ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতাসহ নিহত ৪

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২ জানুয়ারি ২০১৫

সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতাসহ নিহত ৪

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হচ্ছেনÑ ভাটারা এলাকায় বনানী থানার জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম (৩৮), তাঁর বন্ধু তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত সোহাগ (২৮), দারুস সালাম এলাকায় গাড়ি ব্যবসায়ী আমির হোসেন বাবু (৪৮) ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় দুলাল (২০)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ভাটারা থানাধীন নর্দা ব্রিজের নিচে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সামনে বেপরোয়া গতির ট্রাক একটি মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল আরোহী মিরাজুল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু আবুল হাসনাত সোহাগের মৃত্যু হয়। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে মিরাজুল ও সোহাগ মোটরসাইকেল যোগে ভাটারা নর্দা ব্রিজের নিচে আসার মুহূর্তে পেছন থেকে একটি ট্রাক (মাদারীপুর হ ১১-০৪৫৩) তাদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সোহাগ মারা যান। পরে মিরাজুলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক ট্রাকটি আটক করেছে। ঘটনার পর চালক পালিয়ে গেছে। নিহত মিরাজুল ইসলামের বাবার নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি একটি পত্রিকায় কাজ করেন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট থানা এলাকায়। নিহত মিরাজুলের ছোট ভাই মফিদুল ইসলাম জানান, তার ভাই বনানী থানার জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২৪/৪ জগন্নাথপুর ভাটারায় মিরাজের সঙ্গেই থাকতেন ভাই মিরাজুল। নিহত সোহাগের বাবার নাম শহীদুল ইসলাম সেলিম। গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার মহেশপুর গ্রামে। নিহত সোহাগের স্ত্রী ফারজানা বেগম মুক্তা জানান, স্বামী সোহাগ তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এবার তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করে সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ সূত্র জানায়, শুক্রবার দুপুরে দু’জনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ। এদিকে বুধবার বর্ষবরণের গভীর রাতে দারুস সালাম ও কামরাঙ্গীরচরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দারুস সালাম রোডে আমির হোসেন বাবু নামে এক গাড়ি ব্যবসায়ীকে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন মাইনুদ্দিন নামে এক পথচারী। পরে বাবুকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের বাবুর বোন জামাই মাহবুব জানান, বাবু বন্ধুদের নিয়ে দারুস সালামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে সর্বশেষ পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় বাবুর। এর এক ঘণ্টা পর তারা জানতে পারেন বাবুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে সেখানে গিয়ে দেখতে পান বাবুর মৃতদেহ। হাসপাতালের নথিপত্রে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় বাবুর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার পরিবারের অভিযোগ, তাকে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়েছে। বাবু ফার্মগেট এলাকায় মনিপুরিপাড়ায় থাকতেন। অন্যদিকে একই সময় কামরাঙ্গীরচরে রনি মার্কেটের পেছনে একটি ট্রাক বাইসাইকেল আরোহী দুলালকে ধাক্কা দিলে তার মৃত্যু হয়। নিহত দুলালের বাবার নাম আবুল হাসেম। তিনি কামরাঙ্গীরচর নয়ানগর এলাকায় থাকতেন। নিহত দুলালের বন্ধু আবুল হাসেম জানান, রাত ১২টার দিকে দুজন বাইসাইকেলযোগে থার্টিফার্স্ট পালন করব বলে সাউন্ড বক্স নিয়ে আজিমপুরে যাচ্ছিলাম। কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের কাছে পৌঁছলে ভীষণ যানজট দেখে আমি সাইকেল থেকে নেমে যাই। এ সময় একটি ট্রাক দুলালের সাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে দুলাল রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে দুলালকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রাত সাড়ে ১২টায় আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যত্র সাংবাদিকসহ নিহত ৬ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদাতারা জানান, গত বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত এবং কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় বাস-সিএনজি সংঘর্ষে দুইজন, কুষ্টিয়ায় এক সাংবাদিক, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মাইক্রোবাস উল্টে একজন, নওগাঁয় ট্রাক্টর চাপায় সাইকেল আরোহী এবং পটিয়ায় ট্রাকচাপায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়। এছাড়া মাদারীপুরে বাস খাদে পড়ে ১৫ যাত্রী আহত হয়। কুমিল্লায় দুইজন নিহত হওয়ার পর উত্তেজিত জনতা ঘাতক বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
×