ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সর্বোচ্চ ৮ হাজার, সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২ টাকা

সশস্ত্র বাহিনীরও বেতন বাড়ল শতভাগ

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২ জানুয়ারি ২০১৫

সশস্ত্র বাহিনীরও বেতন বাড়ল শতভাগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতন-ভাতা শতভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সুপারিশেও সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ২০০ ও সর্বোচ্চ বেতন ৮০ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া লেফটেন্যান্ট জেনারেলের বেতন ৮৮ হাজার টাকা এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের বেতন ১ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে বেতন কমিটি। এর সঙ্গে তারা পাবেন বাড়িভাড়াসহ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা। আগামী অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে নতুন এই বেতন কাঠামো কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতনসংক্রান্ত সুপারিশ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হোসেন। সুপারিশ প্রতিবেদন প্রদানকালে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি-২০১৩ গঠন করা হয়। ৮ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিবসহ তিন বাহিনীর ৭ প্রতিনিধি রয়েছেন। তিনি জানান, কমিটি সশস্ত্র বাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত এবং নন-কমিশনড সদস্যদের জন্য ১৬টি গ্রেডে বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতন হবে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের মতোই সর্বোচ্চ ৮০ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা। তিনি বলেন, সুপারিশ প্রণয়নকালে সশস্ত্র বাহিনীর তৃণমূল সকল সংগঠনের বেতন-ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে স্তরের সদস্যদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সঙ্গেও কমিটি একাধিকবার বৈঠক করেছে এবং তাদের মতামত নিয়েছে। সুপারিশ প্রস্তাবে ১৬টি গ্রেড রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতন যৌক্তিকভাবে বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখযোগ্য সুপারিশও করা হয়েছে। সর্বনিম্ন বেতন হিসেবে এনসিইদের (নন-কম্ব্যাট্যান্ট এনরোলমেন্ট বা বেসামরিক কর্মচারী) বেতন সুপারিশ করা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে সচিব মর্যাদায় একজন মেজর জেনারেলের বেতন হবে ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া সিনিয়র সচিব মর্যাদায় লে. জেনারেলের বেতন ৮৮ হাজার টাকা এবং মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের মতো সেনাপ্রধান তথা জেনারেলের বেতন ১ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, হিসাবের সুবিধার্থে জুনিয়র কমিশনার ও নন-কমিশনারদের বেতন স্কেল ভার্টিকেল স্কেলে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং মেজর জেনারেল থেকে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পর্যন্ত সকল পদবির বেতন জাতীয় বেতন স্কেলের সুনির্দিষ্ট গ্রেডের ধারাবাহিকতার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্মড ফোর্সেস নার্সিং সার্ভিসেস ১৯৫২ অনুযায়ী এফএনএস কর্মকর্তাদের বেতন অন্যান্য কর্মকর্তার মতো একই গ্রেডে নির্ধারণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ প্রশিক্ষিত কোর্স যেমন সেনাবাহিনী কমান্ডো, প্যারাকমান্ডো, প্যারাট্রুপস, স্নাইপারদের জন্য বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে সেনা সদস্যরা কাজ করতে আগ্রহী হয়, সে জন্য সারাদেশে একই সমান বাড়ি ভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। জানা গেছে, সরকারী চাকরিজীবীদের মতো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও এখন সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১০০ এবং সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা বেসিক ধরে বেতন পাচ্ছেন। তবে তাদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা সরকারী কর্মকর্তাদের তুলনায় বেশি। আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, বাহিনী প্রধানরা তাদের র‌্যাংক অনুযায়ী বেতন পাবেন। বাহিনী প্রধান যদি চার তারকা জেনারেল হোন তবে তার মূল বেতন হবে ১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বাহিনীপ্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য ভাতা যুক্ত হবে। এছাড়া সুপারিশে সবার জন্য সারাদেশে একই হারে বাড়ি ভাড়া এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য বিশেষ আনুতোষিক দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলে কমিটি প্রধান জানিয়েছেন। এদিকে, সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা আমি এখনও দেখিনই। সুতরাং এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে এর সমন্বয় দেখতে চাই। আর প্রতিটি সুপারিশেই কিছু না কিছু নতুন বিষয় থাকে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে, এটা ভাল। এতে করে সমাজের যে অংশ অবহেলিত ছিল, তাদের কথাগুলো উঠে এসেছে। এদিকে, সশস্ত্র বাহিনীর সুপারিশ অনুযায়ী কমিশন অফিসারদের বেতন-সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে ৩০ হাজার টাকা, লেফটেন্যান্ট পদে ৩২ হাজার, ক্যাপ্টেন পদে ৩৭ হাজার, মেজর পদে ৪৫ হাজার, লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে ৫২ হাজার, কর্নেল পদে ৬০ হাজার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে ৭০ হাজার, মেজর জেনারেল পদে ৮৪ হাজার (নির্ধারিত), লেফট্যানেন্ট জেনারেল পদে ৮৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত) করা হয়েছে। সৈনিক ও জুনিয়র কমিশন অফিসারদের বেতন-এনসি (ই) পদে ৮ হাজার ২০০ টাকা, সৈনিক পদে ৯ হাজার ৫০০, লেন্স কর্পোরাল পদে ১০ হাজার ৫০০, কর্পোরাল পদে ১১ হাজার ৫০০, সার্জেন্ট পদে ১৭ হাজার, ওয়ারেন্ট অফিসার পদে ২৫ হাজার, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার পদে ২৭ হাজার, চিফ আর্টিফিশার ২৮ হাজার ও মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার পদে ২৯ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন গত ২১ ডিসেম্বর একই রকম কাঠামোতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করে। তাদের ওই প্রস্তাবে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গ্রেডে শতভাগ পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
×