ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২ জানুয়ারি ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আর সব থামতে পারে। নিজের খেয়াল খুশি। সময়ের সে সুযোগ নেই। তার ছুটে চলাই ধর্ম। সময় ছুটে চলছে। বিরামহীন। এই সেইদিন শুরু হওয়া ২০১৪ তাই পুরনো এখন! যথানিয়মে বিদায় নিয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন সাল গণনা। এবার ২০১৫। বৃহস্পতিবার নতুন বছরের প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানিয়েছে রাজধানী ঢাকা। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরে আরও সুন্দর করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। বিগত বছরের যত ভুল অপ্রাপ্তি গ্লানি ব্যথা- বেদনা ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শুরু করেছে পথচলা। অন্য দিনের মতো এদিনও খুব ভোরে নয়াবাজার এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন শ্রমিকরা। শ্রমের হাটে শ্রম বিক্রি করতে এসেছিলেন। যাঁর সঙ্গে বনিবনা হয় তাঁর কাজ করে দেন। বহু বছর ধরে শ্রমিকের হাটে নিজের দাম দর হাঁকছেন মোঃ শহীদ। নতুন বছরে কী প্রত্যাশা করেন? বদলাবে ভাগ্য? জানতে চাইলে দ্বিধার হাসি হাসেন মাঝবয়সী। বলেন, ‘বাবা, আশা তো করি। বছরের পয়লা দিন বইলা একটু আগে ভাগে আইলাম। আজকের দিনডা যদি ভালা যায় বছরডাও ভালা যাইবো।’ এর পর শ্রমের ক্রেতার সঙ্গে দরদাম শুরু করে দেন তিনি। সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও শুভ প্রত্যাশায় শুরু হয়েছে নতুন বছর। মতিঝিলের অফিসপাড়ায় এদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। নিজেদের মতো করে উদ্যাপন করেছেন। রূপালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালের ক্যালেন্ডার বদলে গেছে। চলছে নববর্ষের ক্যালেন্ডার বিতরণ। ২০১৫ সালের সূচনার দিনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোও ছিল উৎসবমুখর। ক্লাস করার পাশাপাশি বন্ধুরা মিলে চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা কানায় কানায় ভর্তি ছিল এদিন। প্রায় প্রতিটি আড্ডা জুড়ে ছিল বিগত বছরের সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেব-নিকেশ। সেই সঙ্গে বর্তমান বছরের প্রত্যাশার কথা একে অন্যকে বলেছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীতে বছরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার আয়োজন করা হয়েছিল বই উৎসবের। শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে এদিন নতুন বই বিতরণ করা হয়। সকাল ১০টায় মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন তাঁরা। এ সময় জানানো হয়, এবার দেশের প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থীর হাতে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি চার রঙা নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। বই হাতে পেয়ে সে কী আনন্দ শিক্ষার্থীদের! পারলে তখনই সব বই পড়ে ফেলে! সেটি সম্ভব নয়। তবে প্রতিটি বইয়ের পাতা উল্টে দেখছিল অনেকেই। কেউ কেউ নাকের কাছে নিয়ে শুঁকছিল। তার পর অদ্ভুত ভঙ্গি করে জানাচ্ছিল নিজেদের সন্তুষ্টির কথা। অরণ্য নামের এক শিক্ষার্থী তো নতুন বই বাবার হাতেও দিতে রাজি নয়। বার বার বলছিল, আমার বই। ওগুলো আমার বই। আগে আমি দেখব। খিলগাঁওয়ের উইজডম স্কুলে এসে দেখা গেল প্রায় একই দৃশ্য। এখানে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বই হাতে নিয়ে দোলনায় বসেছিল। দোলতে দোলতে পাতা উল্টানো। বই দেখা। সত্যি এমন দৃশ্য সাজ সকালেই মন ভরিয়ে দেয়। এবার হরতালের প্রসঙ্গ। কথা নেই। বার্তা নেই। হরতাল। শুধু একটা ছুঁতো চাই। অমনি টেলিভিশন ডেকে ২৪ ঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টার জন্য রাস্তাঘাট, অফিস, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা। না, ঢাকার মানুষ হরতাল সমর্থন করেন না। এবার যেন সেটি আরও বেশি করে বুঝিয়ে দেয়া হলো। বছরের শেষ সময় বিএনপির ডাকা হরতাল রাজধানীবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালের বেলায়ও তাই হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার রাস্তায় নেমে হরতালের কোন চিহ্ন প্রত্যক্ষ করা যায়নি। পাবলিক পরিবহনের পাশাপাশি প্রচুর প্রাইভেট যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এভাবে ভয়কে জয় করে চলেছে রাজধানীবাসী।
×