ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভালই তো ছিলাম, ওনারা আবার চাঁদতারায় কি দেখে কি ঘটান!

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

ভালই তো ছিলাম, ওনারা আবার চাঁদতারায় কি দেখে কি ঘটান!

সমুদ্র হক ॥ কেমন আছেন! আর ভাল... ভাল নেই। একটা বছর ভালই ছিলাম (দীর্ঘশ্বাস)। ফের শুরু হলো! না জানি এবার কত মিথ্যাচার করে। তাদের সঙ্গীরা আবার কোন চাঁদতারায় কি দেখে কত অঘটন ঘটায়।... এই তুমি কেমন আছো? আমি ভাল নেই জান? তোমাকে ছাড়া একদম ভাল নেই আমি।... কি করে ভাল থাকি আমরা! দেশটা তো ভালই চলছে। রাজনীতিকরা সাধারণ মানুষের পালস না বুঝেই জনগণ মেনে নেবে না বলে প্রলাপ শুরু করেছে। কোনটা জনগণের স্বার্থ তা বোঝার ক্ষমতা নেই তারাই করে রাজনীতি। পরিষ্কার বোঝা যায় ক্ষমতাই তাদের টার্গেট। জনগণ নয়। যাদের আমরা আম পাবলিক বলি তারা আর কত সহ্য করবে! সহ্যের এই সীমা অতিক্রম করার পালা শুরু হলো বলে।... ও কলিম উদ্দিন শহরে যাওয়া যাবি! একটা বছর তো ভালই ছিলা, এখন দেখ তোমার পার্টি তোমার যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। কি করব্য কও যে পার্টি সমর্থন করি সেই পার্টি কি আমাগেরে দিক দেখে! তারা তো আছে আমাগেরক পায়ের তলে পিষে কেমনে ক্ষমতাত যায়। আমরাও বেকুব পাবলিক কলিমুদ্দি ছলিমুদ্দি কিছুই না বুঝ্যে তারগেরে কথা শুনে নাচি।... এই সংলাপগুলোর প্রথমটি সাধারণ মানুষের, দ্বিতীয়টি তারুণ্যের, তৃতীয়টি গ্রামের দুই ব্যক্তির যাদের একজন বিরোধী দল সমর্থন করে। এই তিন সংলাপ স্পষ্ট করে দেয় মানুষের পালস কোন দিকে! মাঠ পর্যায়ের এমন খোঁজখবর না করেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও নীতিনির্ধারকরা রাজধানী ঢাকায় বসে হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন। এমন মন্তব্য করে একজন অধ্যাপক বলেন, দেশের পলিটিশিয়ানরা (রাজনীতিক) এ কোন ধরনের রাজনীতি শুরু করছে। এক বছর আগে (২০১৩ সালে) ডেসট্রাকটিভ রাজনীতি করে দেশের যত বড় ক্ষতি করেছে তার তুলনা হয় না। এই রাজনীতিকদের মানুষ চিনেছে। ফের তারা ৫ জানুয়ারিকে কথিত পুঁজি করে মাঠে নামার পাঁয়তারা করেছে। খেটে খাওয়া মানুষের কথা, তার কোনভাবেই আর হরতালের রাজনীতি চায় না। এমন কি নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন ছাড়া কোন আন্দোলনও চায় না। বিরোধী রাজনীতিকরা যখন কোন কর্মসূচী দেয় (বিশেষ করে হরতাল) তখন তা স্বাভাবিকভাবে মেনেও নেয় না। তবু ভয়ের আশঙ্কায় তারা পালন করে দোকানপাট বন্ধ রেখে। যখন দোকান খোলে তখন তাদের বডি ল্যাঙুয়েজ সাইন ল্যাঙুয়েজ কেউ দেখলে ও শুনলে সহজেই বুঝতে পারবে অস্পষ্ট কথাগুলো। এ জন্য কোন সাইকিয়াট্রির দরকার হয় না। যারা রিক্সা, ভ্যান, টেম্পো, অটোরিক্সা চালায় তারা তো একবারে সরাসরি যা ইচ্ছা তাই বলে পথে যানবাহন নামায়। রাজনীতিকরা কী এই কথাগুলো শুনতে পান! শিক্ষিতজনরা তো বলতে শুরু করেছে বিরোধীদের কোন কনস্ট্রাকটিভ পলিটিকস নেই। তারা বোধকরি ধরে নিয়েছে সরকারকে ফেলে দেয়ার কথা বললেই আম পাবলিক লুফে নেবে। একবিংশ শতকে এত অবাস্তর ভাবনা নিয়ে কি করে তারা রাজনীতি করে! কোন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন নেই। সবচেয়ে বড় অগ্রগতি কৃষি ক্ষেত্রে যার ধারাবাহিকতায় গ্রামের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। গ্রামে এখন কুড়েঘর সহজে চোখে পড়ে না। বেশিরভাগই হয় টিনের না হয় আধাপাকা। কৃষকের খুলিতে (বহির্আঙ্গিনা) গোয়াল ঘর নেই। চাষের জন্য এসেছে পাওয়ার টিলার। গরু এখন ডেইরি ফার্মে। প্রতি ঘরে শ্যালো ইঞ্জিন। ধান কাটার মজুর কমে গেছে। ভাড়ায় হারভেস্টার যন্ত্র এসেছে। যে যন্ত্র মাঠ থেকে ধান কেটে মাড়াই করে বস্তায় ভরে দেয় অতি অল্প সময়ে। যারা মজুর দিয়ে ধান কাটে তারা ট্রেডেল যন্ত্রে মাড়াই করে, প্রতিটি ঘরেই তা আছে। ধান ছেঁটে চাল করার জন্য বাড়ির উঠানেই শ্যালো চালিত ভ্রাম্যমাণ হাসকিং যন্ত্র চলে যায়। উৎপাদিত কৃষি ফসল বিক্রির জন্য টিলারে ট্রলি এঁটে পণ্য তুলে কৃষক নিয়ে যায় হাটে। একদা সার ডিজেলের জন্য যে কৃষক হাপিত্যেশ করত সেই সার ডিজেল চলে গিয়েছে বাড়ির দরজায়। জীবন মান উন্নত হয়ে কিষাণ বধূ অবসরে সেলাই মেশিনে পোশাক বানিয়ে সরবরাহ করে। কেউ সূচীকর্মে কাঁথা সেলাই করে বেচে। বেশিরভাগ গ্রামেই বিদ্যুত পৌঁছেছে। মধ্যম শ্রেণীর কৃষকের ঘরে রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ) কেবল নেটওয়ার্কসহ রঙিন টেলিভিশন আছে। কোন ঘরে ওভেনও আছে। গ্রামের নারী পুরুষ সকলের কাছে মোবাইল ফোন আছে। শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ব্যবহার করে স্মার্ট ফোন ও ল্যাপটপ ট্যাব। স্কাইপি ফেসবুক কি এগুলো তারা জানে। সরকারের ইউনিয়ন তথ্য সেবা ছাড়িয়ে গ্রামে অনেক তরুণ নিজেরাই কম্পিউটার কিনে এই সেবা চালু করে বাড়তি আয় করছে। বেশিরভাগ গ্রামের সড়ক এখন পাকা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় নিকটের শহরের সঙ্গে গ্রামের দূরত্ব এতটাই কমেছে যে তারা শহরের মানুষ বলেই ভাবে। শিক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার গ্রামেও বেড়েছে। শিক্ষতজনরা বিশ্লেষণ করে এভাবে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা যদি রাজধানীর অংশ হয় তাহলে কাছের গ্রাম ও জেলা শহরের পার্থক্য কোথায়। গ্রামে এখন আর সন্ধ্যা বাতির জন্য হারিকেনের চিমনি মুছতে হয় না, লণ্ঠনের সলতে পাকাতেও হয় না। সুইচ টিপেই সন্ধ্যা বাতি জ্বলে। গ্রামের যারা বিদেশ বিভূঁইয়ে আছে তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে অবকাঠামো উন্নত হয়ে জীবন মানে পরিবর্তন এসেছে। গ্রামের মানুষকে ‘খ্যাত’ বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা দিন ফুরিয়েছে। উন্নত গ্রামে আর ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকে না। জোনাকি জ্বলে না। হুঁতুম পেঁচাকেও প্রহর গুনতে হয় না। এত উন্নয়ন কি বিরোধীদের চোখে পড়ে না! এমন মন্তব্য সাধারণের।
×