ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্জিন ঋণের লোকসানী পোর্টফলিওতে লেনদেনের সময় বাড়ল

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

মার্জিন ঋণের লোকসানী পোর্টফলিওতে লেনদেনের সময় বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজারের স্বাভাবিক লেনদেনে মার্জিন ঋণ গ্রাহকদের লোকসানী পোর্টফোলিওতে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার ফিরিয়ে আনতে চাইছে সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য মার্জিন ঋণ বিধিমালার একটি উপবিধির কার্যকারিতা স্থগিতাদেশের মেয়াদ পঞ্চমবারের মতো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, মার্জিন ঋণ বিধিমালা, ১৯৯৯-এর ৩(৫) উপধারার কার্যকারিতা স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত সুবিধাটি বহাল রাখা হচ্ছে। ২০১০ সালের বাজার ধসের পর শেয়ার দর কমে যাওয়ায় গ্রাহকের নিজস্ব ইক্যুইটি মার্জিন ঋণের ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ায় হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার কার্যত লেনদেন অযোগ্য হয়ে পড়ে। ঋণাত্মক ইক্যুইটি ঋণ অনুপাতের পোর্টফোলিওতে শেয়ার বিক্রি করলেই ব্রোকারকে তা থেকে মার্জিন ঋণ সমন্বয় করে নিতে হচ্ছিল। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্জিন ঋণ বিধিমালা, ১৯৯৯-এর ৩(৫) উপধারা স্থগিত রাখে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর মার্জিন পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ারগুলো ফের লেনদেনযোগ্য হয়। বাজার পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হওয়ায় ঋণাত্মক ইক্যুইটিতে থাকা বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ লোকসান কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। মার্জিন ঋণ বিধিমালার ৩(৫) উপধারা অনুযায়ী, শেয়ার দর কমে যাওয়ার কারণে গ্রাহকের নিজস্ব ইক্যুইটি মার্জিন ঋণের ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমলে গ্রাহক নগদ অর্থ দিয়ে ঋণ সমন্বয় করবেন। সহজ ভাষায় গ্রাহকের পোর্টফোলিও (১:২ মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে) অর্ধেকে নেমে এলে ঋণ সমন্বয় করতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট হিসেবে নতুন করে শেয়ার লেনদেন করা যাবে না। আইন থাকলেও ২০১০ ও ২০১১ সালের বাজার ধসের কারণে অধিকাংশ গ্রাহক নগদ অর্থ দিয়ে ঋণ সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়। আর সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুরোধে সে সময় ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ আদায়ে জোর করতে পারেনি। ফলে ফোর্সড সেল না করায় মার্জিন ঋণ নেয়া গ্রাহকের পোর্টফোলিও ঋণাত্মক হওয়ায় তা লেনদেন অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন অযোগ্য হওয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। ডিএসইর দৈনিক লেনদেন নেমে আসে ১৫০ কোটি টাকার ঘরে। বিএসইসি মার্জিন ঋণ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট উপবিধিটি স্থগিত করায় মার্জিন ঋণে আটকে পড়া বিনিয়োগকারীর হিসাব সচল হয়, যা বাজারের লেনদেনের গতি ও শেয়ার দর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ডিএসইর লেনদেন বর্তমানে হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রসঙ্গত মার্জিন ঋণ বিধিমালা, ১৯৯৯-এর ৩(৬) উপধারায় গ্রাহকের নিজস্ব ইক্যুইটি মার্জিন ঋণের ১২৫ শতাংশ কমলে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকের পোর্টফোলিও পরিচালনায় ডিসক্রিশনারি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর ১৫০ শতাংশ দর হারানোর পর গ্রাহককে না জানিয়েই শেয়ার বিক্রির (ফোর্স সেল) ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ওই আইনে গ্রাহকের নিজস্ব ইক্যুইটি যদি মার্জিন ঋণের ১২৫ শতাংশ কমে, তবে ব্রোকারেজ হাউজকে ডিস্ক্রিশনারি ক্ষমতা পেতে পারে। তবে বিএসইসির নির্দেশনায় কোন গ্রাহকের ইক্যুইটি ঋণাত্মক হলেই ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক এ ক্ষমতা পাবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সাল পর্যন্ত শেয়ারবাজারে ১৫ হাজার কোটি টাকা মার্জিন ঋণের সিংহভাগই দেয়া হয় মাত্র দুই হাজার গ্রাহককে। মোট মার্জিন ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশ বা ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন দেড় হাজার গ্রাহক।
×