ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বন্ধন

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২ জানুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বন্ধন

বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উন্নত ও শান্তির দেশ হিসেবে দেখতে চায় চীন। সেই লক্ষ্যে বড় অঙ্কের চীনা বিনিয়োগ এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে চীনা সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে। সম্প্রতি দুটি দেশের বন্ধুত্বের ৪০ বছর পূর্তিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র বাংলাদেশ সফরে এ বিষয়টির নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থানে যে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর এ সফর দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত করার মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা যায়। উল্লেখ্য, গত বছরের জুন মাসে চীনের প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেবার চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দুটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং দুটি বিনিময়পত্র স্বাক্ষর হয়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফর এরই ধারাবাহিকতার অংশ। চীন বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবেও বিশাল এক দেশ। বাংলাদেশ সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে চীনকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পেতে চায়। অতীতে বুড়িগঙ্গা সেতুসহ কয়েকটি প্রকল্প চীনের সহায়তায় সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক মাস আগে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প ‘পদ্মা সেতু’ নির্মাণকাজ দেয়া হয়েছে চীনের এক কোম্পানিকে। ভারতের পর অন্যতম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকাজের চুক্তি হয়েছে চীনের সঙ্গে। তারা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার লক্ষ্যে ৬টি প্রকল্পে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি করেছে, যা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এবার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ সড়ক ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে বিনিয়োগের কথা শোনা যায়, তা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বের সূচনা সেই স্বাধীনতাপূর্ব কালেই। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা ১৯৭৫ সালে। এ কথা সত্য যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে চীনের অবস্থান বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে ছিল। এর কারণ বলা হয় দেশটির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমীকরণ। গত চার দশকে সেই দূরত্ব ঘুচে গেছে। এখন দুই দেশের সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। বলা যায় দেশ দুটির কূটনৈতিক সম্পর্ক আজ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার পরও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক একটি রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ সেতু হিসেবে বিবেচিত। এশিয়ার দুই বৃহৎ দেশ চীন ও ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী। এই দুটি দেশের সঙ্গে আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বিদ্যমান। নানা ইস্যুতেও দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন মত রয়েছে। চীনের অর্থায়নে ইতোমধ্যে কয়েকটি বড় প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। এ সবের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এখন জরুরী। নতুন যে বিনিয়োগসহ নানা সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া দরকার। উন্নয়ন ও বাণিজ্য ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক। বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এ দেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত প্রসারিত করবে। এতে দুদেশেরই লাভ, লাভ গোটা এশিয়ার।
×