ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্বাচলের আশপাশের আগ্রাসন ॥ বোবা কান্না

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

পূর্বাচলের আশপাশের আগ্রাসন ॥ বোবা কান্না

রাজন ভট্টাচার্য/মীর আব্দুল আলীম ॥ ‘জমি দখলকারীদের নাম কইলে রাইত কইরা আইসা ডেগার দিয়া মারবো। মামলা করছিলাম। সন্ত্রাসীদের ভয়ে মামলাও তুইলা নিয়া আইছি। জমি দখলের সামান্য প্রতিবাদ করলেই রামদা নিয়া কুবাইতে আয়ে। নিজের বাপের জমি। দখলকারীদের ভয়ে চাষ করতে পারি না। ইরি-মৌসুম চললেও জমি পতিত পড়ে আছে।’ রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের জনৈক বাসিন্দা এভাবেই নিজের জমি হারিয়ে বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিচ্ছিলেন। কথা বলতে বলতেই এখানে জড়ো হন স্থানীয় অনেক মানুষ। ভূমিদস্যুদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। নাম প্রকাশেও অনিচ্ছুক তারা। কিন্তু সবাই নিজের সম্পত্তি ধরে রাখতে চান। বাঁচতে চান শেষ সহায় সম্বলটুকু নিয়ে। এই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ একটি বিশেষ গ্রুপের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাত করে অল্প জমি কেনে তারা। পরে আশপাশের জমি ভাড়া নিয়ে, কখনও জোর জবরদস্তি করে প্রায় ৬০০ একর জমিতে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে শুরু হবে বালু ভরাট। তারপর প্লট বিক্রি শুরু। মাঝখানে এসব কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে এলাকার মানুষদের। আবাসন বাণিজ্যের কারণে পূর্বাচল প্রকল্পের চারপাশের মানুষের এখন বোবা কান্না। কারও মুখ খোলার সাহস নেই। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর পূর্বাচল প্রকল্পের চারদিকে এখন ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের চিত্র! এলাকায় এরকম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় প্রায় অর্ধশত। অনুমতি ছাড়াই বেশিরভাগ হাউজিং প্রকল্প রমরমা প্লট বাণিজ্যে এখন মরিয়া। আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে বালু দিয়ে ভরাট করছে কৃষি জমি ও জলাধার। স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাত করে সাধারণ মানুষের জমি দখল কিংবা মাটি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। কোথাও কোথাও কিছু কেনা জমিও আছে। এলাকায় যতদূর চোখ যাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড আর সাইনবোর্ড। ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন থেকে বাদ যাচ্ছে না নদীর জমিও। বালু ও শীতলক্ষ্যার বুকে মাটি ভরাট করে হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও হাউজিং। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়েও চলছে ভূমি আগ্রাসন। নাম সর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এসব বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে আদালতের আশ্রয় নিয়েও জমি রক্ষা করতে পারছেন না তারা। বেশ কয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে অফিস দেখা গেলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। জমি দখল ও প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এরকম অভিযোগ প্রায়ই আমাদের কাছে আসে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। শিমুলিয়া গ্রামে সাইনবোর্ডে আজব চিত্র ॥ শিমুলিয়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের মুখে হাসি নেই। দুঃশ্চিন্তায় আছেন তারা। কখন চাষের জমিটুকু বেহাত হয়ে যায়। এই গ্রামে ‘এস এ সূচী’ ও ‘আদর্শ গ্রুপ’-এর সাইনবোর্ডে সয়লাব। তিন কাঠা কেনা জমিতে নয়টি সাইনবোর্ড আছে আদর্শ গ্রুপের। বাকি শত শত সাইনবোর্ড মাসিক ভাড়ায় টানানো হয়েছে। এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয় সাইনবোর্ডের। একটি প্লটে আদর্শ গ্রুপের সাইনবোর্ড আবার পাশের প্লটে সূচী গ্রুপের। এভাবে কৃষি জমি-জলা-জঙ্গল-বাড়ি সবখানেই সাইনবোর্ড আর সাইনবোর্ড। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য সূচী গ্রুপের কেনা জমি বেশি। তোফাজ্জাল, দুলালসহ অনেকেই নিরূপায় হয়ে জমি ভাড়া দিয়েছেন। স্থানীয় সন্ত্রাসী আনোয়ার, জমির ও দুলালসহ অনেকে ভয় দেখিয়ে জমি বিক্রি করানোসহ জমি রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেই তাদের নেতৃত্বেই হামলা হয়। পুলিশের নাম ব্যবহার করে বাণিজ্য ॥ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পুলিশের নাম ব্যবহার করে ‘আনন্দ পুলিশ হাউজিং’-এর রমরমা বাণিজ্য চলছে। কিছু জমি কিনে বাকি জমি দখলের অভিযোগ এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অর্পিত সম্পত্তি দখলের অভিযোগও বিস্তর। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গাজী মোজাম্মেল দীর্ঘদিন এই কাজ করে আসছেন। তাঁর উদ্দেশ্য পুলিশ কর্তাব্যক্তিদের কম দামে প্লট দেয়া। কিন্তু পুলিশকে প্লট দেয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নয়। বাস্তবিক অর্থে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে আবাসন ব্যবসা করছেন তিনি। বেশিরভাগ প্লট সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগের বিষয়ে হাউজিং প্রকল্পের অফিসে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। বেপরোয়া সী শেল প্রপার্টিজ ॥ রাজউকের প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই এলাকায় কিছু জমি কেনে ‘সী শেল প্রপার্টিজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যার মালিক আমান উল্লাহ। স্থানীয় গ্রামবাসী জানিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানটি মানুষের জমি দখল করে বালু ভরাট করছে। সাইনবোর্ড টানানো হচ্ছে নিজের ইচ্ছামতো। অন্যের জমির সীমানা প্রাচীর তুলে ফেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানায় অন্তত শতাধিক জিডি করেছেন স্থানীয় মানুষ। মামলা আছে অন্তত হাফ ডজন। কিন্তু প্রতিকার মিলেছে না। গুথিয়ারো গ্রামের বাসিন্দা এ্যাডভোকেট কবীর হোসেনের অভিযোগ, তাঁর অন্তত ৮১ শতাংশ জমি জোর করে দখলে নিয়েছে সী শেল প্রপার্টিজ। প্রতিকার চেয়ে থানায় জিডি করলেও কাজ হয়নি। উল্টো ভূমিদস্যুরা হত্যার হুমকি দেয়। সাধারণ মানুষের প্রায় তিন কিলোমিটার জমি ইতোমধ্যে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। একই গ্রামের জুলহাস মিয়ে ৫৩ শতাংশ জমি দখল করে নেয়ার অভিযোগ করে বলেন, জমি রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের আইজি, মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ করে কাজ হয়নি। এলাকাবাসী জানান, দেলায়ার হোসেন গং ১০ শতাংশ, কাশেম মিয়ার ২২ শতাংশ, ইকবাল হোসেনের ৪৮ শতাংশ, আলমাস গংদের ৩৫ শতাংশ, হাসেশের ২৬, হোসেন আলীর ৩০ সহ অংখ্য মানুষের জমি জোর করে নিয়ে গেছে সী শেল। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে আছে ১২০ শতাংশ এনিমি প্রপার্টি। প্রকল্পের মোট জমির মধ্যে কেনা মাত্র ২০ ভাগ। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সী শেল প্রপার্টিজের কর্ণধার আমান উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় কিছু মানুষ শত্রুতা করে আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা কারও জমি দখল করিনি। জমি কিনে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। তাছাড়া আমরা কোন প্লট ব্যবসাও করছি না। নিজেদের প্রয়োজনে এই প্রকল্প করা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি কিছু মানুষকে বোঝাচ্ছে আমাদের প্রকল্পের কারণে তাদের জমি বেহাত হয়ে যাবে। এজন্য অনেকেই অভিযোগ করে থাকতে পারেন। যত প্রতিষ্ঠান আছে ॥ রূপগঞ্জের মাওস ও আটাবো এলাকায় কৃষিজমিতে এশিয়ান ডুপ্লেক্স টাউনের নামে বিপুল পরিমাণ সাইনবোর্ড দেখা গেছে। এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ। একটি বাড়ির পুকুর পাড়ে দেখা গেছে পূর্বাচল হোমস গার্ডেন সিটির অফিস। আশাপাশের বাড়ি ঘরে কিছু সাইনবোর্ড। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাটি ভাড়া নিয়ে এসব সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। কাঞ্চন ব্রিজ পাড় হলেই ম্যানশন সিটি, ইস্টুড প্রপার্টিজ, ইউরো স্টার মডেল টাউন, রিজেন্ট টাউন (পূর্বাচল), নিপবন, পূর্বাচল ইস্ট ভিউ সিটি, এনআরবি হোমস (পূর্বাচল)। এলাকাঘুরে দেখা গেছে ৪নং সেক্টরের পাশে ট্রাস্ট পূর্বাচল সিটি, মালুম সিটি। ৩২নং সেক্টরের পাশে সোপান সিটি। এছাড়াও আছে গ্রিন সিটি, কৃষিজমি ও ডোবা ভরাট করে পূর্বাচল আমেরিকান সিটি করা হচ্ছে। এর পাশেই সেপান হোমস ও আশালয় হাউজিং। আশপাশের জমিতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেছে। গ্রামের ভেতরে আছে পূর্বাচল বেস্টওয়ে সিটি, ইউরো বাংলা হাউজিং লিমিটেড, পূর্বাচল মেরিন সিটি, রিডম পূর্বাচল, আদর্শ সিটি, ঢাকা ভিলেজ, ট্রাস্ট পূর্বাচল সিটির সাইনবোর্ড একটু পর পরই চোখে পড়ে। বাড়ি ঘর, দোকানপাট, ব্রিজ থেকে শুরু করে প্রায় সবখানেই বসুকুঞ্জ, আইকন গ্রুপের বিজ্ঞাপন। মাঠের জমিতেও তাদের প্রচারে চোখে পড়ে। কিন্তু মানুষের জমি দখল, ভাড়া সাইনবোর্ডের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেও। ইছাপুরা এলাকায় বালু নদীর ওপর করা হয়েছে, ভুলুয়া রয়েল সিটি। নদীর বুকে জমি ভরাট করে রেড প্রপার্টিজ ও তিশা গ্রুপের বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে দেখা গেছে স্যাটেলাইট টাউন লিমিটেড ও ট্রাস্ট সিটির সাইনবোর্ড। টেকনরদা এলাকায় পিকজেল গ্রুপ আর রাজভ্যালি সিটির বিস্তর সাম্রাজ্য। ডোবা নালা কৃষিজমিতে প্রকল্প করা হচ্ছে। নেয়া হয়েছে অফিসও। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা যায়। তবে সেখানে ঝুলছে তালা। গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, কিছু জমি কিনে কিছু দখল করে এসব প্রকল্প করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পিকজেলের পক্ষ থেকে এলাকায় কেউ আসেন না। জনৈক সিরাজুল ইসলাম রাজভ্যালি সিটির চেয়ারম্যান। রূপগঞ্জের হরিণানদীরপাড় এলাকার বাসিন্দা মোঃ আবদুর রফিক জনকণ্ঠ’কে বলেন, এই বিশেষ বাহিনী রূপগঞ্জকে গ্রাস করেছে। দুই ইউনিয়নের ২৪ মৌজার ৪০ গ্রামের জমি লুট হয়ে গেছে। ১০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে কৃষিজমি। আমার ১০ বিঘা জমির মধ্যে ৬ বিঘা ইতোমধ্যে দখলে চলে গেছে। জমি রক্ষা করতে গিয়ে নিজের সন্তান হারিয়েছি। বিভিন্ন বেসরকারী আবাসন প্রকল্পের নামে রূপগঞ্জের প্রায় নয় হাজার বিঘা কৃষিজমি নানা কায়দার বেহাত হয়েছে। দুই ইউনিয়নের ২৪ মৌজার ৪০ গ্রামের জমি লুট হওয়ার অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। তারা বলছেন, ১০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে কৃষিজমি। জমি রক্ষায় সন্তান হারিয়েছেন কেউ। সংঘর্ষে পঙ্গু হয়েছেন। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব অনেক মানুষ। দখলে যাচ্ছে প্রায় নয় হাজার বিঘা কৃষিজমি ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের চোখে ঘুম নেই দীর্ঘদিন। জমি রক্ষা করতে গিয়ে এলাকার মানুষের মান গেছে। নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। পুলিশি হয়রানি তো আছেই। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তাদের সুন্দর ও সুখী জীবনে দুঃখ নামিয়েছে ‘আশিয়ান শীতল ছায়া হোমস লিঃ’ নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির শীতল আশ্রয়ে মানুষের জীবনে কোন প্রশান্তি আসেনি। উল্টো নেমেছে দুর্যোগ আর দীর্ঘশ্বাস। সাধারণ মানুষের কথা শোনারও কেউ নেই। পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই যেন স্রোতের বিপরীত হাঁটছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, আশিয়ান শীতল ছায়া হোমস লিঃ এর পক্ষ থেকে ‘বালু’ নদীর পাড় থেকে ভেতরের দিকে পর্যায়ক্রমে বালু ভরাট করা হয়। এই এলাকার ১২টি মৌজার প্রায় নয় হাজার বিঘা জমিতে দ্রুত ভরাট করে তারা। এক সময় এই জমিতে প্রচুর ফসল আবাদ হতো। হতো রবিশস্য। অনেক জমিতে চাষ হতো সবজি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ছিল কৃষি। সূত্রে জানা গেছে, জলাশয় দেখিয়ে প্রকল্প স্থাপনের অনুমতি নেয় আশিয়ান। এই জমিতে বিঘাতে ৩০ মণের বেশি ধান চাষ হতো। একপর্যায়ে আশিয়ানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মামলা করে। পরবর্তীতে জলসিঁড়ি ও আর্মি হাউজিং প্রকল্পের সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়। এই প্রেক্ষাপটে মামলা খারিজ করে দেয় আদালত। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কিছুই পাননি। ক্ষমতাসীনদের কাছে অসহায় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টির বেশি পরিবার। নিজের পৈত্রিক ভিটাটুকু রক্ষা হবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই রূপগঞ্জের কয়েতপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের। ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর সরকার জনকণ্ঠ’কে বলেন, আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা রীতিমতো অসহায়। যতই দিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের জমি বেহাত হচ্ছে। এলাকাবাসী এখন ভূমিদস্যুদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। কারও কিছু বলার সাহস নেই। কারণ জমি রক্ষা করতে গিয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। তিনি জানান, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওরা, গজারিয়া, মসুরী, দক্ষিণবাগ, গাজিয়াপুর, বাড়িয়াদনি, হরিনা, রূপগঞ্জসহ আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষের জমি নির্বিচারে একটি হাউজিং প্রকল্পের নামে দখল করা হচ্ছে। জমি দখল শেষে আমাদের বাড়িঘর দখলের চেষ্টা চলছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো আমাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা।
×