ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের পরিবর্তে উটের জকি এখন রোবট

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

শিশুদের পরিবর্তে উটের জকি এখন রোবট

এই কিছু দিন আগের এক সকালের কথা। সূর্যোদয়ের খুব বেশি পরের সময় ছিল না এটি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক মরু প্রান্তরে আয়োজিত হলো জনপ্রিয় উটের দৌড়। সারি সারি উট দাঁড়ানো রয়েছে। উটগুলোর নাক ঝুলন্ত ধাতব পাত স্পর্শ করছে। এখনই শুরু হবে দৌড়। প্রতিযোগীদের প্রত্যেককে দুইবার করে শুরু করতে হলো। প্রথমবার নিয়মমাফিক উটের নাকে ধাতব স্পর্শ করিয়ে এরপর ঐতিহ্যবাহী ঢিলেঢালা পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি প্রতিযোগিতা শুরু করার জন্য বাঁশি বাজান। অমনি দীর্ঘ পা বিশিষ্ট প্রাণীগুলো ছুটে চলে ঘন কুয়াশা ঠেলে। কিছুক্ষণ পর শুরু দ্বিতীয় পর্যায়ের দৌড়। আলওয়াসবা রেসিট্র্যাকে দ্বিতীয় দফা দৌড় শুরু করল উটগুলো। পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল বা এসইউভি গাড়ির বহর। এই গাড়িগুলো থেকে উটের মালিকরা নিজ নিজ উটের ডিজিটাল জকিকে রিমোট কন্ট্রোল হাতে প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। গাড়িগুলো অবশ্য উটের চেয়ে কিছুটা শ্লথগতিতে এগোচ্ছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যে কোন রাজকীয় গাড়িবহর এগিয়ে চলেছে নিস্তরঙ্গ মরুময় এলাকা দিয়ে। বেদুইন অধ্যুষিত আরব অঞ্চলে উটের দৌড় নতুন বিষয় না হলেও এসইউভিতে চেপে দূর নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র হাতে উটের দৌড় নজরদারি করার দৃশ্যটি অবশ্য হালের। বলা যায়, এই হলো উটের দৌড়ের আধুনিক রূপ। এ সব এসইউভির একটির আরোহী হলেন, হামাদ মোহাম্মদ, তিনি প্যাসেঞ্জার সিটে বসে আমিরাতের এক শেখের উটের দৌড় পর্যবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তিনি এ পর্যন্ত বহু উটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ৩.৭ মাইল দীর্ঘ এই ট্র্যাকে তার পদচারণা দিনের। তিনি এখন রোবট দিয়ে উট প্রশিক্ষণের কাজটি করছেন। তাঁর মতে, ক্ষুদেকায় রোবটগুলো ভালই কাজ করছে। উটের দৌড়ের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। কোন কোন ঐতিহাসিক সপ্তম শতাব্দীতেও বেদুইনদের যাযাবর জীবনের বিনোদন অনুষঙ্গ হিসেবে উটের দৌড় চালু ছিল বলে জানিয়েছেন। তেল আবিষ্কারের পর মরু জীবনে অনেক পরিবর্তন এলেও এই একটি জিনিস রয়ে গেছে আগের মতোই। তবে উটের দৌড় রাষ্ট্রীয় উৎসাহ উদ্দীপনায় আয়োজন করা শুরু হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ জায়েদ বিন সুলতান আলনাহিয়ান উটের দৌড়ের জন্য কয়েকটি ট্র্যাক তৈরি করে দিয়েছিলেন। উটের দৌড়ের জকি হিসেবে এক সময় শিশুদের ব্যবহার করা হতো। তখন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও সুদানের মতো দেশগুলো থেকে শিশুপাচার বেড়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে শিশুপাচার বন্ধ হয়ে যায়। এতেই এখন উটের দৌড় চালু রাখতে বিকল্প পথে যেতে হয়েছে। সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×