ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিএসআইআরটির ওয়েবসাইট তৈরি

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৩ জানুয়ারি ২০১৫

সিএসআইআরটির ওয়েবসাইট তৈরি

ফিরোজ মান্না ॥ সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট রেসপনস টিম’ (সিএসআইআরটি) একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। কম্পিউটার ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে এই ওয়েবসাইটটি কাজ করবে। ওয়েবসাইটে সাইবার অপরাধের একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। এখানে বিশ্ব সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাইমেনটেক’র (নরটন এন্টি ভাইরাস নির্মাতা) একটি লিঙ্ক রয়েছে। অপর একটি লিঙ্কে দেখানো হয়েছে বিশ্বে সাইবার হুমকির পরিসংখ্যান। একই সঙ্গে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ ওয়েবসাইটটিতে অভিযোগ জানানো ও সতর্ক করার বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে। সাইটটি বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি সিএসআইআরটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিএসআইআরটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার অপরাধ রোধ ও অপরাধী শনাক্তকরণের জন্য ১১ সদস্যের সিএসআইআরটি টিম কাজ করেছে। বর্তমানে সাইবার ক্রাইম বেড়ে যাওয়ায় বিটিআরসিও ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করবে। সাধারণ মানুষ সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে নিজেদের মান সম্মান ধরে রাখতে পারছেন না। এমনকি নিজ ঘরের ছেলেমেয়েদেরও এখান থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট জগতে হাজার হাজার ‘সাইট’ রয়েছে, এই সাইটগুলো আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বা সুন্দর প্রচ্ছদের মাধ্যমে নীরবে-নিভৃতে সাইবার জগতে টেনে নিচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে। শুধু তরুণ প্রজন্ম এই সাইটগুলো ব্যবহার করছে-তাই নয়। এর মূল ব্যবহারকারীরা হচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। একবার যারা ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে শুরু করে তারা নানাভাবে প্রলোভনে অশ্লীল সাইটের সদস্য হয়ে যাচ্ছে। তখন অনেকেই নিজের ‘এ্যাড্রেস’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ লিখে পর্নো ব্লগের সদস্য হচ্ছে। ‘সাইবার ক্রিমিনালদের’ হাতে বহু তরুণী শিকার হয়ে সমাজে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছে। অনেকে আবার আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ সম্পর্কে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, আইটিইউর নির্দেশনা অনুযায়ী কোন ওয়েব পোর্টাল অপব্যবহার হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বিটিআরসির একটি টিম এ ধরনের সাইট, ব্লগ বা ওয়েব পোর্টালগুলো প্রতিনিয়ত ‘সার্চ’ করে যাচ্ছে। এ্যামেজিং আড্ডা নামের একটি সাইটের অপরাধ প্রবণতা ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়েবসাইট পরিচালনার নীতিমালা এবং সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে এখন থেকেই সরকারী পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারলে-পরে এটা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে। সাইবার ক্রিমিনালদের প্রথম টার্গেট হচ্ছে কম বয়সী মেয়ে। গোপনে নানা ধরনের ‘ইমেজ’ সংগ্রহ করে ওয়েবসাইটে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এ্যামেজিং আড্ডায় কয়েকজন সেলিব্রেটির ‘নুড ইমেজ’ সংগ্রহ করে ওয়েবসাইটে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই ইমেজ দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এ কারণে পেশাগত জীবনে তাঁরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আর এ ঘটনার ভিডিও চিত্রই আপলোড করেছে ‘অ্যামেজিং আড্ডা. কম’ নামে একটি সাইট। ভিডিও চিত্র ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একবার হলেও দেখেছেন। এই ভিডিও চিত্রে এমন ‘লেবেল’ ব্যবহার করা হয়েছে-যা যে কেউ দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এই সাইটের মোট ২৫টি কর্নার আছে। এর মধ্যে ২৪টি কর্নার খুব সাধারণ। কোনটিতে বাংলাদেশের ঐহিত্য, কোনটিতে বাংলা গান, কোনটিতে শিল্প, সাহিত্যের নানা বিষয় রয়েছে। কোনটিতে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য রাখা হয়েছে। একদম শেষের কর্নারে রাখা হয়েছে অশ্লীলতা। এই কর্নারে ‘এ্যাডাল্ট ফান, এ্যাডাল্ট পিকচার, বাংলা চটি ভা-ার, দেশী ভিডিও, বিদেশী ভিডিও সেকশন রাখা হয়েছে। আর দেশী ভিডিও সেকশনের মাধ্যমেই আপলোড করা হচ্ছে নিত্য নতুন স্ক্যান্ডাল ভিডিও ক্লিপ। ‘দেশীয় ভিডিও’ সেকশনে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার স্ক্যান্ডাল ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। এসব ক্লিপের আর্কাইভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘মিডিয়া ফায়ার,’ ‘ওরোন’ সফটোনিক’ ‘ফাইলসনিক’ এর মতো বিশ্বখ্যাত অনলাইন আর্কাইভ সেন্টারকে। প্রতিটি ভিডিও ক্লিপের সঙ্গে এসব আর্কাইভ সাইটের লিংক দেয়া রয়েছে ডাউনলোড করার জন্য। এসব আর্কাইভ সেন্টার ভাড়া নিয়ে যে কেউ যে কোন ফাইল সংরক্ষণ করতে পারে। কিছু সময়ের জন্য বিনামূল্যেও ফাইল সংরক্ষণ করা যায়। কোন ধরনের ফাইল দেয়া হচ্ছে সে দায় আর্কাইভ কর্তৃপক্ষ নেয় না। তারা শুধু সংরক্ষণ এবং ডাউনলোড সুবিধা দেয়। এ্যামেজিং আড্ডা বিপুলসংখ্যক ভিডিও ফাইল আর্কাইভ করার অর্থ তারা বাণিজ্যিকভাবে এসব আর্কাইভ সেন্টার ব্যবহার করছে। এ সাইটের দেশী ভিডিও সেকশনে বিভিন্ন পর্নো সাইটের বিজ্ঞাপনও দেখা যায়। যদিও এরই সাইটে রেজিস্ট্রেশন কিন্তু সাইট পরিচালনার ধরন বলে দেয়, সাইটটি ব্যবসায়িক ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং ‘ভিডিও ক্লিপ’গুলোতে সাইটের লেবেল লাগানোর বিষয়টি ব্যবসায়িক ভিতিতে পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এই সাইটে দেখা যায় স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে গ্রামের অতি সাধারণ নারীর ভিডিও চিত্রের ফাইল রয়েছে। দু’একটি ভিডিও চিত্র দেখে বোঝা যায় যে, ভিডিও চিত্র গোপনে ধারণ করা হয়েছে। এদিকে, একাধিক ভিডিওচিত্রে বাংলা সংলাপ রয়েছে। সাইট ভিজিট করলে সাধারণ বুদ্ধির যে কারও কাছে পরিষ্কার হয়, এই সাইট পরিচালনাকারীরা অবাধে তাদের একটি গ্রুপ ব্যবহার করে নানা কৌশলে বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ওই সাইটে দিচ্ছে। দেশীয় সেলিব্রেটিদের স্ক্যান্ডাল চিত্র নিয়ে তাদেরই ঘনিষ্ঠ কেউ বড় অঙ্কের টাকার ব্যবসা করেছেন। স্ক্যান্ডাল ভিডিও চিত্রের পুরুষ চরিত্রগুলো বহাল তবিয়তে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও সেলিব্রেটি অথবা সাধারণ নারীর পেশাগত এবং সামাজিক জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
×