ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুন্দরবন

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৫

সুন্দরবন

তেল নিঃসরণে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও জলজসম্পদের ভারসাম্য যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল বাস্তবে ততটা হয়নি- সরকার ও জাতিসংঘের যৌথ পর্যবেক্ষণ দলের প্রতিবেদনে এরকম ইঙ্গিত মানুষের মধ্যে স্বস্তি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে তেল নিঃসরণের প্রভাব নিরূপণে আরও দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। বুধবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি শ্যালা নদীতে তেল নিঃসরণের দুর্ঘটনায় সরকার ও জাতিসংঘের যৌথ পর্যবেক্ষণের এই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সুন্দরবনে দৃশ্যত প্রভাব পড়েনি- প্রতিবেদনের সারকথা এরকমই। সরকার ও জাতিসংঘের যৌথ পর্যবেক্ষণ দলের প্রধান এ্যামেলিয়া ওয়ালস্টর্ম প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, তেল নিঃসরণের ঘটনায় বনের ম্যানগ্রোভ ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর বড় ধরনের প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে দেখা যায়নি। তবে এ প্রভাব নিরূপণে ধারাবাহিক ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ বনে প্রাযুক্তিক ও মানবসৃষ্ট ঝুঁকি শূন্যভাগে নামিয়ে আনতে সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরী। গত ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ একটি ট্যাঙ্কার ডুবে যায়। ট্যাঙ্কডুবির ঘটনায় পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়ে। দুর্ঘটনাস্থলের উজান ও ভাটির প্রায় ৪০ কিলোমিটার জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তেল। ঘটনাটি দেশের বাইরেও নানা কারণে আলোচিত হয়। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও পরিবেশ কর্মীরা সুন্দরবনকে রক্ষায় এগিয়ে আসে। শ্যালা নদীতে ট্যাঙ্কার ডুবে যাওয়ার পর বড় দাগে প্রশ্ন ওঠে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার চলাচল নিয়ে। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের অংশের সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালে জলজ পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। তেল নিঃসরণের এই দুর্ঘটনা সুন্দরবনকে ঘিরে রাখা খালসমূহে জলজ পরিবহন নিষিদ্ধের বিষয়টি তীব্র করে। ২২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালায়। পর্যবেক্ষণ দলের প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও জলজ প্রাণীর বাস্তুতন্ত্রের (খাদ্য গ্রহণ ও সংস্থান প্রক্রিয়া) ওপর প্রভাব সীমিত। স্থানীয় জনসাধারণের তৎপরতা, দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে শ্যালা নদীতে ট্যাঙ্কার চলাচল নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ এবং সর্বোপরি জোয়ার-ভাটার পরিবর্তন পরিস্থিতির অনুকূলে থাকায় বাস্তুব্যবস্থার মধ্যে তেল অনুপ্রবেশের সুযোগ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। নদীতে পানি কম হওয়ায় দুর্ঘটনার পর নিঃসৃত তেল বনের ভেতরের অংশে প্রবেশ করতে পারেনি। এদিকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় উক্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা ও এর প্রভাব দূর করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মংলা-ঘষিয়াখালী খালটি দ্রুত সংস্কার করে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার ওপরও সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সুন্দরবনের সৌন্দর্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনামকে তুলে ধরছে। এই সুনামের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যেমন সরকারের কাজ তেমনি ব্যক্তি পর্যায়েও সচেতনতা জরুরী।
×