ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণের ক্লাব লিভারপুল ছাড়ছেন জেরার্ড

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

প্রাণের ক্লাব লিভারপুল ছাড়ছেন জেরার্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শিশুবয়স থেকেই লিভারপুলের আস্থানায় যোগ দেন স্টিভেন জেরার্ড। বয়স যখন সাত বছর তখনই দুরন্ত শিশুটির উপর নজর পড়েছিল দ্য রেডসদের। লিভারপুলের স্কাউটে সুযোগ পাওয়া সেই কিশোর দুই বছর পর পা রাখেন লাল দুর্গে। এরপর একাডেমি জীবন শেষে নাম লেখান লিভারপুলের যুব দলে। সেটা ১৯৮৭ সালের ঘটনা। এরপর এক বছর বাদেই সুযোগ হয় দ্য রেডসদের মূল দলে। সেই থেকে অবিরাম, অপ্রতিরোধ্যভাবে ছুটে চলা। আর কিছুই ভাবেননি নিপাট এই ভদ্রলোক। প্রায় তিন দশকের পেশাদারী ক্যারিয়ারে পুরো সময়জুড়েই ছিলেন এ্যানফিল্ডের মধ্যমণি হয়ে। খেলেননি আর কোন ক্লাবে। সঙ্গতকারণেই পরিপূরক হয়ে উঠেছিল জেরার্ড আর লিভারপুল নামটি। সেই জেরার্ড অবশেষে ঘোষণা দিয়েছেন, প্রাণের ক্লাব লিভারপুল ছাড়ার। ৩৪ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার শুক্রবার আবেগী এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আসছে মে মাসে ৩৫ বছরে পা রাখবেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক জেরার্ড। লিভারপুলের সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ আছে চলতি মৌসুম পর্যন্ত। বিভিন্ন ইংলিশ সংবাদমাধ্যম ধারণা করছে, জেরার্ডকে আগামী নবেম্বর পর্যন্ত দলের হয়ে খেলতে প্রস্তাব দিয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার ক্লাবের কোন একটি দলে খেলতে আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, ২০০৩ সালে লিভারপুলের অধিনায়ক হওয়া জেরার্ড তার নতুন সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে লস এ্যাঞ্জেলেস গ্যালাক্সির হয়েই তাকে মাঠে দেখা যেতে পারে বলেও জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো। নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে জেরার্ড বলেন, এটি হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত। ক্লাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি আরও বলেন, অবশ্য আমি খেলা ছাড়ছি না। তবে এই মুহূর্তে আমি জানি না কেথায় গিয়ে নোঙ্গর করব। শুধু এটিই বলতে পারি- সেটি হবে অন্য কোথাও। তবে এখানকার প্রতিদ্বন্দ্বী কোন ক্লাব নয়, অর্থাৎ লিভারপুলের বিরুদ্ধে খেলবে এমন কোন ক্লাব নয়। সম্প্রতি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল এ্যানফিল্ড ছাড়তে পারেন জেরার্ড। এ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এখন তার পরিকল্পনার কথা ঘোষণার কারণ হচ্ছে ভবিষ্যতে যেন এ নিয়ে কোন বিভ্রান্তি না ছড়ায়। জেরার্ড বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমাকে ও আমার পরিবারকে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি এখন এই ঘোষণা দেয়ার কারণ হচ্ছেÑ কেউ যেন আমার ভবিষ্যত নিয়ে কোন কাল্পনিক গল্প ছড়াতে না পারে। যেন আমার কোচ ও ক্লাব কেউ এটি নিয়ে বিভ্রান্ত না হন। জীবনের সবটুকু জুড়েই যে লিভারপুল আছে সেটাও নির্দ্বিধায় জানিয়েছেন। বলেন, আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে লিভারপুল ফুটবল ক্লাব। যে কারণে এটিকে বিদায় বলাটা বেশ কঠিন। তবে আমার মনে হয় আমার পরিবার এবং ক্লাব সবার স্বার্থের কথা বিবেচনা করলে এটির একটি গুরুত্ব রয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ইংল্যান্ড জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়া তারকা এই মিডফিল্ডার বলেন, আমার ইচ্ছা এবং আকাক্সক্ষার ওপর ভিত্তি করেই এই সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। কারণ আমি এখন আমার জীবন ও ক্যারিয়ারের ভিন্ন একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। আমি এটিও নিশ্চিত করে বলতে চাই যে, বাস্তবিক অর্থে এর ফলে আমার ক্যারিয়ারের ইতি ঘটলেও এ জন্য আমার কোন আক্ষেপ নেই। দীর্ঘ সময়জুড়ে ক্লাবে ভাল সময় কাটানোর জন্য তিনি কোচ ব্রেন্ডন রজার্স, ক্লাবের মালিক, সতীর্থসহ সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেরার্ডের ভাষ্য, এটি আমার কাছে বিশেষ একটি জায়গা। একদিন হয়ত আমি আবারও লিভারপুলে ফিরে ক্লাবটিকে আরও কিছু দেব। এটিই আমার মনের একান্ত বাসনা। ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দিলেও বাকি সময়টুকু দলের হয়ে উজাড় করেই দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, একটি কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে এখন থেকে লিভারপুলের হয়ে মৌসুমের শেষ ম্যাচটি পর্যন্ত মনপ্রাণ উজাড় করে খেলতে পিছপা হব না। লিভারপুলের জয়ের জন্য আমি আমার সামর্থ্যরে সবটুকুই উজাড় করে দেব। বিদায়বেলায় জেরার্ড বলেন, একজন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে আমি আপনাদের অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি। আমি প্রতিটি মুহূর্ত আপনাদের সমর্থন পেয়ে এসেছি। এই অবস্থানে থেকেই আমি লিভারপুলের ক্যারিয়ার ও বর্তমান মৌসুমের ইতি ঘটাতে চাই। ১৯৯৮ সালে মূল দলে অভিষেকের পর লিভারপুলের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬৯৭ ম্যাচ খেলেছেন জেরার্ড। গোল করেছেন ১৮০টি।
×