ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হায় সুন্দরবন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

হায় সুন্দরবন

প্রাকৃতিক জলোচ্ছ্বাসে লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যাওয়ার পরও প্রতিবারই ঘুরে দাঁড়ায় সুন্দরবন। আর এবারই প্রথম মনুষ্য সৃষ্ট ভয়াবহতম বিপর্যয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কারডুবিতে দমবন্ধ অবস্থায় পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। বিষাক্ত কালো তেলে সয়লাব হয়ে পড়েছে গোটা সুন্দরবন। বিষাক্ত এ তেলের বিস্তার ঘটেছে আশপাশের নদ-নদীর প্রায় ২০০ কিলোমিটার। বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। এ বিপর্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদী, প্রাণী বিশেষজ্ঞ, সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সুন্দরবনের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে সরকার। বাদ সেধেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ওই তেলের কারণে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হয়নি। আর ভারত থেকে পণ্য পরিবহনের প্রয়োজনে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচলও বন্ধ করা হবে না। নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর এ বক্তব্যে বিতর্কের ঝড় ওঠেছে সারা বাংলাদেশে। সুন্দরবনের পাশাপাশি তিনিও দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর হয়েছেন। দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তাঁর কা-জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এখনই এই রুটে যান চলাচল বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এমন আর একটি দুর্ঘটনায় যে আরও বেশি তেল সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়বে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের তেমন কোন ক্ষতি হবে না, নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরই সুন্দরবন এলাকায় কাঁকড়া-ডলফিনসহ অন্যান্য প্রাণী মরতে শুরু করেছে। এই দুর্ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং জেনেটিক সম্পদের উপর দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে। শ্যালা নদীর চ্যানেলটি বন্ধ করলে জাহাজগুলোকে ১০০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে এটাই যদি জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ঝুঁকি নেয়ার কারণ হয়ে থাকে তাহলে সারাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যানেলগুলো চালুর ক্ষেত্রে নৌমন্ত্রীর আগ্রহের প্রতিফলন ঘটছে না কেন? পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, গত কয়েক বছরে দেশের ১৭টি নদী সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আরও ৮টি নদী নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। বেসরকারী সংস্থা পরিবেশ আন্দোলনের তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন কারণে দেশের উত্তাঞ্চলের ৬৭টি নদ-নদী হুমকির মুখে পড়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ১২টি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৩২টি নদী দ্রুত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাকি নদ-নদীগুলোর অবস্থাও করুন। বিকল্প রুট হিসেবে অতীতে যে খালটি ব্যবহার করা হতো সেটিকে পুনর্খনন করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষা, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থেই সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে রুটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে নানাভাবে অবহেলায় অযতেœ যে সকল নৌপথ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে তা চালু করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। নজরুল ইসলাম লিখন [email protected]
×