অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উপকূলীয় এলাকায় ৫৫৬ সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং ফায়ার সার্ভিস আধুনিকায়নসহ ১১ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭ হাজার ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ২ হাজার ১৭৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৮১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনা সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের গ্যাসের চাহিদা হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট । আমরা উৎপাদন করছি ২ হাজার ৪৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এ প্রেক্ষাপটে তিতাস গ্যাস ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ড উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে জাপান আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। গ্রিড লাইনের চাপের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহের জন্য জাইকার অর্থায়নে তিতাস এবং নরসিংদী ফিল্ড উন্নয়নে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, দেশের কোন মানুষ নিজস্ব ঘর বা সম্পদ ছাড়া থাকবেন না। প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন এ সরকারের সময় কেউ যেন গৃহহীন না থাকেন। একনেকে প্রধানমন্ত্রী পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিবকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি যেন গৃহহীন মানুষের সংখ্যা খুঁজে বের করেন। আমরা চাই কেউ ঘরছাড়া হয়ে বা অন্যের জায়গায় থাকবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। এজন্য যারা ঠিকাদার ছিল তাদের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। পাশাপাশি এলাকাবাসীর সচেতন হওয়া দরকার ছিল।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে মডার্নাইজেশন অব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স প্রজেক্ট এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ন্যাচারাল গ্যাস এফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট ইন্সটলেশন অব গ্যাস কমপ্রেসার এ্যাট তিতাস লোকেশন-সি এ্যান্ড নরসিংদী গ্যাস ফিল্ড এটি বাবস্তবায়নে ব্যয় হবে ৮৬৮ কোটি টাকা। ন্যাচরাল গ্যাস এনার্জি এফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট ইন্সটলেশন অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল, বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল উপকূলীয় রুটে দক্ষ যাত্রীবাহী সার্ভিস পরিচালনার জন্য যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ, ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। দেশের ১৩ নদীবন্দরে প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ, ব্যয় হবে ৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছেÑ বিশ্বব্যাংকের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫৫৬ নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার ব্যয় করবে ১০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। উপকূলীয় নয় জেলার ৭৪ উপজেলায় এ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জীবন, সম্পদ, আশ্রয়স্থল, গবাদিপশু এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত ১১ নবেম্বর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাছাড়া এটি বাস্তবায়নে এর আগে এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন এবং বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট ইমার্জেন্সি ২০০৭ সাইক্লোন রিকভারি এ্যান্ড রেস্টরেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে ডিজাস্টার শেল্টার সিস্টেম ফেজ-১ শীর্ষক একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। এর আলোকেই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
মডার্নাইজেশন অব ফায়ার সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় আধুনিকায়ন করা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং বড় ধরনের ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি গ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জামাদি, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন সংগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে অগ্নিকা-, ভূমিকম্প এবং অন্যান্য দুর্যোগে জনসাধারণের জানমালের সুরক্ষা করা যায় ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে সীমিত রাখা যায়।