ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

মিল কারখানার বিষাক্ত  বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা

মোঃ খলিলুর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ॥ মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি অহরহ শীতলক্ষ্যায় ফেলা হচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী শীতলক্ষ্যা নদী আজ মারাত্মক দূষণের কবলে হাবুডুবু খাচ্ছে। শীতলক্ষ্যার পানি এখন কালচে রং ধারণ করেছে। কারণ নদীর উভয় তীরে গড়ে ওঠা অসংখ্য মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, রং ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানিতে শীতলক্ষ্যা নদী আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ফলে শীতলক্ষ্যার ঐতিহ্য আজ হারিয়ে ফেলেছে। নদীর তীরে মিল-কারখানা থেকে পাইপ, খাল ও ড্রেনেজের মাধ্যমে বিষাক্ত বর্জ্য, রং ও কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি, ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানির রং ততটা কালচে দেখা না গেলেও শুষ্ক মৌসুমে স্পষ্টই কালচে রং দেখা যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, খবর নিয়ে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ সদর ও ডেমরাসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় তীরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অয়েল মিল, সিমেন্ট, ডাইং ও নিটিং, পেপার মিল, ছাপা কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের মিল-কারখানা। এসব এলাকার অধিকাংশ মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি, কেমিক্যাল, রং মিশ্রিত পানি, পাইপ, ক্যানেল, ড্রেনেজের মাধ্যমে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে শীতলক্ষ্যার পানির রং পাল্টে গেছে। দূষিত হয়ে পড়েছে পানি। হারিয়ে যাচ্ছে জলজ প্রাণী। বিষিয়ে তুলেছে শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরের পরিবেশ। এ ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকেও ড্রেনেজের মাধ্যমে ময়লাযুক্ত, কেমিক্যাল ও রং মিশ্রিত পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। কাঁচপুরের জেলেরা জানায়, ময়লা-আবর্জনা ও মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এখন আর শীতলক্ষ্যা নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। কারণ এই নোংরা ও বিষাক্ত পানিতে কোন জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সম্ভবনা থাকে না। এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্টের অভ্যন্তরে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের অসংখ্য মিল কারখানা। ডিএনডির অভ্যন্তরের মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ডাইং মিলের রং মিশ্রিত পানি, ময়লা-আবর্জনার নর্দমার পানি শিমরাইলের ডিএনডি পাম্প হাউস দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এর প্রভাবে কাঁচপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পানির সব সময় কালচে রং দেখা যায়। ডিএনডির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ডিএনডি’র অভ্যন্তর থেকে প্রতিবছর আনুমানিক ৩শ’ কোটি কিউসেক পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে নিষ্কাশন করা হয়। তা অধিকাংশই নোংরা ও মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি। যা শীতলক্ষ্যার পানিকে দ্রুত করতে আরও সহায়তা করছে। দিন দিন বেড়েই চলছে শীতলক্ষ্যার দূষণের প্রক্রিয়া। অথচ শীতলক্ষ্যা দূষণ রোধকল্পে কেউ এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ করেন অভিজ্ঞ মহল। ফলে ঐতিহ্যবাহী ও শান্তিপ্রিয় শীতলক্ষ্যা দিন দিন মুমূর্ষু হয়ে পড়ছে। জেলেদের অভিযোগ, শীতলক্ষ্যাকে যুগ যুগ ধরে দূষিত করছে এমন শিল্প কারখানাও রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর ঐ সকল শিল্প কারখানাকে মাঝে মধ্যে জরিমানা করছে ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ রোধ করা যাচ্ছে না।
×