ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এখনই শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ নয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ জানুয়ারি ২০১৫

এখনই শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে সুন্দরবনে আলোচিত তেল ট্যাংকারডুবিতে জাতিসংঘ প্রেরিত পর্যবেক্ষক দল। স্বল্প-মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারকে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে পর্যবেক্ষক দল। তবে এখনই শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ করার সুপারিশ করেনি প্রতিনিধি দল। সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশের মধ্যে শ্যালা দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধর সুপারিশ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষক দল বলছে, বনের ম্যানগ্রোভ এবং জলজ বস্তুতন্ত্রের উপর আপাতত তেলের প্রভাব সীমিত। তবে বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের দুর্যোগকে ‘ওয়েক আপ কল’ বলে উল্লেখ করছেন প্রতিনিধি দল। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ এবং বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে নৌচলাচল বন্ধের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অনেক বিকল্প নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সকল দিক বিবেচনা করেই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, সুন্দরবন যেমন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একইভাবে মংলাবন্দর দিয়ে পণ্যপরিহনও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে শ্যালা নৌরুট ছাড়া অন্যকোন বিকল্প নেই। তবে এখান দিয়ে বিশেষ প্রহরায় একমুখী চলাচল করা যায় কি না ভাবা হচ্ছে। একই সঙ্গে মংলা-ঘষিয়াখালি চ্যানেল খননের কাজ শুরু হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যতটা অর্থের প্রয়োজন তা আমাদের রয়েছে। অনেকে সহায়তা করার ইঙ্গিত করেছেন। কেউ সহায়তা না করলেও আমরা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারব। জ্বালানি তেল ধরার জন্য স্থানীয় কোন মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে বলে সরকারের জানা নেই। এরকম কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা করা হবে। বুধবার বিকেলে হোটেল সোনারগাঁয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দল তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, স্থানীয় জনসাধারণের তৎপরতা, সরকার এবং বনবিভাগ দুর্ঘটনাপরবর্তী শ্যালার নৌপথ বন্ধ করা এবং জোয়ার-ভাটার পরিবর্তন পরিস্থিতির অনুকূল থাকায় বাস্তুব্যবস্থার মধ্যে তেলের অনুপ্রবেশের সুযোগ কমিয়ে দেয়। মরাকটালে নদীর পানি বনের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারায় নিঃসরিত তেল বনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। যাতে ম্যানগ্রোভের উপর দৃশ্যত কোন প্রভাব পড়েনি এবং বন্যপ্রাণীর উপর তেলের মারাত্মক প্রভাব সীমিত পরিমাণে দেখা গেছে। যদিও আরও নিবড়িভাবে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করছেন প্রতিনিধি দল। যাতে করে জলজ পরিবেশ এবং মৎস্য জীবিকার উপর অবশিষ্ট তেলের কি প্রভাব পড়েছে তা পরবর্তীকালে নিরুপণ করা যায়। সুন্দরবনে শ্যালা নদীতে তেল ট্যাংকারডুবির ঘটনার পর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সরকার জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করে। এর প্রেক্ষিতে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের সমন্বয়ে ২৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। ওই টিমে ১৪ জন দেশীয় এবং ১১ জন বিদেশী সদস্য ছিলেন। যারা ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত সুন্দরবনের দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। তারা বুধবার সকালে পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। এরপর বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে এ সময় জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে সরকার একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবে। জাতিসংঘ ওই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
×