ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় পর্যটন জোনের মাস্টার প্লান ॥ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

কলাপাড়ায় পর্যটন জোনের মাস্টার প্লান ॥ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৯ ডিসেম্বর ॥ কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার সরকারী খাসজমি উদ্ধার কার্যক্রম থমকে গেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার তিন বছর আট মাস পেরিয়ে গেছে। শুধু কমিটি গঠন করে ৮৮৮টি বন্দোবস্ত কেস যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শনাক্ত করা হয়। এরপর খবর নেই। শত কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধার কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে ভূমিদস্যুরা দখল করা জমি হস্তান্তরসহ ধরণ পাল্টে ফেলছে। ফলে পর্যটন এলাকার খাসজমি শনাক্ত ও উদ্ধার কার্যক্রম ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থায়ীভাবে বেহাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শত কোটি টাকার সরকারী কৃষি খাস সম্পত্তি। পাশাপাশি মাস্টার প্লান ব্যাহতের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কবুলিয়তের শর্ত ভঙ্গ করে বন্দোবস্ত পাওয়া খাসজমি হস্তান্তর এবং জাল কাগজপত্র বানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির অভিযোগে কুয়াকাটার সকল বন্দোবস্তসমূহের রেকর্ডপত্র যাচাইয়ের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেয় ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ। তৎকালীন ভূমি সচিব মোখলেছুর রহমান স্বাক্ষরিত একই চিঠিতে কুয়াকাটার লতাচাপলী, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর ও চরচাপলী মৌজার বন্দোবস্ত দেয়া সকল কেসসমূহ যাচাই-বাছাইসহ খাসজমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া বন্ধের আদেশ দেন। চিঠির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভূমিহীনদের নামে দেয়া খাসজমি বন্দোবস্তের নথিসহ সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারসমূহ যাচাই করে বেআইনীভাবে প্রদত্ত বন্দোবস্তসমূহ এবং বন্দোবস্ত গ্রহীতা কর্তৃক কবুলিয়তের শর্ত ভঙ্গ করলে তা বাতিল করা। ভুয়া বন্দোবস্তসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই সম্পত্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা। সরকারী প্রয়োজন ব্যতীত কোন ব্যক্তি কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্তের প্রস্তাব করা যাবে না এবং অবৈধ দখলে থাকা সরকারী খাসজমি চিহ্নিতপূর্বক তা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন-১৯৫০ এর ৮৭ ধারামতে, সমুদ্র বা নদী তীরের পয়স্থি ভূমিসমূহ দখলপূর্বক সরকারী নিয়ন্ত্রণে আনা। এ সব নির্দেশনা সংবলিত চিঠি দেয়ার এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোসহ পরবর্তী গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিমাসে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এর আলোকে পটুয়াখালীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইউসুফ একই বছরের ৮ মে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। যার আহ্বায়ক করা হয় পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব)। রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর পটুয়াখালী, কলাপাড়ার ভূমি অফিসের কানুনগো ও পটুয়াখালী কালেক্টরেট এর এসএ শাখার সার্ভেয়ারকে সদস্য করা হয়। কলাপাড়ার সহকারী কমিশারকে (ভূমি) সদস্য সচিব করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি কেসও শণাক্ত করে বাতিলের সুপারিশ করা হয়নি। বলতে গেলে কার্যক্রম থমকে আছে। কলাপাড়া উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল আউয়াল তখন কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার চারটি মৌজার ১৯৬৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোট ৮৮৮টি বন্দোবস্ত কেস সৃজিত হয়েছে এমন সংক্ষেপিত তালিকা করেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর ও চর চাপলী চারটি মৌজাকে নিয়ে কুয়াকাটা পর্যটন জোন গঠনের মাস্টার প্লান প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। ভবিষ্যতে সরকারের পরিকল্পনা অনুসারে বিমানবন্দর, সরকারী হাসপাতাল, রেস্ট হাউস, হোটেল-মোটেল, বিনোদন পার্ক, থিম পার্ক, ফায়ার ব্রিগেডসহ অন্যান্য অবকাঠামো স্থাপনের লক্ষ্যে এ চারটি মৌজার খাসজমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে শত শত কোটি টাকার খাসজমি উদ্ধারের ওই প্রক্রিয়া আর সামনে এগোয়নি। এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার জানান, বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেভিনিউ জানাতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে কিছু বলতে পারছেন না। কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিংবা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেউ কর্মস্থলে নেই, প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
×