ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্লাব ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরাই সেরা, অভিমত শেখ জামাল ধানমণ্ডির অধিনায়ক নাসির উদ্দিন চৌধুরীর

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে চমক দেখাবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে চমক দেখাবে বাংলাদেশ

রুমেল খান ॥ ‘অতীত হচ্ছে অতীত। সামনের দিনগুলো যেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য ভাল হয়, সে প্রত্যাশাই করছি। ডে বাই ডে আমরা যত খেলব, ততই আমাদের খেলার মানের উন্নতি হবে। আশা করি বঙ্গবন্ধু কাপে আমরা ভালই খেলব। দেশের মানুষকে ভাল কিছু উপহার দিতে আমরা নিজেদের উজাড় করেই খেলব।’ কথাগুলো নাসির উদ্দিন চৌধুরীর। শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেডের নতুন অধিনায়ক। ক’দিন আগে ভুটানে গিয়ে মর্যাদাকর ‘কিংস কাপ’-এর শিরোপা জয় করে শেখ জামাল। তখন দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন নাসির। কিংস কাপ জেতার মাধ্যমে মৌসুম-সূচক ঘরোয়া আসর ‘ফেডারেশন কাপ’ এর জন্য প্রস্তুতিটা ভালমতোই সেরে নেয় মারুফুল হকের শিষ্যরা। এই টুর্নামেন্টে জামাল গ্রুপ পর্বে ভুটানের ড্রুক ইউনাইটেড ক্লাবকে হারায়, থাই ক্লাব নাখোন রাতচাসিং মাজদার সঙ্গে ড্র করে ও ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে জেতে। সেমিতে নেপালের মানাং মার্শিংয়াদী ক্লাবকে হারায়। দেশের বাইরে এর আগে ২০১১ সালে নেপালে সাফাল পোখারা কাপ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল শেখ জামাল। ২০১৪ সালে ভারতের কলকাতায় আইএফএ শিল্ড কাপের রানার্সআপ হয় তারা। কিংস কাপের সুদৃশ্য ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরে তাতে চুমু খাবার সৌভাগ্য অর্জন করেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাসির উদ্দীন চৌধুরী। এই শিরোপা জেতার মাধ্যমে সাফ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবশক্তি হিসেবে নিজেদের নামটি খোদাই করে ফেলে জামাল। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জামালের নাম-ডাক শুনে তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে ঢাকায় আসে দক্ষিণ কোরিয়ান ক্লাব বুসান আই পার্ক। শক্তিশালী এই দলের কাছে ০-২ গোলে হেরে গেলেও জামালের আক্রমণাত্মক খেলা সবার প্রশংসা কুড়ায়। কিংস কাপের শিরোপা জেতার গল্পটা কেমন? নাসির বলেন, ‘প্রথম ম্যাচ থেকেই আমরা ছিলাম মানসিকভাবে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। প্রতিটি ম্যাচকেই নিয়েছিলাম চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আরেকটা সুবিধা পেয়েছিলাম, দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার আগে সাতদিনের একটা গ্যাপ। এ সময়টায় নিজেদের আরও শাণিত করার পর্যাপ্ত সময় পাই। যা পরে কাজে লেগেছে।’ শেষ চারের দ্বৈরথে সতীর্থ সোহেল রানার লাল কার্ড পাওয়াটা দলের জন্য কতটা নেতিবাচক ছিল? ‘সেমিতে সোহেল রানা ও ফাইনালে ম্যাচ শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে জামাল ভূঁইয়ার লাল কার্ড প্রাপ্তিতে আমরা মোটেও ঘাবড়ায়নি বা চাপে পড়িনি। কেননা, শেখ জামাল এমনই একটি দল, যে দলে প্রতিটি প্লেয়িং পজিশনেই থাকে একাধিক দক্ষ বিকল্প খেলোয়াড়।’ ফাইনালে ইয়াসিন গোল করে ওয়েডসনের কর্নার থেকে হেডে। যদিও ইয়াসিন হচ্ছেন ডিফেন্ডার। নাসিরও তাই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা কোচেরই প্ল্যান, যা আমি ও ইয়াসিন বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি সবসময়। কর্নার নেয়ার সময় আমরা দুজনই ওপরে উঠে যাই এবং গোল করার চেষ্টা করি। ফাইনালে ইয়াসিনের সেই চেষ্টা কাজে দেয়।’ নিয়মিত দলনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম ভুটানে দলের সঙ্গে যেতে পারেননি ভারতের কলকাতায় ইন্ডিয়ান সুপার লীগে এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার হয়ে খেলার কারণে। এ কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয় ১৯৭৯ সালে জন্ম নেয়া চট্টগ্রামের ছেলে (এখন রাঙ্গুনিয়া নিবাসী) নাসিরকে, এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘কিংস কাপে ক্যাপ্টেন্সি উপভোগ করেছি। দলের সবাইকেই বলেছি, আমি না, দলের সবাই ক্যাপ্টেন। তাই সবাইকেই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। খেলতে হবে দলের জন্য। মনে হয় আমি দলের সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছি।’ আরেকটা ব্যাপারও ভাল খেলতে উদ্দীপ্ত করেছে নাসিরবাহিনীকে, ‘যদিও এটা ছিল একটি ক্লাব টুর্নামেন্ট। কিন্তু একপর্যায়ে এটা হয়ে যায় বাংলাদেশ বনাম ভারতের ফুটবল দ্বৈরথ। ওদের মোহনবাগান, পুনে এফসি, বাংলাশের শেখ জামাল ও ঢাকা আবাহনী। আমরা ক্লাব নয়, দেশের দল হিসেবে খেলেছি। দেশের ফুটবলের মান-মর্যাদার কথা ভেবেছি।’ দলের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে কোচ মারুফুল হকের অবদান কতটা? ‘কোচ হিসেবে তিনি কেমন, সেটা পরে বলছি। মানুষ হিসেবে তিনি কেমন, সেটাই বরং আগে বলি। আমি আমার জীবনে এমন ভাল মানুষ খুব কমই দেখেছি। উয়েফা লাইসেন্সধারী কোচ তিনি, এটাই বলে দেয়, তিনি কতটা অভিজ্ঞ কোচ। তাঁর কোচিং বিদ্যা আমাদের ওপর প্রয়োগ করে আজ তিনি ঈর্ষণীয় অবস্থানে চলে গেছেন।’ শেখ জামাল কি সাফ অঞ্চলে এখন সেরা ক্লাব? ‘আগে সাফ অঞ্চলে ক্লাব ফুটবলে রাজত্ব করত ভারতের ইস্ট বেঙ্গল, মোহনবাগান ও কলকাতা মোহামেডান। এখন এই ক্লাবগুলোকে আমরা নিয়মিতভাবে হারাচ্ছি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু কদিন আগে কোরিয়াতে একটি ফুটবল সেমিনারে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লক্ষ্য করেন, সবাই শেখ জামাল ধানম-িকে নিয়ে আলোচনা করছে। এটাই প্রমাণ করে আমরা এখন সাফ ক্লাব ফুটবলে এখন এক নম্বর দল।’ ক্লাবের এতদূর আসার পেছনে যার অবদান সিংহভাগ, সেই মনজুর কাদের সম্পর্কে নাসির বলেন, ‘মনজুর কাদের ভাই শুধু এ ক্লাবের সভাপতিই নন, তিনি একজন ফুটবল সংগঠকও। তিনি ভাল করেই জানেন, একটা ক্লাবকে কিভাবে শক্তিশালী ও সফল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমি আশা করি, একদিন তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই এই ক্লাবের শক্তির পরিধি সাফ অঞ্চল ছাড়িয়ে এশিয়া মানে পৌঁছে যাবে।’ ফাইনালের আগে দলের প্লেয়ারদের মনজুর কাদের নাসিরদের কিভাবে উদ্দীপ্ত করেন, সেটাও জানান নাসির, ‘কাদের ভাই আমাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ জামালের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমরা যেন ভুটান থেকে কাপ জিতে ফিরি, এমন দাবিও করেছেন।’ এটা শুনেও নাসিররা শিরোপা জয়ের জন্য নিজেদের জানবাজি লাগিয়ে খেলেন, তারপরের ফল তো সবারই জানা। আসন্ন ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম শুরু হবে ফেডারেশন কাপ দিয়ে। এ আসরের বর্তমান শিরোপাধারী শেখ জামালই। ‘আমরা চাইব, শিরোপাটা ধরে রাখতে। শুধু ফেডারেশন কাপই নয়, আমরা চাই মৌসুমের প্রতিটি শিরোপাই জিততে। এ জন্য কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। কাদের ভাই চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্য দলকে গড়ে তুলছেন সেভাবেই।’ বিবাহিত নাসিরের একটিই সন্তান। পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে তায়েবা চৌধুরী মাইশা ফুটবল খেলতে যথেষ্ট আগ্রহী, ‘বাসায় ও আমার সঙ্গে প্রায়ই খেলে, ও যদি ফুটবলার হতে চাই, আমার কোন আপত্তি থাকবে না।’ নাসির উদ্দিনের ফুটবল ক্যারিয়ার ॥ পাইওনিয়ার ক্লাব বৌ বাজারের (দ্বিতীয় বিভাগের দল, সাগরিকায়) হয়ে ক্যারিয়ার শুরু। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ৮ বছর ওখানেই খেলেন। শেরেবাংলায় ২০০০ সালে নোয়াখালীতে (৩ গোল), ২০০৩ সালে নাটোরের শেরেবাংলায় (প্রতিটি ম্যাচেই সেরা খেলোয়াড় ও টুর্নামেন্টের সেরা প্লেয়ার), সে বছরই ডাক পান বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে। নিটল-টাটা জেলা ফুটবল লীগে খেলে ২টি হ্যাটট্রিক (মোট গোল ৮টি), এরপর চট্টগ্রাম মোহামেডানে সুপার কাপে খেলা সেবার সেমিতে টাইব্রেকারে তাঁর দল হেরে যায় ঢাকা মোহামেডানে কাছে), ২০০৯ সালে ঢাকা মোহামেডান (ফেডারেশন কাপ, লীগে অপরাজিত রানার্সআপ), ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধায় (ফেডারেশন কাপে অপরাজিত রানার্সআপ, লীগেও রানার্সআপ), ২০১২ তে শেখ জামালে (ফেডারেশন কাপ, লীগ ও স্বাধীনতা কাপে রানার্সআপ), ২০১৩ সালে একই দলের হয়ে (ফেডারেশন কাপ ও লীগে চ্যাম্পিয়ন, ভারতের কলকাতায় আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ) খেলেন।
×