ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুফাঁদে জিহাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪

মৃত্যুফাঁদে জিহাদ

চার বছরের শিশু জিহাদের অস্বাভাবিক নির্মম মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, জনগণই শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় জনগণের পাশে। বাড়ায় সহায়তার হাত। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অসাধ্য সাধন করা যায়। বিপরীতে জনগণকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের, ঘটনাটি তাদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা, সীমাহীন ব্যর্থতার মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। কবি আবুল হাসান সত্তর দশকে লিখেছিলেন, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না, এ মৃত্যু আমাকে নেবে। মৃত্যুর ফাঁদ পাতা শহরে জিহাদও তার জীবনদানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করে গেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা কত সীমাহীন। অযোগ্য, অথর্ব, অমানবিক প্রশাসনকে কিভাবে স্থবির করে রেখেছে, দেখিয়েছে মানুষের জীবন রক্ষায় দায়িত্ব পালনে কে কত উদাসীন, যথাসময়ে যথাযথ দায়িত্ব পালনে কে কতটা অপারগ, প্রশিক্ষিতরা যে আসলেই অথর্ব, তা আবারও প্রমাণিত হলো। ২৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনার পরও জীবিত উদ্ধার করতে না পারা জিহাদের মৃত্যু পুরো জাতিকে শোকাভিভূত করেছে। পাশাপাশি প্রশাসনের দুর্বল প্রচেষ্টায় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল করেছে, ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে, এমনকি জনগণ দায়িত্বরতদের পদত্যাগ, শাস্তি দাবিও করেছে। শুক্রবার বিকেল ৪টায় শাহজাহানপুরে পরিত্যক্ত গভীর পানির পাম্পের ভেতর পড়ে যায় জিহাদ। ফায়ার ব্রিগেড, ওয়াসা, বুয়েটের বিশেষজ্ঞসহ সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা করেছে শিশুটিকে উদ্ধারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ক্যামেরাসহ অনেক কিছুই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু পাম্পের ভেতর পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার তো দূরের কথা, তার অবস্থানই শনাক্ত করতে না পেরে যখন অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়, তখনই জনতা উদ্ধার করে তাকে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যেখানে শেষ, সেখানে নিজেদের তৈরি দেশীয় প্রযুক্তির ‘ক্যাচার’ দিয়ে উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবক নামের একদল গাড়ির মেকানিক। পরিত্যক্ত ঐ গর্তের তলদেশে শিশুটির অস্তিত্ব মিলছিল না। ক্যামেরায় ছবি আসছিল না। প্রশিক্ষিত, দক্ষ জনশক্তি যেখানে ব্যর্থ, সেখানে এক-দল স্বেচ্ছাসেবী ডিগ্রীবিহীনের নিজস্ব তৈরি প্রযুক্তি দিয়ে খুঁজে পেয়ে উদ্ধার বিস্ময়কর অবশ্য। শিশুটিকে উদ্ধারের কাজে না নেমে পুলিশ তার পিতাকে আটকে রেখে যে আচরণ করেছে তা গর্হিত এবং অমানবিক। এমনকি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আচরণও ছিল নেতিবাচক, যা কাম্য নয়। দেশে দুর্ঘটনা মোকাবেলায় প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির নামে যারা কাজ করছেন তারা যে আসলে তা নন সে তো স্পষ্ট। জিহাদের মৃত্যুকে নিয়ে মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা যে আচরণ করেছেন তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিজেদের অজ্ঞতা, অক্ষমতা, অদক্ষতা ঢাকতে তারা নানা ধরনের চাল চেলেও রক্ষা পায়নি জনতার সম্মিলিত শক্তির কাছে। পদ্মার গভীরে ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ পিনাক উদ্ধার করতে না পারা- তাহলে জিহাদকে বাঁচাতে না পারা এসব প্রতিষ্ঠান জাতির কি কাজে লাগে? দেশে যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তা মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তিসহ প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা না হলে ভুগতে হবে ঢাকাবাসীকে ওয়াসাসহ অন্যদের ফাঁদ পাতা মৃত্যুর গহ্বরে।
×