ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জয়নুলের জন্মশতবর্ষে জাতীয় পর্যায়ে বছরব্যাপী আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

জয়নুলের জন্মশতবর্ষে জাতীয় পর্যায়ে বছরব্যাপী আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনভর শিল্পকে সঙ্গী করেই শিল্পী থেকে শিল্পাচার্য হয়েছিলেন জয়নুল আবেদিন। তাঁর রং-তুলির ছোঁয়াতেই বিকশিত হয়েছিল বাংলার শিল্পভূমি। ক্যানভাসে স্বদেশের ছবি এঁকে জাগ্রত করেছেন জাতির সৌন্দর্যবোধ। আপন প্রাণশক্তির প্রবাহে উজ্জীবিত করেছেন এ দেশের চারুশিল্প আন্দোলন। স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে আপন ক্যানভাস রাঙানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক তৎপরতায় গড়েছিলেন বাংলার চারুকলার ভিত্তি। আজ সোমবার শিল্পের দিশারী এই কিংবদন্তি শিল্পীর শততম জন্মবার্ষিকী। আর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে বর্ষব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচী। বছরজুড়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা আয়োজনে উদ্্যাপন করা হবে শিল্পীর জন্মশতবর্ষ। এসব আয়োজনের মধ্যে রয়েছে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী, তাঁকে নিবেদিত আলোচনাসভা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠিত হবে তাঁর ছাত্রদের সৃজিত চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। প্রকাশ করা হবে স্মারক ডাকটিকেট। নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। এছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে ছড়িয়ে দেয়া হবে শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষের আয়োজন। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। জয়নুলের জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের বছরব্যাপী কর্মসূচীর বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ সোমবার জাতীয় জাদুঘরে জয়নুলের জন্মশতবর্ষের জাতীয় পর্যায়ের বছরব্যাপী কর্মসূচীর সূচনা হবে। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পাচার্যের সহধর্মিণী বেগম জাহানারা আবেদিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদ্্যাপন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি মুস্তাফা মনোয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা জয়নুলের চিত্রিত ১০০ ছবি নিয়ে নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে শুরু হবে প্রদর্শনী। জাদুঘরে সংগৃহীত শিল্পাচার্যের ৮০৭টি চিত্রকর্ম থেকে বাছাইকৃত ছবি দিয়ে সাজানো। এদিকে কাল মঙ্গলবার থেকে ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায় শুরু হবে পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানমালা। এ আয়োজনে থাকবে চিত্রপ্রদর্শনী, আলোচনাসভা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করবে তিন দিনব্যাপী জয়নুল মেলা, লোকসঙ্গীত অনুষ্ঠান ও আর্ট ক্যাম্প। পাশাপাশি জয়নুল আবেদিনের ছাত্রদের শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমি। বিভিন্ন জেলা শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে আয়োজনটি। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট, স্মারকগ্রন্থ ও জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়া মুদ্রিত হয়েছে বরেণ্য দুই শিল্পী হাশেম খান ও সমরজিৎ রায় চৌধুরীর নকশাকৃত পোস্টার। প্রকাশ করা হবে শিল্পাচার্যের আট শতাধিক চিত্রকর্মের সম্ভার নিয়ে পাঁচ খ-ের অ্যালবাম। সেই সঙ্গে তাঁর যেসব শিল্পকর্ম সংরক্ষণে নেই সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। আয়োজনে আরও থাকবে তাঁর সৃষ্টিকর্মের মুদ্রণকৃত ছবির প্রদর্শনী। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের হাত ধরেই এ দেশের চিত্রকলার যাত্রা শুরু হয়। আপন মেধা, অধ্যবসায়, প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতার সমন্বয়ে দেশের চিত্রকলার ভুবনকে নিয়ে গেছেন অসীম উচ্চতায়। তাঁর সৃষ্ট শিল্পকর্ম বিশ্বের চারুকলা আঙিনায় মর্যাদার আসন লাভ করে সমৃদ্ধ করেছে দেশের সংস্কৃতিকে। তাই জন্মশতবর্ষে তাঁর চেতনা ও জীবন দর্শনকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে নেয়া হয়েছে জাতীয় পর্যায়ের বর্ষব্যাপী কর্মসূচী। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, বাঙালী জাতিকে নান্দনিক ও সৌন্দর্য বোধের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছেন জয়নুল আবেদিন। পাকিস্তান আমলে শিল্প রচনার মাধ্যমে বাঙালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। শিল্পের মাধ্যমে জানিয়েছেন নিজের প্রতিবাদ। এছাড়াও দেশের সকল ঝড়-ঝঞ্ঝায় রেখেছেন আপন ভূমিকা। সেই সূত্রে দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকা ছিল তাঁর আত্মার অনুভূতির প্রকাশ। সেসব চিত্রকর্মে আসলে প্রতিফলিত হয়েছে মানুষের বাঁচার আকাক্সক্ষা।
×