ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যানসিটিও মরিয়া মেসিকে পেতে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

ম্যানসিটিও মরিয়া মেসিকে পেতে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তাহলে কি ইংলিশ লীগই নতুন আস্তানা হবে লিওনেল মেসির? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে চারিদিকে। সম্প্রতি মেসি নিজেই প্রাণের ক্লাব বার্সিলোনা ছাড়ার ইঙ্গিত দেন। এরপর থেকেই আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে পেতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ক্লাব। এর মধ্যে শীর্ষ নাম চেলসি। ইপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিও এ বিষয়ে উৎসাহ দেখিয়েছে। এর আগে সিটির আর্জেন্টাইন তারকা সার্জিও এ্যাগুয়েরোও মেসিকে নিজ দলে আনার বিষয়ে কথা বলেন। গুঞ্জনের শুরু থেকেই রেকর্ড টানা চারবারের ফিফা সেরা তারকাকে দলে নেয়ার চেষ্টায় থাকা ম্যানচেস্টার সিটি এবার পুরোপুরি উঠে পড়ে লেগেছে। এর আগে চেলসি কোচ জোশে মরিনহো জানিয়েছেন, তার দলের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তিনি মেসিকে দলে নিতে পারবেন না। এর মূল কারণ অবশ্য উয়েফার নিয়ম। আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে দলে নিতে বার্সিলোনা থেকে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের ছাড়পত্র লাগবে। আর অন্য আরও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রয়োজন। অর্থের হিসেবটা যাই হোক না কেন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা মেসিকে যে করেই হোক দলে ভেড়াতে ইচ্ছুক বলে জানা গেছে। চাউর আছে, স্পেনে কর ফাঁকির মামলা থেকে রেহাই পেতেই নাকি সাবেক টানা চারবারের ফিফা সেরা ফুটবলার বার্সা ছাড়তে চাচ্ছেন! এক্ষেত্রে মেসির সম্ভাব্য নতুন গন্তব্য হতে পারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ। আগে থেকেই আলোচনায় ছিল বিষয়টি। স্বদেশী সার্জিও এ্যাগুয়েরোর কথাতে সম্ভাবনাটা আরও জোরালো হয়। চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে এক সাক্ষাতকারে এ্যাগুয়েরো জানিয়েছিলেন, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব মেসিকে ম্যানচেস্টার সিটিতে নিয়ে আসতে। ভক্তদের ভোটে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান এ্যাগুয়েরো। ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন মেসিকে ম্যানসিটিতে আনার চেষ্টা করবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে এ্যাগুয়েরো বলেন, এটি কঠিন একটি প্রশ্ন। তবে আমি চেষ্টা করব তাঁকে (মেসি) অনুপ্রাণিত করতে। তিনি আরও বলেন, আপনারা সবাই বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে প্রিমিয়ার লীগে দেখতে চাচ্ছেন। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব মেসিকে ম্যানসিটিতে আনতে। অথচ মেসি নামের ক্ষুদে জাদুকর বার্সিলোনার হয়ে পেয়েছেন স্বর্ণসাফল্য। এমন কোন সাফল্য নেই যে তার পায়ে আছড়ে পড়েনি। সেই প্রাণের ক্লাবকেই হয়ত বিদায় বলতে পারেন তিনি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বছরের পর বছর বিস্ময় জাগানিয়া ধারাবাহিক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে চলা মেসির শুরুর পথটা মসৃণ ছিল না। এক সময় অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছিল বিস্ময়কর এ প্রতিভার! ১৯৮৭ সালে আর্জেন্টিনার রোজারিও’তে জন্ম নেয়া মেসির বেড়ে ওঠার গল্পের সঙ্গে আজকের অবস্থান মেলাতে গেলে আপনি বিভ্রান্তিতে পড়তে বাধ্য। ১৯৯৫ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সেই জীবন নিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় তাঁর! এ সময় শারীরিক বৃদ্ধিজনিত হরমোনশূন্যতায় ভুগছিলেন মেসি। তখন মেসির ঠিকানা ছিল নিউওয়েলস বয়েজ। ওই অবস্থায় তাকে দলে নিতে যাচ্ছিল রিভারপ্লেট। দলটির পক্ষে মেসির চিকিৎসার খরচ যোগানো অসম্ভব ছিল। সঙ্গত কারণে মেসির বাবা-মায়েরও মাসে ১৫০০ ডলার খরচ করার মতো অবস্থা ছিল না। অবস্থা এমন সৃষ্টি হলো যে মেসির বেঁচে থাকাটাই দায়! সেখানে আবার ফুটবল খেলা। কিন্তু না, মেসিকে অকালে ঝরে পড়তে হয়নি। অসামান্য এক ফুটবল প্রতিভাকে রক্ষা করতে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসে বার্সিলোনা। তারা মেসির প্রতিভা চিনতে পেরে বিশেষ করে বার্সার সে সময়কার স্পোটিং ডিরেক্টর কার্লেস রেক্সাস মেসিতে মুগ্ধ হয়ে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন। এটিও ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। মেসির সঙ্গে বার্সিলোনার চুক্তি হয়েছিল ব্যতিক্রমী আমেজে। মেসিতে মুগ্ধ হয়ে রেক্সাস চটজলদি চুক্তি সম্পন্ন করেন। কেননা অন্য কেউ যদি তাঁকে ছিনিয়ে নেয়। এ তাড়া থেকেই অদ্ভুতভাবে মেসির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেন রেক্সাস। দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন পড়ে একটি সাদা কাগজের। কিন্তু ধারে কাছে কোন সাদা কাগজ ছিল না। এরপরও চুক্তি থেমে থাকেনি। কিন্তু কিসের উপর স্বাক্ষর করে চুক্তি হলো? হ্যাঁ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল ন্যাপকিনে অর্থাৎ টিস্যু পেপারে! মেসির সঙ্গে বার্সিলোনার ওই ঐতিহাসিক চুক্তিতে নেপথ্য ভূমিকা রেখেছিলেন হোরাসিও গ্যাগগিওলি। সেই থেকে নবজীবন পেয়ে জন্ম হয়েছে নতুন মেসির। এরপর থেকে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের উত্থান রূপকথার গল্পের মতোই। অথচ সেই প্রাণের ক্লাবই হয়ত শেষ পর্যন্ত ছাড়তে পারেন মেসি।
×