে। ঢাকার বস্তিগুলোতে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ সেবা উন্নয়ন এবং রাজস্ব আয়ের দিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখা হযেছে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রাজধানীর সকল বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ডব্লিউএএসইউপির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর বস্তিবাসীদের জন্য ঢাকা ওয়াসার সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি হবে। তাদের সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ অনেকটা সহজ হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা রাজধানীর বস্তিবাসীর জন্য পানি ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়ার কাজ করে যাচ্ছি। ডব্লিউএএসইউপি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আগেই কযেকটি বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ ও স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। কড়াইল বস্তিতে ৪৫৬টি বৈধ পানির সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। এখন সেখানে সুয়্যারেজ লাইন স্থাপনের জন্য কাজ শুরু করা হবে। আগে এসব বস্তিতে পানির সংযোগ ছিল অবৈধ। সংযোগগুলো বৈধ হওয়ায় সরকারের রাজস্বও আসছে। নি¤œআয়ের জনগোষ্ঠীকে বৈধ পানি সরবরাহ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য তিনি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহসহ স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াসার এমডি। বস্তিবাসীদের জন্য ঢাকা ওয়াসা যে উপায়ে কাজ করে যাচ্ছে তা তৃতীয় বিশ্বের জন্য একটি ‘রোল মডেল’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে, এক দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে গুরুত্ব অনুসারে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পে বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও বসানো হবে। প্রতিটি বিভাগের উন্নয়নে একটি করে পরিকল্পনা থাকে। বর্তমানে ওয়াসার এমন একটি মহাপরিকল্পনা আছে। স্যুয়ারেজের আওতায় আনার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান হাতে নেয়া হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগিয়ে না গেলে ভাল কোন কিছু পাওয়া যাবে না। দাতা সংস্থাগুলো স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনে টাকা দেবে। কাজটি বাস্তবায়ন হলে মহানগরীর জলাবদ্ধতা এবং বর্জ্য নিষ্কাশন সঠিকভাবে হবে। আর যদি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হয় তাহলে জলাবদ্ধতা ও পয়ঃনিষ্কাশন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তখন ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থ সহযোগিতায় সাড়ে ১৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছরের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। ৮১টি ডিস্ট্রিক এরিয়া মিটার (ডিএএম) এবং ১৪টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হবে। এতে পানির চাপ সব এলাকায় সমান থাকবে। নতুন পাইপ লাইনের আওতায় ওয়াসা চলে এলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হবে। পানির সিস্টেম লস ও চুরি বন্ধ হবে। অন্যদিকে, ঢাকা শহরকে ১শ’ ভাগ স্যুয়ারেজ কাভারেজের আওতায় আনার জন্য ওয়াসা ঢাকা শহরের একটি স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। প্রস্তাবিত এ মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০৩৫ সাল। এ সময়ের মধ্যে মাস্টার প্ল্যানটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে ঢাকা মহানগরী আধুনিক নগরীতে পরিণত হবে। বর্তমানে নগরীর মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা স্যুয়ারেজ কাভারেজে রয়েছে। মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ঢাকা ওয়াসা সার্ভিস এরিয়া প্রায় ৪শ’ বর্গকিলোমিটারসহ রাজউকের ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (ডিএমডিপি)-এর মোট এক হাজার ৪২৪ বর্গ কি.মি এলাকাকে স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনা ২০৩৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা শহরকে বিভিন্ন ক্যাচমেন্ট ভাগ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। মাস্টার প্ল্যানে প্রথম পর্যায়ে পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের আধুনিকায়ন করে এর শোধন ক্ষমতা ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ২ লাখ ঘনমিটারে উন্নীত করা হবে। ২য় পর্যায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে দাশেরকান্দি, উত্তরা, মীরপুর, রায়েরবাজার এবং নারায়ণগঞ্জ পূর্ব ও নারায়ণগঞ্জ পশ্চিমে আলাদা আলাদা স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩৫ সালের মধ্যে সাভার, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জ, পূর্বাচল ও গাজীপুরে আলাদা আলাদা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
×