ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নের পদ্মা সেতু ॥ ’১৮ সালের মধ্যেই সেতু দিয়ে যান চলবে ॥ আশা সংশ্লিষ্টদে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

স্বপ্নের পদ্মা সেতু ॥ ’১৮ সালের মধ্যেই সেতু দিয়ে যান চলবে ॥ আশা সংশ্লিষ্টদে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ প্রয়োজনে যতবার খুশি ততবারই সংশোধন করা যাবে সেতু প্রকল্প। দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো এবং সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটি করা হবে। তবে এ জন্য বিশেষ সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হবে। সেতু বিভাগ পরিকল্পনা কমিশনের কাছে বিদ্যমান যে আইন রয়েছে তা থেকে (পদ্মা সেতু প্রকল্পের ক্ষেত্রে) অব্যাহতি চেয়েছিল। কিন্তু সেটি না দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশন থেকে। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এর জন্য আলাদা আইনের দরকার নেই এবং অব্যাহতি দেয়ার প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, আমরা চেয়েছিলাম যাতে বর্তমান বিনিয়োগ প্রকল্পের সংশোধনের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা রয়েছে তা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কেননা দেশের সর্বোচ্চ মেগা প্রকল্প হিসেবে কখন এবং কতবার সংশোধনের প্রয়োজন হবে তা আমরা জানি না। তাই সেফ থাকতে চেয়েছিলাম। পরিকল্পনা কমিশন থেকে এখন যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে সেটি নতুন কিছু নয়। এটিও বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যেই আছে। সংশোধনের প্রয়োজন হলে বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন আপত্তি থাকবে না বলেই আশা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের জন্যই আইন। মানুষের প্রয়োজনে যদি সংবিধান সংশোধন হয় তাহলে আইনের সংশোধন কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সেই বিবেচনায় আমরা বিদ্যমান নির্দেশনা থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলাম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প এখন পর্যন্ত একবার সংশোধন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত ২০১৪ সালের ১৪ মে সেতু বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয় সরকারী প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি ব্যবস্থায় বিনিয়োগ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দু’বারের বেশি সংশোধন করা যাবে না। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে অব্যাহতি দেয়া হোক। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৬ জুলাই পরিকল্পনা কমিশন থেকে এ চিঠির উত্তর দেয়া হয়। এতে বলা হয় দুই থেকে তিনবার পদ্মা সেতু প্রকল্প সংশোধন করা যেতে পারে। তবে এ জন্য সরকারের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হবে। তাই বিদ্যমান আইন সংশোধন করে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে অব্যাহতি দেয়ার প্রয়োজন নেই। আগামী বৃহস্পতিবার সেতু ভবনে সেতু কর্তৃপক্ষের ১০৩তম বোর্ড সভা হতে যাচ্ছে। ওই সভায় পদ্মা সেতুর এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক প্রকল্পই রয়েছে একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেটি করা হয় একবার সংশোধনের প্রয়োজন হলে আমরাই করে দিতে পারি। কিন্তু দুই, তিন বা তার বেশি হলে এক্ষেত্রে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) একটি মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে সংশোধন অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়। তবে আমরা চাই প্রকল্পের সংশোধনী যতটা বর্জন করা যায় ততই ভাল। কিন্তু পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যে ঝামেলা গেছে এতে এ প্রকল্প সংশোধন হতেই পারে। সেক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বর্তমান ব্যবস্থা থেকে অব্যাহতির কিছু নেই। সূত্র জানায়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো স্বপ্নের এ সেতু। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় আলোচিত ও বড় হচ্ছে পদ্মা সেতু, এতদিন এটি শুধুই স্বপ্ন হলেও এখন বাস্তবতার কাছাকাছি চলে এসেছে। সেতু কর্তৃপক্ষের ১০৩তম বোর্ড সভার প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মূল পদ্মা সেতুর জন্য নদীর বিভিন্ন স্থানে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই পার মিলে একটি সেনানিবাস স্থাপন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পদ্মা সেতু এলাকায় উভয় পার মিলে একটি ৯৯ ব্রিগেডের সেনানিবাস স্থাপন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে । তাছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতই এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের জাজিরা সংযোগ সড়কের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এ কাজের অগ্রগতি ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, অবকাঠামো নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মাওয়া সংযোগ সড়কের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের জন্য চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো এ কাজ করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথম পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ধাপগুলো শেষ হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নদীশাসনের কাজ পেয়েছে। নদীশাসন কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় নদীশাসন কাজের দর প্রস্তাব করেছিল সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। প্রথম দফায় প্রাক্কলন অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করতে না পারায় নদীশাসনে ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি মূল পদ্মা সেতু ও নদী শাসন কাজ তদারকির জন্য কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের কাজ শুরু প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বাধা দূর হয়। ফলে মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসন চলাকালীন ও নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোরিয়ান কোম্পানিটিকে পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর বা ২০১৮ সালের প্রথম দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় চীনা কোম্পানি চায়না মেজরব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। পদ্মা সেতু বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম পদ্মা সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে জনকণ্ঠকে জানান, বর্তমানে যেভাবে কাজ এগিয়ে চলছে এতে আমরা আশাবাদী ২০১৮ সালের মধ্যেই এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। বর্তমানে আমাদের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ীই কাজ এগিয়ে চলছে। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত দিতে কালক্ষেপণ এবং পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন দ্রুত করতে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন চায় না বলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে সাফ জানিয়ে দেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ই-মেল বার্তায় বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়।
×