ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নয় মাস পর খুলল ঢাকায় মালদ্বীপের হাইকমিশন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

নয় মাস পর খুলল ঢাকায় মালদ্বীপের হাইকমিশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় মালদ্বীপের হাইকমিশন পুনরায় খুলেছে। নয় মাস বন্ধ থাকার পরে পহেলা জানুয়ারি থেকে পুরোদমে দেশটির ঢাকা হাইকমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে ঢাকা থেকে হাইকমিশন গুটিয়ে নিয়েছিল মালদ্বীপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে গত পহেলা এপ্রিল থেকে সার্কভুক্ত দেশ মালদ্বীপ ঢাকার হাইকমিশন বন্ধ করে দেয়। ঢাকায় তাদের হাইকমিশন বন্ধ করে দেয়ার পরে নয়াদিল্লীর মালদ্বীপ দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যায় দেশটি। মালদ্বীপের হাইকমিশন বন্ধের সময় ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ আদিল জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে হাইকমিশন গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদ্বীপ সরকার। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে তাদের এ দূতাবাস বন্ধ করতে হয়েছে। আর্থিক সঙ্কট কেটে গেলে ঢাকায় মালদ্বীপ হাইকমিশন পুনরায় চালু করা হবে। সূত্র জানায়, ৭ বছর আগে মালদ্বীপ ঢাকায় দূতাবাস চালু করেছিল। এরপর গত বছরের শুরুতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪০ শতাংশ ব্যয় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তারই অংশ হিসেবে বিদেশে প্রথম দূতাবাস বন্ধ করা হয় ঢাকায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে আরও কয়েকটি মালদ্বীপ দূতাবাস বন্ধ করা হয়। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় অর্থ সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে মালদ্বীপ সরকার অনেক আগেই বাংলাদেশে থাকা মিশন বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নাশিদ তখন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন স্থগিত করেছিলেন। এরপর মালদ্বীপের বর্তমান সরকার মিশন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশে মালদ্বীপের হাইকমিশন অফিস। সূত্র জানায়, ১০ বছর আগে থেকে বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে জনশক্তি নেয়া শুরু হয়। এখন প্রায় ৭০ হাজারের মতো বাংলাদেশী মালদ্বীপে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য পেশাজীবী রয়েছেন। অন্যদিকে মালদ্বীপে এখন মোট যত সংখ্যক বিদেশী কর্মরত আছেন, এর ৬০ শতাংশই বাংলাদেশী। এ ছাড়া প্রায় শতাধিক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীও পড়াশোনা করছেন সেখানে। এ ছাড়াও জানা যায়, বাংলাদেশী পণ্যের একটি ভাল বাজার হতে পারে মালদ্বীপ। কারণ ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক নিয়মিত ভ্রমণ করেন। কিন্তু তেমন কোন পণ্যই সেখানে উৎপাদিত হয় না, সবই আমদানি করা হয়। বাংলাদেশের পণ্যের গুণগত মান ও মূল্যের কারণে খুব সহজেই তা মালদ্বীপের বাজার দখলে নিতে পারে। তবে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অগ্রগতি হয়নি। দুই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ২০১৩ সালের বছর নবেম্বর থেকে মালদ্বীপ-বাংলাদেশ সরাসরি ফ্লাইট চালু হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক সম্পর্কের অগ্রগতি বাড়ানো সম্ভব বলে অনেকেই মনে করেন। মালদ্বীপের ঢাকা হাইকমিশন বন্ধ হওয়ার পরে বাংলাদেশের সঙ্গে মালদ্বীপের ভিসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ওয়ার্ক পারমিটসহ যাবতীয় কার্যক্রম মালদ্বীপের নয়া দিল্লীর দূতাবাস থেকে সম্পন্ন করা হচ্ছিল। তবে অক্টোবর মাসে মালদ্বীপ সরকার পুনরায় ঢাকায় হাইকমিশন চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুয়ায়ী পহেলা জানুয়ারি থেকে ঢাকায় হাইকমিশন অফিস আবার চালু করা হয়। রাজধানীর বারিধারায় জাতিসংঘ রোডে মালদ্বীপের হাইকমিশন অফিস পুনরায় চালুর পর বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করছেন কূটনীতিকরা। এদিকে জানা গেছে, মালদ্বীপের রাজধানী মালের প্রধান পানি প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্টে এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ফলে সেখানে সুপেয় পানির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রেক্ষিতে মানবিক সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে গত ৭ ডিসেম্বর নৌবাহিনীর একটি জাহাজের মাধ্যমে ১০০ টন বোতলজাত পানি এবং পাঁচটি পানি প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্ট মালেতে পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। এ কারণে মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-মালদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ৩৫ বছরের। ১৯৭৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রথমে দুই দেশের মধ্যে কলম্বোভিত্তিক অনাবাসিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। পরে ১৯৯৮ সালের ৭ আগস্ট মালদ্বীপে বাংলাদেশের মিশন চালু হয়। আর ২০০৮ সালের পহেলা এপ্রিল ঢাকায় মালদ্বীপ দূতাবাস খোলা হয়।
×