ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফলের ভিত্তিতে ভার্সিটিতে ভর্তির নির্দেশনা স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ জানুয়ারি ২০১৫

ফলের ভিত্তিতে ভার্সিটিতে ভর্তির নির্দেশনা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা জারির ২৪ ঘণ্টা না যেতেই তা স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পবলিক ইউনিভার্সিটির জন্য এ নির্দেশনা জারি করলেও রাতেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার তা স্থগিত করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরেও কিভাবে হঠাৎ নির্দেশ জারি হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, ওই নির্দেশনা স্থগিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পিছুটান নিয়ে মন্ত্রী কোন কথা না বললেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, আসলে মন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা জারির আগে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা হয়নি। অনেকটা ভুল বুঝিয়েই ওই ফাইলে তার স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল। নির্দেশ প্রকাশের পর বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে আসে। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার খবর পান মন্ত্রী। অনেক উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে সরাসরি অসন্তোষ না প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীদের থেকে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে আপত্তি ওঠায় মেডিক্যাল ভর্তি পদ্ধতির মতো আন্দোলনের আশঙ্কা করে মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালেই মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির নির্দেশনা সংক্রান্ত ফাইল তলব করে তা স্থগিত করেন। আরও আলোচনা ও যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ওই ফাইলে নোট দিয়েছেন তিনি। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো ভর্তি সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে শিক্ষার্থীদের প্রচুর অর্থ ব্যয় এবং দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এ অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলে শিক্ষার্থীদের সেশন শুরু ত্বরান্বিত হবে এবং অভিভাবকদের হয়রানি লাঘব হবে। বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষার বদলে এসএসসি ও এইচএসসির ফলের ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয় তাতে। বর্তমানে দেশের ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রথমবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। দেশের ৮০টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও বাকিগুলোতে সরাসরি ভর্তির সুযোগ পান উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলা হলেও বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরোধিতায় তা হয়নি। এদিকে আদেশ স্থগিত হলেও এটি নিয়ে নতুন করে ভাবার পক্ষে অনেক উপাচার্য। স্থগিত হয়ে গেলেও ফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি ‘চিন্তার খোরাক’ যুগিয়েছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশাল যজ্ঞ হয়। আমরা আগেই বিকল্প খুঁজছিলাম। এই নির্দেশনা আমাদের চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে। ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে... দেশব্যাপী কিন্তু একই মানে পরীক্ষা হয় না- এটাও অবশ্য ভাবতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সঙ্গে আলোচনা করে তবেই তিনি এ বিষয়ে মতপ্রকাশ করতে চান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’-এর সভাপতি এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রুহুল আমীন বলেন, ফলের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তিতে তাদের আপত্তি নেই। তবে তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বক্তব্যও শুনতে হবে।
×