ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্দীদের ভবিষ্যত গড়ে দিতে কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১ জানুয়ারি ২০১৫

বন্দীদের ভবিষ্যত গড়ে দিতে কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একজন কারাবন্দীর তার শাস্তি ভোগের পর তার পুনর্বাসন ও তাদের বিষয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে সমাজ থেকে অপরাধ কোনভাবেই কমবে না। এজন্য বন্দীদের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে কারা কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ নিয়েছে, তারা যাতে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে তার নিশ্চয়তা দরকার। কারামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রথমেই বন্দীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।ু উদ্যোগ বাস্তবায়নে কারা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সমাজের সব স্তরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবে। বুধবার কারা সপ্তাহ-২০১৪ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ুএক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এসব কথা বলেন। গত ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের কাশিমপুর কারা ক্যাম্পাসে এ কারা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারা অভ্যন্তরে বন্দীদের বিভিন্ন কাজে পারদর্শী করে তোলা হচ্ছে, যাতে তারা মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবন পায়। তবে বেশিরভাগ বন্দী মুক্ত হওয়ার পর সমাজ তাদের পাশে দাঁড়ায় না। তারা কোন কাজ পায় না। কোন ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ব্যাংক বা বেসরকারি ঋণও পায় না। এতে মুক্ত বন্দীদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার বলেন, কারা সপ্তাহে সারাদেশের সব কারাগারের প্রায় ৫ হাজার বন্দীর স্বজনদের সঙ্গে গণশুনানির মাধ্যমে বন্দীদের সম্পর্কে মতামত নেয়া হয়েছে। কারাবন্দী ও তাদের আত্মীয়দের পক্ষ থেকে কারাগারের মানোন্নয়নে বন্দীদের সঙ্গে আরও একাধিক সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা করা, বন্দীর সঙ্গে বিশেষ ফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করা, ওকালতনামায় বন্দীর স্বাক্ষর নেয়া সহজীকরণ, বাইরের হাসপাতালে বন্দীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা ও খাবার দেয়া, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা, পুরুষ ও নারী বন্দীদের আলাদা সাক্ষাতকক্ষের ব্যবস্থা, বাড়ির খাবার বন্দীর জন্য নিয়মিত সরবরাহ করা যায় কিনা ইত্যাদি ১১৮ সুপারিশ করা হয়েছে। কারাগারে মোবাইল ফোন বহন ও মাদক পৌঁছে দেয়ার সঙ্গে কারারক্ষীরা জড়িত- এমন অভিযোগের বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক সাংবাদিকদের বলেন, আনিত অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছি না। ৬৭ হাজার কারারক্ষীর মধ্যে কিছু খারাপ থাকতে পারে। তবে প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদায়ী বছরে এ ধরনের অপরাধের প্রমাণ পেয়ে ২ কারা কর্মকর্তাসহ ৫ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারা অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, বন্দীরা হাজিরা দিতে গেলে আদালতের গারদখানা থেকে মাদক আসছে। তারা সাবান ও জুতোর তলায় এমনকি পায়ুপথেও মাদক আনছে। এসব ঠেকাতে এবছরেই কারাগারে বিশেষ বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানারসহ কারা নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণসহ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি ও ঢাকায় কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কারা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সব কারাগারে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন, আলোকসজ্জা, কারারক্ষীদের দরবার, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ক্রীড়া আয়োজন, প্রীতিভোজ, কারাবন্দীদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে কারা মেলার পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পরিচালনাসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়েছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজি-প্রিজন্স কর্নেল ফজলুল কবীর, ডিআইজি প্রিজন্স (ঢাকা বিভাগ) গোলাম হায়দার, ডিআইজি প্রিজন্স (হেডকোয়ার্টারস) টিপু সুলতান, এআইজি (এডমিন) আব্দুল জলিল, এআইজি (উন্নয়ন) প্রশান্ত কুমার, এআইজি (অর্থ) জহির উদ্দীন বাবরসহ উর্ধতন কারা কর্মকর্তাবৃন্দ।
×