ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে চায়, খালেদা চান বাসা থেকে বের হতে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রাখতে চায়, খালেদা চান বাসা থেকে বের হতে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামীকাল সোমবার বহুল আলোচিত ৫ জানুয়ারি। ভয়াল সহিংসতা-নাশকতার বন্ধুর পথ পেরিয়ে এদিন গণতন্ত্রের নবযাত্রার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। তবে দিবসটিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। হার্ডলাইনে থেকে এখন মুখোমুখি অবস্থানে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। শাসক দল বলেছে, সোমবার বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে নামতেই দেয়া হবে না। সারাদেশের রাজপথ থাকবে আওয়ামী লীগের দখলে। অপরদিকে পাল্টা হুঙ্কার ছেড়ে বিএনপি বলেছে, যে কোন মূল্যে সোমবার তারা ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেই। বাধা দিলেই পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। দু’দলের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও ২০ দলীয় জোটের পাল্টাপাল্টি আক্রমণাত্মক বক্তব্যে সারাদেশেই জনমনে কিছুটা হলেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ওই দিন রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপি যাতে নামতেই না পারে, সে জন্যও দলটি নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। অন্যদিকে, বিএনপি ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি না পেলেও বিএনপি কালো পতাকা নিয়ে চোরাগোপ্তা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করবে। জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত আগামীকাল সোমবার বিএনপি প্রকাশ্য সভা-সমাবেশ করতে না পারলে দলটির প্রধান খালেদা জিয়া নিজেই বাসভবন থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে অবস্থান নিতে পারেন। এ কারণে ইতোমধ্যে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের খালেদা জিয়ার বসার কক্ষটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তবে দলটির নেতারা যে কোন মূল্যে সোমবার রাজপথ দখলের হুমকি-ধমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির অবস্থা গাজীপুরের মতো হয় কি না, সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন-শঙ্কায় দলটির তৃণমূল নেতারা। সভা-সমাবেশ করতে না পারলে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে এক দিনের হরতাল ডাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। জানা গেছে, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে। স্পর্শকাতর প্রতিটি স্থানে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েনসহ ওই দিন পুরো বাহিনীকে যে কোন ধরনের নাশকতা দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে থাকারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখেও কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এসব এলাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়কে ঘিরেও যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত করতে না পারে, সে জন্য সেই দুটি স্থানেও কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। তবে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে মোটেও শঙ্কিত নয় আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকদের ধারণা, সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন ও হতাশাগ্রস্ত দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে মিডিয়ার মাধ্যমে উত্তাপ-উৎকণ্ঠা ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে তারা যতই হুমকি দিক, ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তির কাছে এক মিনিটও টিকতে পারবে না বিএনপি। জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার-সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপি যদি আগামীকাল কোন ধরনের নাশকতার চেষ্টা করে তবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিক গণপ্রতিরোধ তুলবে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিগত দিনে বিএনপি কিছুই করতে পারেনি, এবার ৫ জানুয়ারিতেও কিছুই করতে পারবে না। বিএনপি শুধু নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে জানে। আমরা যখন দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, তখন বিএনপি আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষের ক্ষতির পাঁয়তারা করছে। তা কোনভাবেই হতে দেয়া হবে না। পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সমাবেশ করব ৫ জানুয়ারি বিকেলে। তাই এখনও অনুমতি না দিলেও অনুমতি দেয়ার সময় আছে। আমরা মনে করি সরকারের বোধোদয় হবে এবং সমাবেশ করতে দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেবে। আর সমাবেশ করার অনুমতি না দিলেও আমরা কাউকে তোয়াক্কা করব না। আমরা পল্টনে সমাবেশ করব। তাতে যদি বাধা দেয়া হয় আমাদের মতো করে আমরা কর্মসূচী পালন করব। বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেবে না আ’লীগ ॥ আগামীকাল ৫ জানুয়ারি রাজপথ দখলে রাখতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। ওই দিন রাজপথের কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের নামতে দেয়া হবে না-এমন প্রস্তুতি নিয়েই সোমবার সারাদেশেই সর্বাত্মক অবস্থান নেবে দলটি। সঙ্গে থাকবে নির্বাচনী জোট ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও। ৫ জানুয়ারি ভোর থেকেই বাইরে থেকে রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বা সন্ত্রাসীরা রাজধানীতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য মহানগরীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারেও দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক প্রহরায় বসাচ্ছে তারা। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মাঠে নামিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব জেলা-উপজেলা-থানা ও ইউনিয়নের রাজপথ দখলে নেবে দলটি। ১৪ দলীয় জোটভুক্ত অন্যান্য দল ও সমমনা সংগঠনগুলোও বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থান নেবেন। আর দুপুর আড়াইটা থেকে রাজধানীর ১৬টি নির্বাচনী এলাকার ১৬টি স্পষ্টসহ সারাদেশে একযোগে বিজয় র‌্যালি, আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করবে তারা। আর ১৬টি স্পটের মধ্যে ঐতিহাসিক সোহ্্রাওয়ার্দী উদ্যানও একটি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। দল ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজধানীর সরকারদলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় এসব কর্মসূচী সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের যে কোন ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতে হার্ডলাইনের মুডে থাকবে আওয়ামী লীগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও থাকবে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে। রাজপথে অবস্থানকালে কোথাও বিএনপি বা তার জোটের নেতাকর্মীরা নামার চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে যেখানেই নাশকতার চেষ্টা করা হবে, সেখানেই শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কাজে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতাও করতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন, বিএনপির হুমকি ধমকি বা আন্দোলন গণমাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভঙ্গুর সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে রাজপথে আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার দুঃসাহস বিএনপি দেখাতে পারবে না। তবুও ৫ জানুয়ারি গোপনে চোরাগোপ্তাভাবে বিক্ষিপ্ত মিছিল বের করে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা নাশকতা চালাতে পারে। এমন ধারণা থেকেই নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, অলিগলিসহ বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় সতর্ক প্রহরায় থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে এসব স্পর্শকাতর এলাকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও রাখা হবে কঠোর অবস্থানে। মহানগর ১৪ দলের সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের কাউকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না। মাঠ থাকবে আমাদের দখলে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বলব- দয়া করে ওইদিন মাঠে নামার চেষ্টা করবেন না। সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করবেন না। কোন ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হলে এর দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ৫ জানুয়ারি বিএনপি বিশৃঙ্খলা করলে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওই দিন টর্চলাইট দিয়েও বিএনপি নেতাদের রাজপথে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যারা ওই দিন বিশৃঙ্খলা করবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। এদের (বিএনপি) শক্তি শেষ হলেও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে রাজপথেই তার দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। আগামীকাল ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই দিন বেলা আড়াইটায় রাজধানীর সোহ্্রাওয়ার্দী উদ্যানসহ ১৬টি স্থানে একাযোগে আনন্দ শোভযাত্রা ও সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। মহানগরীর নির্ধারিত ১৬টি স্পট হচ্ছে- মিরপুর পূরবী সিনেমা হলের সামনে, শ্যামপুর-জুরাইন রেলগেট, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী মাঠ, বাড্ডা-রামপুরা পেট্রোল পাম্প, ধানম-ি ৩২ নম্বর রোড, মিরপুর-১ (গোলচত্বর), লালবাগ, গুলশান, সূত্রাপুর, তেজগাঁও, সবুজবাগ-খিলগাঁও, উত্তরা, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, কাফরুল ও সোহ্্রাওয়ার্দী উদ্যান। এ ছাড়া সারাদেশের সকল মহানগরী, জেলা ও উপজেলায় একই সঙ্গে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পূরবী সিনেমা হলের সামনে সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, ইলিয়াসউদ্দিন মোল্লাহ এমপি। শ্যামপুর-জুরাইন রেলগেটে থাকবেন আহমদ হোসেন, মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, এনামুল হক শামীম, সানজিদা খানম এমপি। ডেমরা-যাত্রাবাড়ী মাঠে থাকবেন বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, হাবিবুর রহমান মোল্লা এমপি। বাড্ডা-রামপুরা পেট্রোলপাম্প এলাকার সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন ক্যাপ্টেন (অব) তাজুল ইসলাম এমপি, একেএম রহমত উল্লাহ এমপি। ধানম-ি ৩২ নম্বর রোডে থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডাঃ বদিউজ্জামান ভূইয়া ডাবলু, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি। মিরপুর-১ (গোলচত্বর) এ থাকবেন প্রবীণ রাজনীতিক আমির হোসেন আমু এমপি, আখতারুজ্জামান, আসলামুল হক এমপি। লালবাগে থাকবেন প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ এমপি, শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মৃণাল কান্তি দাস এমপি। গুলশানে নেতৃত্ব দেবেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, আমিনুল ইসলাম আমিন। সূত্রাপুরে থাকবেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, সুজিত রায় নন্দী। তেজগাঁও এলাকায় সমাবেশে নেতৃত্ব দেবেন কাজী জাফর উল্লাহ, ড. হাছান মাহমুদ এমপি, আব্দুস ছাত্তার। সবুজবাগ-খিলগাঁও এলাকায় থাকবেন নূহ-উল-আলম লেনিন, আবদুর রহমান এমপি, আবদুল মান্নান খান এমপি। উত্তরা এলাকায় থাকবেন এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, কর্নেল (অব) ফারুক খান এমপি। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় নেতৃত্ব দেবেন সতীশ চন্দ্র রায়, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এমপি, কামরুল ইসলাম এমপি। মোহাম্মদপুরে থাকবেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ফরিদুন্নাহার লাইলী, মির্জা আজম এমপি। কাফরুলে থাকবেন ডাঃ দীপু মনি এমপি, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকবেন ওবায়দুল কাদের এমপি, মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ওমর ফারুক চৌধুরী, হারুনুর রশীদ, মোল্লা মোঃ আবু কাওসার, পঙ্কজ দেবনাথ এমপি, শুক্কুর মাহমুদ, সিরাজুল ইসলাম, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সিদ্দিকী নাজমুল আলম। তবে রাজধানীতে নির্ধারিত ১৬টি স্পটের মধ্যে মূল অবস্থান থাকবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরেই। অনুমতি না পেলেও কালো পতাকা মিছিল করবেই বিএনপি ॥ প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করার পরিবর্তে ৫ জানুয়ারি যেকোন মূল্যে রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে গোপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একাধিক কৌশল মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলটির হাইকমান্ড। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি পাবেন না ধরে নিয়েই নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চাচ্ছে তারা। এখানে সমাবেশের অনুমতি পেলে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ঝটিকা সভা-সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে শোডাউন করবে বিএনপি। সমাবেশের অনুমতি না পেলে আগামীকাল রাজধানীসহ বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশের অলিতেগলিতে কালো পতাকা মিছিল করার চেষ্টা করবে তারা। সেটিও সম্ভব না হলে দেশব্যাপী হরতাল ডাকাও হতে পারে। এমন একাধিক পরিকল্পনা নিয়েই গোপন প্রস্তুতি চলছে দলটিতে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কোন কর্মসূচী পালন করবে তা নির্ভর করছে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার একক সিদ্ধান্তের ওপর। ইতোমধ্যেই দল এবং ২০ দলীয় জোট থেকে খালেদা জিয়াকে কর্মসূচী প্রণয়নের জন্য একক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। তবে ৫ জানুয়ারি যেকোন মূল্যে কর্মসূচী পালনের কথা জোরেশোরে উচ্চারণ করলেও শেষ পর্যন্ত এ অবস্থানে থাকতে পারবে কিনা, এ নিয়ে খোদ দলীয় হাইকমান্ডই টেনশনে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচী সফল করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই মোবাইল ফোনে দলের বিভিন্নস্তরের নেতার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং সবকিছু মনিটরিং করছেন। এমনকি সমাবেশ করতে দেয়া না হলেও ওইদিন কোন এক সময় খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে রাজপথে হাজির হবার মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন, এমনটাই দাবি করছে সূত্রগুলো। বাসা থেকে বের হয়ে যেখানে পুলিশী বাধা পাবেন সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি মিডিয়ার বদলে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার অনুসারীদের মাধ্যমে সারাদেশের সকলস্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ক’দিন ধরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে মোবাইল ফোন ও এসএমএসে বার্তা পাঠিয়ে কর্মকৌশল সম্পর্কে অবহিত করছেন। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, জামায়াতসহ অন্যান্য শরিক দল, শিবির, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও ক’জন এনজিও প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া তিনি বিকল্পধারার সভাপতি বি চৌধুরীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচীতে সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্য বি চৌধুরী ইতোমধ্যেই বিএনপির কর্মসূচীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ, ফরহাদ মাজহার ও ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরীসহ কিছু সুশীল সমাজ ও এনজিও প্রতিনিধিও বিএনপির কর্মসূচীতে সরাসরি মাঠে নামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি না দিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যাতে কোনভাবেই গুলশানের বাসা থেকে বের হতে না পারেন সেজন্য তার বাসার সামনে ফের বালুবোঝাই ট্রাক রাখার পরিকল্পনা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি তার গুলশানের বাসভবনের সামনে কোন নেতাকর্মীকেও জড়ো হতে দেবে না পুলিশ। তবে এবার এসব বাধা কোনভাবেই খালেদা জিয়াকে বাসায় আটকিয়ে রাখতে পারবে না বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এবার এমন পরিস্থিতি হলে কিভাবে বাসা থেকে বের হওয়া যায় সে ধররে কর্মকৌশলও নিয়ে রাখা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে দেয়া না হলেও নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে যেন সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া যায় সে ব্যাপারে ডিএমপি কার্যালয়ে দৌড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। গত ক’দিনের মধ্যে বেশ ক’দফা ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়েও এখন পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। শনিবার দুপুরেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টো, দলের প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক ও সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে পুলিশ কমিশনারের সাক্ষাত পাননি। তবে অনুমতির জন্য ডিএমপির দায়িত্বশীল অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু নাশকতার আশঙ্কার কথা বলে অনুমতির বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি ডিএমপি। ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে খালেদা জিয়াকে জনসভা করতে না দেয়ার ঘোষণা শোনার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যেকোন মূল্যে জনসভা করা হবে। এমনকি এমনও বলা হয়েছিল খালেদা জিয়া জনসভার উদ্দেশে গুলশানের বাসা থেকে বের হবেন এবং যেখানে বাধা দেয়া হয় সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এ অবস্থান থেকে পিছু হটে বিএনপি জোট সেদিন গাজীপুরে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় সেদিনের হরতাল ফ্লপ হয়। আর এ কারণে দলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়। এর পর ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেও মাঠে নামেনি দলের নেতাকর্মীরা। যে কারণে এ হরতালটিও সুপার ফ্লপ হয়। এতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মনোবল ভেঙ্গে গেলে ৩১ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করে নেতাকর্মীদের হতাশামুক্ত করার কৌশল নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু এ ৭ দফা ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের হতাশা কাটাতে না পেরে তিনি যে কোন মূল্যে ৫ জানুয়ারির কর্মসূচী সফল করার কৌশল নেন। তবে এ কর্মসূচীর ভবিষ্যত শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মতো হয় কিনা তা নিয়েও দলীয় হাইকমান্ডসহ সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীর মধ্যে সংশয় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
×