ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনৈতিক অর্জন ধরে রাখতে দশ পরামর্শ পরিকল্পনা কমিশনের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১ জানুয়ারি ২০১৫

অর্থনৈতিক অর্জন ধরে রাখতে দশ পরামর্শ পরিকল্পনা কমিশনের

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ২০১৫ সালে বর্তমান অর্জিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে দশ পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়েছে, সদ্যসমাপ্ত ২০১৪ সালে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ (প্রাক্কলিত হিসেবে), যা তার আগের বছর হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ অর্জনের হার একক বিবেচনায় সন্তোষজনক। কেননা এ সংখ্যা বিশ্বের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী পাঁচটি দেশের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সতর্ক বিবেচনায় বলা যায় প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালক রফতানি আয়। কিন্তু এ রফতানি আয় বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আগামী ছয় মাসে এই নিম্নমুখী ধারা উর্ধমুখী না হলে চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধির হারে প্রভাব পড়তে পারে। সরকারের অর্থনৈতিক থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রতিবেদনে এ সব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৪ সালের সামষ্টিক অর্থনীতি কেমন গেল, সচেতন ব্যক্তি মাত্রেই অনুধাবন করতে চাইবেন এটি। কেননা অর্থনীতি আমাদের জীবনের সব দিক থেকেই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এটা আরও প্রাসঙ্গিক এ কারণে যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে, মাথাপিছু আয় ব্যাপক বাড়িয়ে আমরা প্রথম পর্যায়ে নিম্ন মধ্য আয়ের (১০৪৬ মার্কিন ডলার থেকে ৪০৮৫ ডলার আয়) দেশে উন্নীত হতে চাই। এ কারণে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে আমাদের দুর্ভাবনার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায় একদিন জাদুকরি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দেশ ব্রাজিল, জাপান, চীন ও ভারতের অভাবিত পূর্ব অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার অবিশ্বাস্য নিম্নমুখীও হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি চীন অভূতপূর্ব ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করে কয়েক বছরের মধ্যেই তা ৭ শতাংশে নেমে আসে। ভারত ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সক্ষমতা দেখিয়ে আবার সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসে। এভাবে ব্রাজিল ও জাপানেও প্রবৃদ্ধি কমে এসেছিল। কাজেই প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো তো বটেই, সেই সঙ্গে অর্জিত হার ধরে রাখাটাও নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পরামর্শগুলো হচ্ছেÑ বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি শূন্যের কোটায় না যাওয়া, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯-১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি করা, কেবল পোশাক নয় দেশজ পণ্য উৎপাদনেও বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) উৎসাহিত করা, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে সমান সুযোগ দেয়া, এডিপির বাস্তবায়ন দ্রুত করতে শক্তিশালী জাতীয় মনিটরিং কমিটি গঠন, দীর্ঘকাল ধরে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং এক্ষেত্রে পুঁজি পুনর্ভরনের নামে ভর্তুকি কমিয়ে সেই টাকা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা, পদ্মা সেতুসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন দ্রুততর করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে পারে। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে এটি অর্জন সম্ভব হবে। এর আগে গত মার্চ মাসে সংস্থাটি বলেছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তোষজনক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিচালক রাকেশ মোহন বলেছিলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই ভাল এবং স্থিতিশীল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
×