ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সমাজবান্ধব পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

সমাজবান্ধব পুলিশ

সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর জনগণ যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফা পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা ঠিক যে যত দিন যাচ্ছে ততই পুলিশের একাংশের ভেতর বিচিত্র ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। অবহেলা, অনিয়ম, হয়রানি এবং আইনের সীমা লঙ্ঘনÑ এসব তো রয়েছেই। উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগও প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক। কোন কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণের মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। দুষ্টের দমনে যাদের কাজ করার কথা তারা যদি নিজেরাই দুষ্টচক্র হয়ে ওঠে তাহলে বিষয়টি দাঁড়ায় রক্ষক হয়ে ভক্ষকের সমতুল্য। তবে সামাজিকভাবে দুর্নামের ঢোলই বেশি বাজে; প্রশংসনীয় ভূমিকা চাপা পড়ে যায়। নিকট অতীতে অপরাধ দমনে পুলিশের চ্যালেঞ্জ বহুলাংশে বেড়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ অপরাধীর পেছনে ছোটেÑ পুলিশের পেশার এই বৈশিষ্ট্যের দিকে সমাজে সবার সহানুভূতির দৃষ্টি এক নয়। হরতাল-অবরোধ আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলের সহিংসতার শিকার হচ্ছে পুলিশও। গত বছর পাঁচই জানুয়ারি নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি ও তাদের মিত্র জামায়াত পুলিশকে তাদের সহিংস আক্রমণের প্রধান লক্ষবস্তু করে তুলেছিল। বুধবারের হরতালের সময় বরিশাল শহরে শিবির ক্যাডাররা এক পুলিশ কনস্টেবলকে কামড়ে গুরুতর আহত করেছে। এ ধরনের বাধা উজিয়েই পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখায় সক্রিয় হতে হচ্ছে। কোন দেশের পুলিশ নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান ও সেবা প্রদানে কতটা আন্তরিক, তার ওপর ভিত্তি করে সে দেশের গণতান্ত্রিকতা ও সভ্যতা পরিমাপ করা যায়। পুলিশের ভেতর পেশাদারিত্বের কিছুটা সঙ্কট বিদ্যমান। তাছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার পেছনে একটি কারণ বেশি দায়ী। তা হলো পুলিশকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী চলছে ১৮৬১ সালের পুলিশ এ্যাক্ট দিয়ে। ১৫৩ বছর পর তা বদলে ‘পুলিশ আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাসতিনেক আগে পুলিশ আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এতে উন্নত রাষ্ট্রের পুলিশের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু ধারা রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে- এতদিন কোথাও কোন ঘটনা ঘটলে সাধারণ মানুষকে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হতো। এবার পুলিশকেই নিজ উদ্যোগে সাধারণের খোঁজখবর রাখতে হবে। চাকরিতে থাকাকালে কোন পুলিশ সদস্য অপরাধের সঙ্গে জড়ালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সবই ইতিবাচক। গত বছরের মার্চে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছিলেন। জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক; পুলিশ হয়ে উঠুক সমাজবান্ধবÑ এটাই নতুন বছরের প্রত্যাশা।
×