ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ বছর আপীল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনাল থাকবে সরগরম

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

এ বছর আপীল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনাল থাকবে সরগরম

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নতুন বছরেও থাকবে সরগরম। একই সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটবে বেশকিছু মামলার। ট্রাইব্যুনালে গত বছরের চেয়ে বেশি রায় আসবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আইনের সংশোধনী বিলটি পাস হলে ২০১৫ সালের প্রথম দিকেই সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে। অন্যদিকে নতুন বছরে দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও ডজন খানেক নতুন মামলা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আপীল বিভাগে কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর রিভিউ নিষ্পত্তির বিষয়টিও এ বছর হবে। পাশাপাশি আলী আহাসান মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলাও আপীল বিভাগে নিষ্পত্তি হবে বলে জানা গেছে। সব মিলিয়ে এ বছর আপীল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনাল থাকবে রায়ের বছর। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর জামায়াতের শীর্ষ ১৪ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে জাামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ ১০ জনের ফাঁসি, একজনের আমৃত্যু কারাদ- ও সাবেক আমির গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদ-াদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলাকালে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফ মারা যাওয়ায় তার মামলার নিষ্পত্তি ঘটেছে। বর্তমানে দুটি মামলা সিএভি রয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের মামলাটি রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে নতুন মামলা আসলেও শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতার মামলা এই মুহূর্তে নেই। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, সামনের বছর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপীল বিভাগেও ট্রাইব্যুনালে বেশ কয়েকটি রায় আসবে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায় হয়েছে। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ হবে। রিভিউ নিষ্পত্তির পর সুপ্রমিকোর্টেও আদেশ বহাল থাকলে চলতি বছরেই কামারুজ্জামানের দ- কার্যকর হবে। একই সঙ্গে ২০১৫ সালে আপীল বিভাগে আরও দুটি মামলার রায় আশা করছি। যে মামলার রায় হবে তার মধ্যে রয়েছে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহাসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী বিলটি পাস হলে আমি মনে করি, পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের হবে। এর বিচারিক কার্যক্রমটি আইনানুগভাবে শুরু হবে। আমি আরও আশা করছি, নতুন বছরে ট্রাইব্যুনালে আরও ৭ থেকে আটটি মামলার রায় হতে পারে। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, নতুন বছরে তদন্ত সংস্থা বেশকিছু মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করবেন। বর্তমানে তাদের হাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রায় ৫০টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি আশা করছি নতুন বছরে কিছু চমক দেয়াও হতে পারে। পাশাপশি নতুন বছরে বেশকিছু মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করবো। বর্তমানে দুট ট্রাইব্যুনালে যাদের বিচার চলছে তাদের মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁন, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার পলাতক সৈয়দ মোঃ হাসান আলী, বিচার শুরু হওয়ার পথে তাদের মধ্যে রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটু, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মোঃ ফোরকান মল্লিক, নেত্রকোনার সাবেক দুই মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোঃ নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মোঃ শামসুদ্দিন আহমেদ। তদন্ত সংস্থা যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তাদের মধ্যে রয়েছে যশোরের জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, যশোরের কেশবপুর উপজেলার রাজাকার কমান্ডার আমিন উদ্দিন, আব্দুল বারী মোড়ল, আব্দুল খালেক, হাসেম আলী, আনছার মোল্লা, মোকছেদ সরদার, কেসমত আলী, আনছার ফকির, আব্দুল বারী ওদুদী, হোসেন আলী, আকবর আলী, আব্দুল আজিজ মোড়ল, আব্দুল গণি শেখ ও ইব্রাহিম কারিগর। চট্টগ্রামের রাউজানের বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের গিকা চৌধুরী, কক্সবাজারের মহসীন হায়দার চৌধুরী, কক্সবাজারের সালামত খান উল্লাহ খান ওরফে আঞ্জুবর ওরফে ‘পঁচাইয়া রাজাকার’, নেত্রকোনার আব্দুল খালেক তালুকদার, ময়মনসিংহের মোঃ রিয়াজ উদ্দিন ফকির, ময়মনসিংহের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজুল্লাহ, গাইবান্ধার আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, খুলনার মোঃ আমজাদ আলী মিনা, রাজশাহীর মোঃ লাহার আলী শাহ, পটুয়াখালীর রুস্তম আলী সিকদার, আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা জামালপুরের আশরাফ হোসেন, নীলফামারীর ইজাহার আহম্মেদ, মোঃ নাসির, মনির আলী ও লিয়াকত আলী। বিদায়ী বছর ২০১৪ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ছয়টি মামলার রায় হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৩ সালে হয়েছে নয়টি মামলার রায়। প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটরবৃন্দ আশা করছেন এবার নতুন বছরেও বেশ মামলার রায় হতে পারে। একই সঙ্গে আরও দুটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলার রায় হয়েছে। যাদের রায় হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃতুদ-), জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদ-), বিএনপির নেতা জাহিদ হোসেন খোকন (মৃুত্যুদ-), সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মোবারক হোসেন খোকন (মৃত্যুদ-) জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার (মৃত্যুদণ্ড) ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম (মৃত্যুদণ্ড)। এর আগে ২০১৩ সালে যাদের দ- দেয়া হয় তাদের মধ্যে রয়েছে, জামায়াতের সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ (মৃত্যুদ-), জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা (আমৃত্যু কারাদ-) (আপীলে মৃত্যুদ-, পরবর্তীতে রায় কার্যকর), জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদ-) আপীলে আমৃত্যু কারাদণ্ড, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ড) আপীল বিভাগেও মৃত্যুদ- বহাল, জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদণ্ড) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ , জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহাসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদণ্ড), বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মৃত্যুদণ্ড), বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম (আমৃত্যু করাদণ্ড) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খান ( মৃত্যুদণ্ড)।
×