ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হরতাল বন্ধে স্থায়ী সমাধান চায় এফবিসিসিআই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল বন্ধে স্থায়ী সমাধান চায় এফবিসিসিআই

এম শাহজাহান ॥ ফের হরতালের কবলে দেশের অর্থনীতি। বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের হরতালে গাড়ি চলে, অনেক মার্কেটে পণ্যের পসরা সাজিয়ে দোকান খোলা রাখেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদেরও দেখা মেলে। তারপরও সর্বত্র এক ধরনের অস্বস্তি! এই অস্বস্তি থেকেই অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতির সব সূচকে যখন ভাল করছে বাংলাদেশ, তখন এ ধরনের হরতালের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এছাড়া বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সংঘাতের রাজনীতি ফের যেন শুরু না হয়, রাজনীতিকদের কাছে সেই নিশ্চয়তা চেয়েছে। জানা গেছে, একদিনের হরতালে সারাদেশে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়া জানমালের নিরাপত্তা ও বিঘিœত হয়। ঢাকা চেম্বারের এক গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। যে হরতাল অর্থনীতির এত ক্ষতি করে সেই হরতাল আইন করেও বন্ধের দাবি জানাবে এফবিসিসিআই। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল মানেই অর্থনীতির ক্ষতি, অর্থনীতিকে পিছিয়ে দেয়া। বিদায়ী বছরের পুরোটা সময় অর্থনীতির সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু সেই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে এখন পরিকল্পিতভাবে হরতাল দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কেন হরতাল? আদালতের রায় পক্ষে না গেলেই হরতাল দেয়া হচ্ছে। এর অর্থ যারা হরতাল দিচ্ছে তারা দেশ ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তাই এ ধরনের হরতাল বন্ধে একাটি স্থায়ী সমাধান দরকার। তিনি বলেন, আইন করে হরতাল বন্ধ করা যায় কি না সে ধরনের একটি প্রস্তাব এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হতে পারে। তিনি বলেন, দেশের অনুকূল পরিস্থিতি বিবেচনা করে চীন, জাপান, ভারত, কম্বোডিয়া ও ইতালীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীগণ এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় লাগাতার হরতালসহ যেকোন নেতিবাচক কার্যক্রম দেশের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলবে এবং বিনিয়োগকারীগণ নিরৎসাহিত হবেন। একইভাবে ডিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন ব্যবসায়ীদের চাহিদা হল দেশে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকা। এজন্য আমরা আসন্ন দিনগুলোতে নতুন কোনো রাজনৈতিক সংঘাত, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচী দেখতে চাই না। তিনি বলেন, আমলাতন্ত্র, নানা প্রতিবন্ধকতা ও ব্যবসাবান্ধব নীতির অভাবে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ কম হচ্ছে। বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। আর বাংলাদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত না হলে বিদেশী বিনিয়োগও আসবে না। এতে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে গত অর্থবছরে অর্থনীতির চাকা থেমে গিয়েছিল। এবারও সংঘাতের রাজনীতির পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, উপমহাদেশে প্রথম হরতাল হয় ১৯০৫ সালের ৭ আগষ্ট। বঙ্গভঙ্গ রোধে যাকে বয়কট বলা হয়েছিল। ভারত বর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক গান্ধী উপমহাদেশে প্রথম হরতাল ডেকেছিলেন ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল প্রথমে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে। এছাড়া জওহারলাল নেহেরু, শাস্ত্রী ও ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলেও হরতাল হয়েছে। তবে ওই হরতাল বর্তমান সময়ের মতো ধ্বংসাত্বক ছিল না। হরতালে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ পুড়িয়ে মারার খবরও ইতিহাসে পাওয়া যায় না। জানা গেছে, জালাও পোড়াও কর্মসূচির হরতাল বাংলাদেশের সংবিধানও সমর্থন করে না। বাংলাদেশে প্রচলিত হরতাল বেশিরভাগ সময়ে সহিংসতায় রূপ নেয়, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে চরম হুমকি। হরতালের এসব নেতিবাচক দিক সংবিধানে প্রদত্ত ৩৬, ৪০, ৪২ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মত দিয়েছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র আইনজীবীরা। তাঁদের মতে, ‘হরতাল’ বলতে আমরা বুঝি সরকারের কোন সিদ্ধান্ত বা কর্মকা-ের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগের নীতি হিসেবে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহনের মাধ্যমে দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা। সে কারণে হরতালকে সাংবিধানিক অধিকার মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচলিত ধারার হরতাল গুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দলীয় স্বার্থে ডাকা হরতাল পালনে জনগণকে বাধ্য করা হচ্ছে। জনগণের মাঝে ভয়-ভীতি সৃষ্টির লক্ষে চালানো হয় জালাও পোড়াও কর্মসূচী। সে কারণে হরতালের সময় সাধারণ মানুষ প্রাণের ভয়ে ঘর থেকে বের হয় না। বন্ধ হয়ে যায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবিকা নির্বাহের উপায়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের দারুণভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে চালানো হয় ধ্বংসযজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে সুপ্রীম কোর্টের এক সিনিয়ন আইনজীবী জনকণ্ঠকে বলেন, দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য হরতাল একটি সাংবিধানিক অধিকার, তবে এর মাধ্যমে গাড়ি ভাংচুর, জালাও-পোড়াও কর্মসূচী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এটা সংবিধান সমর্থন করে না।
×