ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সময় হলে আমি নিজেও রাজপথে নেমে আসব ॥ খালেদা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১ জানুয়ারি ২০১৫

সময় হলে আমি নিজেও রাজপথে নেমে আসব ॥ খালেদা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের কোন বৈধতা নেই অভিযোগ করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এই প্রস্তাবের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলতে দলমত নিনির্বশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে প্রস্তাব আমি দিয়েছি সরকারকে তা মানার আর বেশি সময় নেই। কারণ যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সঙ্কটের সমাধান হওয়া দরকার। বুধবার সন্ধ্যায় গুলশান কর্যালয়ে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোন বিকল্প নেই। ৭ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ১. জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে; যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়। ২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে; যাতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়। ৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ৪. নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে। ৫. নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে। ৬. সকল রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে। ৭. বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা উপরোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ মেনে নিয়ে জাতীয় সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি এবং ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল গণতান্ত্রিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয় একথা সঠিক নয়। আমরা সব সময় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। সময় হলেই আমি নিজেও রাজপথে নেমে আসব। আপনারা দেখেছেন অতীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতাকর্মীর সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। ক্রমান্বয়ে আরও আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হবে। তখন সময় আমি নিজেও মাঠে নামব। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারিকে ইতোমধ্যে বিএনপি কালো দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। কালো দিবস উপলক্ষে আমরা ঢাকায় সমাবেশ করব। আশা করি, সরকার ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি সকল রাজবন্দীর মুক্তি চেয়েছি। তবে কারো বিরুদ্ধে যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ বিচারে যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয় সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বর্তমান সরকার তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এবং অস্বচ্ছভাবে বিচারকাজ করছে। বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিকমানের আইন অনুসারে। খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার যে অবৈধ সেটা বিএনপি বা বিরোধী দলের কথা নয়, বিদেশীদেরও দাবি। বিএনপি জ্বালাওপোড়াও আন্দোলনে বিশ্বাস করে না। কিন্তু সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীর নামে মামলা দিতে জ্বালাওপোড়াও করে। বিএনপি আন্দোলনে আছে এবং থাকবে। তারেক রহমান দেশে এসে রাজনীতিতে অংশ নেবে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, তারেক রহমান এখনও বিদেশে চিকিৎসাধীন। হরতাল ডেকে নেতা মাঠে নামে না কেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের নেতারা মাঠে নামে। আর যদি নাই নামে তাহলে তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে কেন। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে জোটবেঁধে আন্দোলন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বিএনপিই জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলন করছে না। অতীতেও আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করেছে। আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর শীঘ্রই আর একটি নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও তারা এখন নির্বাচন দিতে চাচ্ছে না। তখন তারাঙ্কোর সঙ্গে আলোচনাকালে তারা তাদের এ অঙ্গীকার করলেও এখন তা মানছে না। তারাঙ্কো বলেছিলেন, পরে আরেকটি নির্বাচন হবে। তবে এটা আওয়ামী লীগের কোন লিখিত অঙ্গীকার ছিল না।
×