মঙ্গলবার প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার দুই ক্ষেত্রেই পাসের হার কমেছে। কমেছে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এবার প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৭.৯২ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৫.৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন আর ইবতেদায়ীতে ছয় হাজার ৫৪১ জন। অন্যদিকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট জেএসসি ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট জেডিসি পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৯০.৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী। জেএসসি-জেডিসি মিলিয়ে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ জন। তারপরও এই ফল ইতিবাচক। বলা যায়, শিক্ষা ক্ষেত্রে এ দেশের শিশু-কিশোরদের জীবনের আরও একটি সাফল্যগাথা বছর অতিবাহিত হলো। বিষয়টি অবশ্যই সবার জন্য একটি আনন্দের সংবাদ। পরীক্ষায় সাফল্য সবারই কাম্যÑসেটা যে স্তরেরই হোক। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা ধরনের সামাজিক প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও এবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় যে ভাল ফল করছে, এটা আনন্দের খবর।
প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া সার্টিফিকেট হাতে তুলে দিলে পরে তা সম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হতে পারে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রাথমিক ও জুনিয়র স্তরে এভাবে পাবলিক পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি-না। এর পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি হয়ত রয়েছে কিন্তু প্রশ্নটির যথার্থ উত্তর খুঁজে বের করার দরকার। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের অভিনন্দন। এ ফল যাতে আগামী দিনের লেখাপড়ায় প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে, অভিভাবকরা সেদিকে দৃষ্টি দেবেন অবশ্যই। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের অভিভাবকদেরও হাল ধরে রাখতে হবে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্তর থেকে ঝরে পড়ার হার এখনও উল্লেখযোগ্য। অকৃতকার্যতা যেন ঝরে পড়ার কারণ না হয় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা দরকার।
কয়েক বছর ধরে বছরের শুরুর দিনটিকে বই উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। এবারও হরতাল উপেক্ষা করে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ৩৩ কোটি পাঠ্যবই বিতরণের অন্যরকম এক উৎসব। শিক্ষার্থীরা নেচে গেয়ে, বেলুন আর কাঠির মাথায় বাঁধা রঙিন ফিতা উড়িয়ে শামিল হয় এ উৎসবে। নতুন বই বুকে জড়িয়ে বাড়ি ফিরেছে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। বই পেয়ে তারা আনন্দে উচ্ছ্বসিত। রাজধানীসহ দেশের কোথাও শিশুদের এ উৎসবের আনন্দকে ম্লান করতে পারেনি জামায়াতের হরতাল। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে ঝকঝকে নতুন পাঠ্যবই। বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ছিল এমন এক উৎসব। এ উৎসব চলবে সপ্তাহজুড়ে। এক সময় নতুন বই সংগ্রহ করতে অভিভাবকদের দিনের পর দিন গলদঘর্ম হতে হতো। এখন সেখানে বছরের প্রথম দিনেই শুরু হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাবর্ষ, যা শিক্ষার্থীদের আলাদা প্রেরণা যোগায়। আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য, বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে শুধু বই তুলে দিলেই হবে না, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে চাই দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকও। বলতে দ্বিধা নেই, এখনও সব পর্যায়েই দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে গ্রামের সঙ্গে শহরের ফারাকটা চোখে পড়ার মতো। শহরের শিক্ষার্থীর সঙ্গে গ্রামের শিক্ষার্থীর মানের পার্থক্য কাম্য হতে পারে না। দেশব্যাপী সব শিক্ষার্থী যেন এক মানের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে সেটা নিশ্চিত করা দরকার।
শীর্ষ সংবাদ: