ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পড়াশোনা

অধ্যায় : ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা : প্রশ্ন : ইসলামি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। অথবা, ইসলামি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোকপাত কর। উত্তর : ইসলামি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলোসমূহ: ভূমিকাÑপৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা আছে; এর বৈশিষ্ট্যও বিভিন্ন প্রকারের। ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা সাধারণ রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে অনেকটা আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। সকল রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে ইসলামি রাষ্ট্র সুষম ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বিশ্বাসী। ইসলামি জীবনাদর্শে রাষ্ট্র এমনি একটি ধারণা, প্রকৃত ও অবকাঠামোর নাম যার সকল পর্যায়ে ইসলামী আদর্শ ও অনুশাসন ক্রিয়াশীল। ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যÑ ইসলামি রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যবলী নিম্নরূপ : ১. সার্বভৌত্ব আল্লাহ্র : ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে, এর সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্র, নিরঙ্কুশ ও একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ্তাআলা; কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সরকারের নয়। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘হুকুম দেয়ার সার্বভৌম ক্ষমতা ও অধিকার একমাত্র আল্লাহ্র।’ (ইউসুফ : ৪০) ২. আদর্শিক রাষ্ট্র : ইসলামি রাষ্ট্র কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা, ভাষা বা বর্ণভিত্তিক নয়; এটি ধর্মভিত্তিক আদর্শিক এবং নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। ৩. কুরআ-সুন্নাহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা : পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার একমাত্র সংবিধান। কুরআন- সুন্নাহ্র সাথে বিরোধপূর্ণ কোনো নীতি ইসলামি রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হবে না। ৪. মুসলিম জনগণ : ইসলামি রাষ্ট্রের জনগণ সাধারণত মুসলিম কিংবা বেশিরভাগই মুসলিম হন। এ রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমরাও ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য পোষণ করেন। ৫. ন্যায়নীতি ভিত্তিক : ইসলামি রাষ্ট্রের আদর্শ হল এর শাসনতন্ত্র, বিধি-বিধান আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল (স) তাঁর বাস্তব জীবনের পালন করে এর বাস্তব ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধান ন্যায়বিচার ও ন্যায়নীতিভিত্তিক। ৬. পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধান : আইনগত ও শারীরিক ক্ষমতা বিবেচনায় এ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হন পুরুষ। আল্লাহ্ বলেন, ‘নারীদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে।’ (বাকারা : ২২৮) ৭. ইসলামি সরকার : রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে নির্বাচিত ও নিয়োজিত ইসলামী রাষ্ট্রের গোটা সরকার ব্যবস্থারকে পুরোমাত্রায় ইসলামি অনুশাসনের অনুসারী হতে হবে। ৮. মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি : ইসলামি রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ রাষ্ট্রে সকল নাগরিক তার জান, মাল, ইজ্জত ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার সংরক্ষণ করেন। মহানবী (স) বলেন, ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া ইসলামে কোনো ব্যক্তিকে বন্দী করে রাখা যায় না।’ (মুয়াত্তা) ৯. কল্যাণ রাষ্ট্র : ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্র দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাথে সাথে সব রকম জনকল্যাণমূলক কর্মকা- পরিচালনা করে। নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, চরিত্র সংশোধন এক কথায় সার্বিক সমাধান করা ইসলামী রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। ১০. মজলিসে শূরাভিত্তিক : শাসনকাজে সহযোগিতার জন্যে এ রাষ্ট্রে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের নিয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পরামর্শ সভা থাকে। একে মজলিসে শূরা বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্তাআলা মহানবী (স) কে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘ওয়াশাবিরহুম ফীল আমরি ফাইয়া আযামতা ফাতাওয়াক্কাল আলাল্লাহি।’ অর্থাৎ, ‘আর তাদের সাথে আপনি বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে পরামর্শ করুন। তারপর যখন আপনি দৃঢ় সংকল্প করেন, তখন আল্লাহ্র ওপর ভরসা করুন।’ (আল ইমরান : ১৫৯) ১১. সুদবিহীন অর্থব্যবস্থা : সুদবিহীন অর্থ- ব্যবস্থা ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দারিদ্র্যবিমোচনে যাকাত ব্যবস্থার ওপর ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলাম সুদকে হারাম ঘোষণা এবং যাকাত ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে। ১২. খিলাফত : ইসলামি রাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা খেলাফতভিত্তিক। আল্লাহ্র প্রতিনিধি হিসেবে একজন খলিফা শাসনকার্য পরিচালনা করবেন। খলিফা হবেন মুসলিম, সৎ, জ্ঞানী এবং কুরআন হাদীসের অনুসারী ও বিবেকবান। ১৩. শিক্ষক ও আহ্বায়ক : ইসলামী রাষ্ট্র নাগরিকদের শিক্ষা-দীক্ষা, তাহযীব, তামাদ্দুন, সংস্কৃতির উন্নয়নের ব্যবস্থা করবে। কৃষ্টি ও সভ্যতার প্রসারে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। মহানবী (স) বলেন, ‘আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ ১৪. বিশ্বরাষ্ট্র : নির্দিষ্ট ভূখ-ে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইসলামী রাষ্ট্রের কোনো নির্ধারিত সীমা থাকবে না। কেননা, পুরো পৃথিবীর ওপর আল্লাহ্ মুসলিমদের কর্তৃত্ব দিয়েছেন এবং বলেছেন, “তিনি পৃথিবীতে তোমাদেরকে খিলাফত দিয়েছেন।” (সাদ : ২৬)
×