ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আপোস নয়, কুড়িল ফ্লাইওভারের দু’পাশে লেক হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪

আপোস নয়, কুড়িল ফ্লাইওভারের দু’পাশে লেক হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর যত্রতত্র ফ্ল্যাট ও আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের অনুমতি না দেয়ার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেখানে সেখানে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যাবে না। তাতে পরিবেশ নষ্ট হয়। এ ছাড়া ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কী না তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে। পাশাপাশি যমুনা ও বসুন্ধরার মতো কোন আবাসন নির্মাতা কোম্পানির সঙ্গে আপোস না করে কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশে লেক বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারও আপত্তিতে কান না দিয়ে ‘দ্রুত’ কাজ শেষ করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রবিবার সকালে সচিবালয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশে দুটো লেক করার কথা। আমি জানিই লেক করতে অনেক বাধা আছে। ওখানে পুলিশের কিছু জায়গা পড়েছে তারাও বাধা দেয়। তারপরে যমুনা ও বসুন্ধরা- তাদেরও ঘোর আপত্তি। তবে এই আপত্তিতে কিছু যায় আসে না। তারপরে এতে কোন কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির ঘোর আপত্তি রয়েছে। তবে এই আপত্তিতে কিছু যায় আসে না। মূল প্ল্যানে আছে দুটো লেক হবে। কাজেই এটা খুব দ্রুত করা দরকার। কারও কোন আপত্তি মানার প্রয়োজন নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওই লেকের সঙ্গে সরাসরি নদীর যোগাযোগ থাকবে। বন্যা বা ভারি বৃষ্টির সময় ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্যই ওই লেক জরুরী। এর আগে গত ২৫ অগাস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকেও কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পগামী রাস্তার দুই পাশে লেক তৈরির ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী, যে লেকের সঙ্গে বালু নদীর সংযোগ থাকবে। ১৮ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি জলাশয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভূমি দখলকারী আবাসন নির্মাতাদের ভূমিখেকো আখ্যায়িত করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়কে শক্ত হতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। রবিবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশের ওই এলাকায় লেকের বদলে ‘বক্স কালভার্ট’ করতে চাইছে যমুনা বা বসুন্ধরা গ্রুপ। তিনি বলেন, কোথাও কোন বক্স কালভার্ট হবে না। সব লেক হবে। ওপেন লেক হবে। দরকার হলে লেকের পাশ দিয়ে ব্রিজ করে নেবে তারা। তাদের পয়সার তো অভাব নেই। শেখ হাসিনা বলেন, কোন মতেই এখানে আপোস করা যাবে না। কাজেই বিষয়টা আপনাদের দেখতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি এটা শুরু করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ঢাকার জলাধারগুলো নষ্ট করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মতিঝিলের এক সময় একটি ঝিল থাকলেও আইয়ুব খান সেটি বন্ধ করে দেন। পরে বিভিন্ন সরকারের সময়ে শান্তিনগর খাল, পান্থপথ খালসহ বিভিন্ন খাল বন্ধ করে দেয় অথবা বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে। অথচ এই খালগুলো একটা শহরের শিরা উপশিরার মতো। আপনারা আমাদের একটা অনুরোধ রক্ষা করবেন, বক্স কালভার্ট যেন শহরের ভেতর আর না করা হয়। সুযোগ থাকলে ঢাকার সব বক্স কালভার্ট তুলে দিয়ে খাল উদ্ধারের চেষ্টা করতেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে দেখা যাচ্ছে যত্রতত্র ফ্ল্যাট, আবাসিক এলাকা হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে। যত্রতত্র এগুলো বানানোর অনুমতি দেবে না। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এদের অনেকে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে থাকে। রাজউক থেকে অনুমতি দেয়ার পরও দেখা যায় এ জাতীয় বহুতল ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয় না। তাই ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কী না তা মনিটরিং করতে হবে। সকলকে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে। তিনি বলেন, ঐতিহ্য রক্ষার নামে ব্রিটিশদের সব লাল দালান রক্ষার প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনীয় ভাঙ্গা দলান টিকিয়ে রাখার কোন অর্থ হয় না। এ সকল ভবন ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ করলে অনেকেরই আবাসন সমস্যা মেটানো সম্ভব। এ ছাড়া বেইলি রোডে সরকারী ভবন ভেঙ্গে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোপূর্বে আজিমপুর ও মতিঝিল কলোনির সরকারী ভবনের স্থানে বহুতল ভবনের নির্মাণ দেন তিনি। সেখানে কাজও শুরু হয়েছে।
×